সংসদীয় সীমানা পুনর্বহালের দাবিতে ফরিদপুরের ভাঙ্গার দীর্ঘদিন ধরে চলা বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত করেছেন আন্দোলনকারীরা। হাইকোর্টে সীমানাসংক্রান্ত রিট আবেদনের ওপর জারি করা রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা এই কর্মসূচি স্থগিত করেন।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যার সঙ্গে তার কার্যালয়ে আলোচনা শেষে আন্দোলনকারীরা এ সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল ও সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সভায় অংশ নিতে ভাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় দুটি বাসে করে শতাধিক আন্দোলনকারী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসেন।
এর আগে, গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন এক গেজেটে ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসনের অধীন ভাঙ্গার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন নগরকান্দা ও সালথা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ আসনে জুড়ে দেয়। এর প্রতিবাদে তিন দফায় পাঁচ দিন সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন ইউনিয়ন দুটির বাসিন্দারা। ১৫ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ-অবরোধ সহিংসতায় রূপ নেয়। এদিন দুপুরে ভাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নেওয়া পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ভাঙ্গা থানা, উপজেলা পরিষদ কার্যালয়, ভাঙ্গা হাইওয়ে থানাসহ বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধরা।
এ ছাড়া ভাঙ্গার আসন পুনর্বহালের জন্য ফরিদপুর-৪ আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহবুবুর রহমানসহ পাঁচজন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। পরে গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের জারি করা আদেশ কেন অবৈধ হবে ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট এই রুলের জবাব দেওয়ার জন্য ১০ দিন সময় বেঁধে দেন।
জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সভায় অংশ নেওয়া একাধিক ব্যক্তি জানান, গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করার শর্তে ২০ ব্যক্তি গত শনিবার প্রথম পর্যায়ে ভাঙ্গার ইউএনওর সঙ্গে আলোচনায় বসেন। পরে তারা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বসতে রাজি হন।
জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা শেষে ভাঙ্গা উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক রবিন সোহেল বলেন, জেলা প্রশাসক আমাদের বলেছেন, আপনাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাধা দিইনি। কিন্তু কিছু দুষ্কৃতকারী ঢুকে সহিংসতা ঘটিয়েছে। তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। তবে এ সহিসংতায় যারা জড়িত নন, তাদের কোনো হয়রানি করা হবে না। বিষয়টি হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। রায় আমাদের পক্ষে আসবে বলে আশা করছি। রায় না হওয়া পর্যন্ত আপনারা আন্দোলন স্থগিত করুন এবং নির্বিঘ্নে জীবনযাপন করুন। পরে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা হাইকোর্টের শুনানি বা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চলমান কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা বলেন, আমরা আন্দোলনকারীদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন থেকে বিরত থাকবেন। তবে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, ভাঙ্গা থানা ও ভাঙ্গা হাইওয়ে থানায় তাণ্ডব চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন