হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে কর্মরত রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের ওপর হামলার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আবুল কালামসহ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে গাছ চুরির সংবাদ সংগ্রহে গেলে সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদের সম্পৃক্ততা তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া আরও কিছু গুরুতর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্রুত বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষককে (সিসিএফ) নির্দেশ দেওয়া হয়।
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব তুষার কান্তি পাল স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাংবাদিকদের সঙ্গে কটু আচরণ, কিছু সাংবাদিককে হোটেলে খাওয়ানোর নামে অনিয়ম ও দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগে রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে একই মন্ত্রণালয় সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক বদলি করার নির্দেশও দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি দৈনিক কালবেলার সাংবাদিক মুজাহিদ মসি ও বাংলা টাইমসের সাংবাদিক ত্রিপুরারী দেবনাথ টিপু সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে গাছ পাচারের অভিযোগে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে ওই বন কর্মকর্তার নেতৃত্বে স্থানীয় ২ জন সাংবাদিক হামলার শিকার হন। পরে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই থানায় বিনা তদন্তে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়।
ঘটনা গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারিত হলে মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
এ বিষয়ে সাংবাদিক সমাজ ও স্থানীয় সচেতন মহল মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা অভিযুক্ত কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকরের দাবিও জানিয়েছেন।
সাংবাদিক মুজাহিদ মসি বলেন, ‘আমরা শুধু সত্য প্রকাশের জন্য ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওই কর্মকর্তা ও তার সহকর্মীদের আচরণ আমাদের জন্য ভয়ংকর ছিল। দোষীদের দৃশ্যমান কিছু শাস্তি হওয়ায় আমরা স্বস্তি অনুভব করছি।’
অন্যদিকে আরেক ভুক্তভোগী বাংলা টাইমসের সাংবাদিক ত্রিপুরারী দেবনাথ টিপু মন্তব্য করেন, ‘মিডিয়ার স্বাধীনতা ও তথ্য পরিবেশনের ওপর হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আজকে মন্ত্রণালয়ের এই পদক্ষেপ সাংবাদিকদের নিরাপত্তায় একটি অনন্য নজির হয়ে থাকবে।’
মন্তব্য করুন