তুলির আঁচড়ে জীবন্ত হয়ে উঠেছে মাটির প্রতিমা। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) মহালয়ার মধ্যদিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা হয়েছে। এ উপলক্ষে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন খুলনার মৃৎশিল্পীরা।
প্রতিমা গড়ার কাজ শেষ হলেও চলছে রঙের শেষ আঁচড়। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে আবেগ ও উৎসবের আবহে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় আয়োজন শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ প্রস্তুতি চলছে।
শিল্পীরা দিন-রাত পরিশ্রম করে সাজিয়ে তুলছেন দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ ও মহিষাসুরের প্রতিমা। এরই মধ্যে খুলনার মন্দিরগুলোতে ভিড় জমতে শুরু করেছে দর্শনার্থীদের। ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে শুরু হবে পাঁচ দিনের পূজার আনুষ্ঠানিকতা।
খুলনার সোনাপট্টি মন্দিরে ভারতের তামিল মন্দিরের আদলে বিশাল মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী বাজার কালীবাড়ি মন্দিরেও ভারতীয় মন্দিরের অনুকরণে বিশেষ প্যান্ডেল নির্মাণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি আর্য্য ধর্মসভা, শীতলাবাড়ি, শিববাড়ি, দোলখোলা, দৌলতপুরসহ বিভিন্ন স্থানে মণ্ডপ সাজানো হচ্ছে অনন্য রূপে।
দুর্গাপূজা ঘিরে খুলনা শহরে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই নয়, অন্যান্য ধর্মের মানুষও প্রতিমা দর্শনে যাচ্ছেন। এতে সৃষ্টি হয়েছে সম্প্রীতির আবহ। নগরীর সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও নানা আয়োজন করছে। ফলে দুর্গোৎসব এখন ধর্মীয় উৎসব ছাড়িয়ে হয়ে উঠেছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিলনমেলা।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার খরসঙ্গ এলাকায় অনুষ্ঠিত হবে জেলার সবচেয়ে বড় দুর্গোৎসব। এখানে ২০২টি প্রতিমা নির্মাণের কাজ চলছে। আয়োজকরা বলছেন, এবারও খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় আয়োজন হবে এখানে।
খুলনা জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্যানুযায়ী, এ বছর মহানগরে ১২০টি ও জেলায় ৮৫৭টি মণ্ডপসহ মোট ৯৭৭টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছরের তুলনায় এ বছর পূজা বেড়েছে ১০৫টি। ২০২৩ সালে সর্বাধিক ৯৯৩টি পূজা হয়েছিল, তবে সরকার পরিবর্তনের পর গত বছর সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৮৭২-এ। এ বছর আবারও বেড়ে দাঁড়াল ৯৭৭-এ।
মহানগরের মধ্যে সদর থানায় ২৪টি, সোনাডাঙ্গায় ১১টি, খালিশপুরে ৭টি, দৌলতপুরে ২৪টি, খানজাহান আলীতে ৮টি, হরিণটানায় ৫টি, লবণচোরায় ৯টি এবং আড়ংঘাটায় ৩২টি মণ্ডপে পূজা হবে। আর জেলায় ডুমুরিয়ায় ২১৪টি, পাইকগাছায় ১৪১টি, বটিয়াঘাটায় ১০৫টি, তেরখাদায় ৯৮টি, রূপসায় ৭৫টি, দাকোপে ৭৪টি, দিঘলিয়ায় ৬১টি, কয়রায় ৫৫টি ও ফুলতলায় ৩৪টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
পূজা নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসন নিরাপত্তা জোরদার করেছে। প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশ মোতায়েন থাকবে, বিশেষ টহল চালানো হবে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের ত্রাণ বিভাগ থেকে প্রতিটি মণ্ডপে ৫০০ কেজি করে চাল অনুদান দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন