পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

শুকিয়ে যাওয়া নদীর বুকে হাজারো মানুষের হাহাকার

তিস্তা নদী মৃতপ্রায়। ছবি : কালবেলা
তিস্তা নদী মৃতপ্রায়। ছবি : কালবেলা

উত্তরাঞ্চলের প্রাণ তিস্তা নদী আজ মৃতপ্রায়। একসময়ের খরস্রোতা এই নদী এখন বছরের অধিকাংশ সময় শুকিয়ে থাকে। বর্ষায় ভাসে, আবার শীতে পরিণত হয় মরুভূমির মতো ফেটে যাওয়া বালুচরে। নদীভাঙন, চর গঠন ও তীব্র পানির সংকটে তিস্তাপাড়ের মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা ও দুর্ভোগ।

হিমালয়ের গ্লেশিয়ার থেকে উৎপন্ন তিস্তা নদী ভারতের সিকিম রাজ্য পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি অতিক্রম করে বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম দিয়ে প্রবেশ করেছে। এরপর নদীটি নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা হয়ে ব্রহ্মপুত্রে মিলিত হয়েছে।

তিস্তা নদীকে ঘিরেই উত্তরবঙ্গের কৃষি, মৎস্য, সংস্কৃতি ও জীবন-জীবিকা গড়ে উঠেছিল। একসময় এই নদীর চরাঞ্চলে ধান, পাট, ভুট্টা, তিল ও সবজি চাষে ছিল সমৃদ্ধি।

১৯৮৩ সালে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজ নির্মাণের পর থেকেই তিস্তার স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব, আর বর্ষায় ভয়াবহ বন্যা এখন নিয়মিত দুর্যোগে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, গত এক দশকে তিস্তা নদীর ভাঙনে ২০ হাজারেরও বেশি পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। নদীর তীরঘেঁষে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে।

সম্প্রতি লালমনিরহাটের মহিপুর এলাকায় তিস্তা সেতু রক্ষা বাঁধের ৩৫০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। রাজারহাটে ৪টি গ্রামে ৭ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি, গঙ্গাচড়ায় ৫০টিরও বেশি পরিবার ঘর হারিয়েছে এবং কুড়িগ্রামের উলিপুরে শতাধিক বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে।

তিস্তা বাঁচাতে গত কয়েক বছরে উত্তরাঞ্চলে একের পর এক আন্দোলন হয়েছে। তিস্তা বাঁচাও, উত্তরবঙ্গ বাঁচাও স্লোগানে রংপুর বিভাগজুড়ে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও মশাল মিছিল হয়েছে।

সাম্প্রতিক কর্মসূচিতে নদীর ১১৫ কিমিজুড়ে ৪৮ ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় মানুষ ও পরিবেশবাদীরা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিস্তার দুই তীরে একযোগে মশাল প্রজ্বালন করে তারা স্লোগান তোলেন, জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই! এই কর্মসূচিতে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার-লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধার কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীদের দাবি, বাংলাদেশ-ভারত তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি দ্রুত কার্যকর করতে হবে। তিস্তা মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। প্রস্তাবিত মাস্টারপ্ল্যানে নদী পুনর্খনন, চরবাসীর পুনর্বাসন ও বাঁধ সংস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রাথমিক বাজেট অনুযায়ী প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।

তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলন সূত্রে জানা গেছে, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা কাজ শুরু হবে।

১০ বছরের মেয়াদে দুই ধাপে এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম ধাপে (৫ বছর) ব্যয় হবে ৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা-যার মধ্যে ৬ হাজার ৭০০ কোটি আসবে চীন থেকে ঋণ হিসেবে এবং ২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।

তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, সরকার যদি নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগে নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু না করে, তবে তিস্তাপাড়ের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকার ইতোমধ্যে প্রথম ধাপের জন্য ২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এখন সময় এসেছে কথা নয়, কাজ শুরুর।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নেতানিয়াহুর সঙ্গে শান্তিতে নোবেলজয়ী মাচাদোর ফোনালাপ, কী কথা হলো

চার দাবিতে আন্দোলনে নামছেন ফেল করা শিক্ষার্থীরা

মিরপুরে কেন এই ‘কালো পিচ’

শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে আগুন

দাবি আদায়ে শিক্ষকদের সঙ্গে থাকবে গণঅধিকার পরিষদ : রাশেদ

কালবেলার বর্ষপূর্তিতে সিরাজগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবীদের মিলনমেলা

বিবিসিতে তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার, ইতিবাচক বলছেন ৮০ ভাগ নেটিজেন

নিজেদের সম্মানটুকু কলঙ্কিত করবেন না, এনসিপিকে ফারুক

শুরুতেই দুই উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

দামি সাপ্লিমেন্ট নয়, তারুণ্য ধরে রাখতে দরকার কিছু সহজ অভ্যাস

১০

দেশের সবচেয়ে সাশ্রয়ী ৫জি স্মার্টফোন হিসেবে টেকনো উন্মোচন করল স্পার্ক ৪০ ফাইভজি

১১

শহীদ ডা. সজীবের পিতাকে তারেক রহমানের উপহার

১২

৩ বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস

১৩

যেসব সাধারণ ভুলে নষ্ট হতে পারে রান্নার স্বাদ

১৪

বিদেশ পালাচ্ছিলেন হত্যা মামলার আসামি, অতঃপর...

১৫

সারা দেশে ডিম-মুরগি উৎপাদন বন্ধের হুঁশিয়ারি 

১৬

পর্তুগালে বোরকা ও নিকাব নিষিদ্ধের বিল পাস

১৭

টি-টোয়েন্টি দলে ফিরছেন দুই তারকা ক্রিকেটার

১৮

সেপটিক ট্যাংকে পড়ে দুই শিশুর মৃত্যু

১৯

‘জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করে এনসিপি রাজনীতি থেকে ছিটকে যায়নি’

২০
X