রাজশাহীর চারঘাটে পারিবারিক বিরোধের জের ধরে ২০০৯ সালে খুন হন মো. মন্টু নামে এক ব্যক্তি। ওই ঘটনায় চারঘাট থানায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণও শেষ হয়েছে রাজশাহীর আদালতে। যুক্তিতর্কের জন্য আগামী ১৪ অক্টোবর দিন ধার্য রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিচার থেকে রেহাই পেতে নানা পাঁয়তারা শুরু করেছেন ওই হত্যা মামলার আসামিরা। এর অংশ হিসেবে হত্যা মামলাটিকে ‘রাজনৈতিক মামলা’ হিসেবে প্রত্যাহারের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন তারা– এমন অভিযোগ নিহত মন্টুর পরিবারের সদস্যদের।
সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহী সিটি প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মন্টুর স্ত্রী লাভলী বেগম, ছেলে সেলিম রেজা, মেয়ে শিরিনা খাতুন ও মামলার বাদী রঞ্জু আহমেদ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর চারঘাট উপজেলার রায়পুরের বাসিন্দা রঞ্জুকে মারধর করে প্রতিপক্ষ। রঞ্জুর চিৎকার শুনে তার বাবা শামসুল ইসলাম এবং দুই ভাই মনিরুল ইসলামও মো. মন্টু ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরও পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মন্টু মারা যান।
সংবাদ সম্মেলনে মন্টুর স্বজনরা বলেন, এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটিকে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা বলে দাবি করে সেটি প্রত্যাহারের জন্য গত ৩০ জুন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন আসামি ইমদাদুল হক ওরফে আবু তালেব, মো. রবিউল, আবু তাহের, রেজাউল হক, বজলু, মো. ওহাব, নজরুল ইসলাম ও আবদুল খালেক।
তাদের দাবি, তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী রাজনৈতিক শত্রুতাবশত আসামি করেছে। আসামিদের আবেদনপত্রে ‘জোর সুপারিশ’ জানিয়ে স্বাক্ষর করেছেন রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মতামত চেয়ে আবেদনগুলো গত ২৯ জুলাই জেলা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কাছে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি জানতে পেরে মামলার বাদী রঞ্জু আহমেদ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারের কাছে লিখিতভাবে আপত্তি জানিয়েছেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আইন-১ শাখায়ও লিখিতভাবে আপত্তি জানিয়েছেন। বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছেও অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
রঞ্জু জানান, তিনি নিজে বিএনপির কর্মী। তার পরিবার বিএনপির সমর্থক। ২০০৯ সাল থেকে মামলা পরিচালনা করছেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সদ্য সাবেক আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা। মামলা তোলার জন্য একাধিকবার চাপ দেওয়া হয়েছে দাবি করে রঞ্জু বলেন, তিনি রাজি না হওয়ায় রাজনৈতিক মামলা বলে এটিকে প্রত্যাহারের চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে মামলার প্রধান আসামি ইমদাদুল হক ওরফে আবু তালেব বলেন, আমরা বিএনপি করি। তাই মামলায় আসামি করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদও সে সময় বাদী রঞ্জুকে আপস করার কথা বলেছিল; কিন্তু তিনি পাত্তাই দেননি। এখন চাঁদ চেয়ারম্যান (সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদ) সুপারিশ করেছেন।
সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, এ ব্যাপারে আমার কোনো বক্তব্য নেই, আমার কোনো মন্তব্য নেই। এটা পারিবারিক বিরোধে খুন না কি রাজনৈতিক খুন, সেটা এলাকায় গিয়ে খোঁজ নেন।
মন্তব্য করুন