‘আমি মরে যাইতাম, আমার বুকের ধন সন্তানটা যদি বাঁইচা থাকত। তাহলে মরেও শান্তি পাইতাম। শেষবারের মতো ছেলের মুখটা এক নজর দেখতে চাই। কেউ আমার ছেলের লাশটা আইন্না দেও।’ কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই আকুতি জানাচ্ছিলেন হোসনে আরা বেগম।
তিনি জানান, সৌদি আরবে হাসপাতালে রোববার (৫ অক্টোবর) মারা গেছে তার ছেলে মো. হাবিব খান।
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার মতলব পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের নবকলস গ্রামের মো. মিজানুর রহমান খানের ছেলে মো. হাবিব খান।
সরেজমিন জানা যায়, মিজানুর রহমান খান ও হোসনে আরা বেগম দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে হাবিব খান (২৫)। তিন মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে, ছোট দুই মেয়ে বাড়িতেই আছে। ২০২৩ সালে জীবিকার সন্ধানে সৌদি আরবে যান তিনি। সৌদির মক্কায় একটি আবাসিক হোটেলে কিছুদিন কাজ করার পর আর কাজ পাননি। টাকার অভাবে না খেয়ে দিন কাটত। ছোটখাটো কাজ জুটলেও পারিশ্রমিক তেমন পেতেন না। খাবারের কষ্টে ও দুশ্চিন্তায় কিছুদিন আগে হঠাৎ বুকে ব্যথা শুরু হয়। তারপর এক সহকর্মী তাকে মক্কার একটি হাসপাতাল নিয়ে ভর্তি করেন। রোববার (৫ অক্টোবর) রাত ১১টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৌদিতে মারা যান তিনি। তার মরদেহের অপেক্ষায় আছে বাবা-মা-বোনসহ স্বজনরা।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, হাবিব উপজেলার মতলব সরকারি কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে জীবিকার সন্ধানে যান সৌদি আরব। সৌদির মক্কা নগরে কিছুদিন একটি আবাসিক হোটেলে কর্মচারী হিসেবে কাজ করার পর কাজ ছেড়ে দেন। এরপর সেখানকার এক দালালের অধীনে থেকে মাঝেমধ্যে ছোটখাটো কাজ পেলেও তেমন পারিশ্রমিক পেতেন না। অধিকাংশ সময় কাটাতেন বসে বসে। নিজের হতাশা ও কষ্টের কথা জানাতেন বাবা-মা ও বোনসহ স্বজনদের।
কান্নাজরিত কণ্ঠে হাবিবের বড় বোন সুইটি আক্তার বলেন, ভাইয়ের লেখাপড়া বাদ দিয়ে সুখের জন্য বিদেশে পাঠালাম। আমার আদরের ভাইটাকে কীভাবে আল্লাহ নিয়ে গেল। আমার ভাইকে না নিয়ে আমাকে নিয়ে যেত আল্লাহ। আমার ভাইয়ের বিদেশে কাজ ছিল না। টাকার অভাবে না খেয়ে ছিল। না খেয়ে থেকে আমার ভাই অসুস্থ হয়ে গেছে। এই অসুস্থ থেকেই মৃত্যু হয়েছে।
হাবিবের বাবা মিজানুর রহমান কালবেলাকে বলেন, আমার তিন মেয়ে এক ছেলে। বড় আশা করে ছেলেকে বিদেশে পাঠাইছিলাম। হঠাৎ এক খবরে আকাশ ভেঙে মাথায় পড়ল। আমার একমাত্র ছেলে হাবিব। বয়স মাত্র ২৫ বছর। ধার করে বিদেশ পাঠাইলাম। ১২ দিন আগে জানতে পারি ছেলে হার্ট অ্যাটাক করেছে। তাকে মক্কার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর রোববার গভীর রাতে সেখানকার তার এক সহকর্মীর ফোনের মাধ্যমে জানতে পারি, এদিন স্থানীয় সময় রাত ১১টায় ছেলের ওই হাসপাতালে মারা গেছে।
মতলব দক্ষিণ থানার ওসি মো. সালেহ আহাম্মদ বলেন, বিদেশ থেকে তার মরদেহ আনার বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
মন্তব্য করুন