বগুড়ার ধুনটে যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিজ হাতে রোপণ করা স্মৃতিবিজড়িত বটগাছটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে ধুনটের শহরাবাড়ি খেয়া ঘাটে যমুনা নদীর আকস্মিক ভাঙনে মুহূর্তের মধ্যেই গাছটিসহ নদী তীরের একটি অংশ প্রবল স্রোতে তলিয়ে যায়। তবে এই ভাঙনের কারণ হিসেবে বালুমহালের ইজারাদার থানা যুবলীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেনকেই দায়ী করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই দশক আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ধুনট উপজেলার শহরাবাড়ি ঘাট এলাকায় সফরে এসে স্মৃতি হিসেবে একটি গাছ রোপণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে গাছটি স্থানীয়দের কাছে রাজনৈতিক ইতিহাসের এক স্মারক হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সম্প্রতি যমুনার ভাঙনে মুহূর্তেই সেই স্মৃতি মুছে গেছে নদীর বুকে। এতে অনেকেই মনঃকষ্টে ভুগছেন।
স্থানীয়রা জানান, যমুনা নদীর এই ভাঙন শুধু ভূমি নয়, এলাকার ইতিহাস ও স্মৃতিও কেড়ে নিচ্ছে। এক সময় যেখান দিয়ে তারেক রহমানের লাগানো গাছের ছায়ায় বসে মানুষ গল্প করত, এখন সেখানে বয়ে যাচ্ছে যমুনার উত্তাল ঢেউ।
এলাকাবাসী জানান, গত কয়েকদিন ধরে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবল স্রোতে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। বুধবার দুপুরে হঠাৎ করে শহরাবাড়ি ঘাট এলাকায় নদীর পাড় ধসে পড়ে। এতে গাছটিসহ আশপাশের সমতল ভূমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এখন ভাঙনের মুখে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ও আবাদি জমি।
শহরাবাড়ি গ্রামের শফিক মিয়া জানান, বালু মহালের ইজারাদার যুবলীগ নেতা বিগত আওয়ামী লীগ সরকার থেকে এখন পর্যন্ত বালুমহাল নিয়ে বালু উত্তোলন করেছে। তাকে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২৫ বছর আগে একটি বটগাছ রোপণ করেছিলেন। চরাঞ্চলের মানুষ নৌকার জন্য এই গাছের ছায়ায় জিরিয়ে নেয়। এখানে বালু মহাল করে ড্রেজিং করবেন না। কিন্তু তিনি কারও কথা শোনেনি।
ওই গ্রামের বাচ্চু মিয়া জানান, বালু উত্তোলনের ফলে শহরাবাড়ি স্পারের উত্তর পাশের তিন শত বিঘা জমি গত বছর যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে। এই বালু দস্যুদের আইনের আওতায় আনা হোক।
এদিকে ভাঙনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন ধুনট উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম তৌহিদুল আলম মামুন ও উপজেলা বিএনপির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। তারা ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন এবং ওই ঐতিহাসিক গাছটি বিলীন হওয়ায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। নেতারা দ্রুত ভাঙনরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে জানতে বালুমহালের ইজারাদার উপজেলা যুবলীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেনের মোবাইলে কল দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী লিটন আলী বলেন, ভাঙনরোধে ইতোমধ্যে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য করুন