অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড থেকে ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে বিপুল অঙ্কের ঋণ গ্রহণ ও আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও মহাব্যবস্থাপকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদকের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহ জালাল মামলাটি করেন।
দুদক জানায়, ‘মেসার্স মিজান ট্রেডার্স’ নামে একটি বেনামী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নুরজাহান গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জাসমীর ভেজিটেবল ওয়েল লিমিটেডের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় প্রায় ৫১ কোটি টাকা ঋণ উত্তোলন করা হয়। পরে সুদে-আসলে এ ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রথমবারের মতো হিসাব খোলার মাত্র কয়েক মাস পরই বিপুল অঙ্কের ঋণ মঞ্জুর হয়। এক্ষেত্রে তৎকালীন প্রিন্সিপাল অফিসার, সহকারী মহাব্যবস্থাপক, সার্কেল মহাব্যবস্থাপক থেকে শুরু করে প্রধান কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোনো আপত্তি না জানিয়ে বরং সুপারিশ করেন। ফলে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদও ঋণ অনুমোদন করে।
প্রকৃতপক্ষে মিজান ট্রেডার্স ছিল নুরজাহান গ্রুপের বেনামী প্রতিষ্ঠান। মিজানুর রহমান নামের একজন বেতনভোগী কর্মকর্তার মালিকানা দেখালেও হিসাব পরিচালনার অনুমোদন দেন জাসমীর ভেজিটেবল ওয়েল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ।
দুদকের মামলার আসামিরা হলেন মেসার্স মিজান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান, জাসমীর ভেজিটেবল ওয়েল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ, পরিচালক টিপু সুলতান ও ফরহাদ মনোয়ার, অগ্রণী ব্যাংকের চট্টগ্রাম সার্কেলের বর্তমান মহাব্যবস্থাপক মোস্তাক আহমেদ, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক আবুল হোসেন তালুকদার, ঢাকা সার্কেল-২ এর সাবেক মহাব্যবস্থাপক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, সিলেট সার্কেলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক তাজরীনা ফেরদৌসী, সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রধান শাখা) মোফাজ্জল হোসেন এবং সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ আব্দুল হামিদ।
চট্টগ্রাম-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ কালবেলাকে বলেন, দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭–এর ৫(২) ধারায় মামলা হয়েছে। তদন্তে নতুন কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
দুদকের এজাহারে বলা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে মেসার্স মিজান ট্রেডার্স অগ্রণী ব্যাংকের আছাদগঞ্জ শাখায় হিসাব খোলে। নতুন প্রতিষ্ঠান হয়েও তারা ১২৬ কোটি টাকার ট্রাস্ট রিসিপ্ট (টিআর) ঋণসুবিধা পায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী জামানত বা নগদায়নযোগ্য সম্পদ ছাড়া এত বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়ার বিধান নেই। কিন্তু ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিয়ম না মেনে কেবল অগ্রিম তারিখের চেক জামানত হিসেবে নিয়ে ঋণ অনুমোদন করেন।
পরে মিজান ট্রেডার্স ও সহযোগীরা ৫১ কোটি টাকা পরিশোধ না করে আত্মসাৎ করেন। বর্তমানে সুদসহ টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮৯ কোটি ৮০ লাখে।
মন্তব্য করুন