‘সত্য, সাহস, সুন্দর’ এই স্লোগানে রাজশাহীতে বর্ণিল আয়োজনে দৈনিক কালবেলার তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাজশাহী নগরীর একটি অভিজাত রেস্তোরাঁর সম্মেলন কক্ষে কেক কাটা ও আলোচনা সভাসহ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বর্ণাঢ্য নানা আয়োজন উদযাপন করা হয়।
এ সময় কালবেলাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান বিভিন্ন শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক নেতারাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
অনুষ্ঠানস্থলে কালবেলাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসে কেক কাটেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সালেহ হাসান নকীব, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এসএম আব্দুর রাজ্জাক, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডা. জাওয়াদুল হক, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, জামায়াতের রাজশাহী মহানগরীর নায়েবে আমির ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মো. আবুল কালাম আজাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতারা। কালবেলার রাজশাহী ব্যুরো প্রধান আমজাদ হোসেন শিমুল আলোচনাসভার অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
কালবেলার তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানিয়ে আলোচনা সভায় রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে কালবেলার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি। তৃতীয় থেকে চতুর্থ বর্ষে পদার্পণ করায় কালবেলার সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘সৎ ও ইথিক্যাল সাংবাদিকতা এগুলো কোনোটাই সমাজ বিচ্ছিন্ন উপাদান নয়। একটি সমাজে যদি ইথিক্যাল প্র্যাকটিস থাকে তাহলে সাংবাদিকরাও স্বপ্রণোদিত হয়ে ইথিক্যাল হয়ে যাবে। আর একটি সমাজের বৃহত্তর পরিবেশের ভেতরে যদি ইথিক্যাল প্র্যাকটিসের অভাব থাকে, তাহলে সাংবাদিকতাতেও ইথিক্সের ঘাটতি থেকে যায়। আমরা সেই সংকটের মধ্যেই আছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়, আমলাতন্ত্র সব জায়গাতেই ইথিক্যাল প্র্যাকটিস দেখতে পাই না। আমাদের সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও বলতে পারি না যে, এটিও অসম্ভব একটা ইথিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এই পরিস্থিতি পাল্টাতে হবে। আমাদের সাংবাদিকদের মধ্যে একটা অংশ অত্যন্ত পেশাদার ও দক্ষ এবং তাদের জন্য সবচেয়ে বেশি যেটি দরকার সেটি হলো ‘ইকোসিস্টেম’। সাংবাদিকদের জন্য এই পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের সাংবাদিকতা অনেক উন্নত একটি জায়গায় স্থান পেতে পারে। আমি প্রত্যাশা করি, সেই পরিবেশ রক্ষা করার জন্য কালবেলা কাজ করবে।’
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এসএম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশা থাকে সংবাদপত্রের ভূমিকা হবে নিরপেক্ষ। আসলে সংবাদপত্রের প্রচলনই হয়েছিল জনমতকে প্রভাবিত করবার জন্য। সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি জনমতকে প্রভাবিত করাই সংবাদপত্রের বড় ধরনের প্রয়োজন ছিল বলেই আমার মনে হয় এত বিকাশ হয়েছিল। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যম হয়েছে। আমি শুধু এইটুকু আশা করব, কালবেলার পক্ষপাতিত্ব যেন দেশ তথা দেশের মানুষের জন্য হয়, গণতন্ত্রের জন্য হয়। আশা করি, কালবেলা সে লক্ষ্যেই সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আমি কালবেলার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি।’
রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডা. জাওয়াদুল হক বলেন, ‘বর্তমান সময়ে অনেকগুলো মাধ্যম তৈরি হয়ে গেছে। এখন পত্রিকার পাশাপাশি এই মাধ্যমগুলো কাজ করছে। গণমাধ্যম অনেক ক্ষেত্রে তাদের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অনেক ক্ষেত্রেই সহযোগিতা করছে। যেমন- মেডিকেল সায়েন্সের ক্ষেত্রেও অনেকদূর এগিয়েছে। চীনে একটি হাসপাতাল হয়েছে সেখানে শুধুই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের রোবট দিয়ে কাজ করছে। আমরা অনেক সময় খেই হারিয়ে ফেলছি যে, কোনটি বস্তুনিষ্ঠ আর কোনটি ফেইক নিউজ সেটি বুঝতে পারছি না। অনেক গণমাধ্যম বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং আমাদের টিকে থাকার জন্য বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের দিকে আবার ফিরে আসতে হবে। আশা করি, কালবেলা সেই ধারা ফিরিয়ে আনতে পারবে।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক এবং রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন বলেন, ‘বাংলাদেশের বহুল আলোচিত ডিজিটাল গণমাধ্যমের মধ্যে কালবেলা শীর্ষে। অল্প সময়ে কালবেলা বাংলাদেশের গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। শান্তি-সুখের দিশা দিতে আগামী দিনে কালবেলার পথচলা আরও সুন্দর হোক, সফল হো— এই কামনা করছি। তাদের ললাটে পরিহিত হোক আনন্দের জয়টিকা।’
জামায়াতের রাজশাহী মহানগরীর নায়েবে আমির ও রাজশাহী-২ (সদর) আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘কালবেলার জন্মদিনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, এই অনুষ্ঠানে রাজশাহীর তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে একসঙ্গে পেয়েছি। আমার মনে হয় না যে, রাজশাহীর অন্য কোনো অনুষ্ঠানে একসঙ্গে এই তিন উপাচার্যকে একত্রিত করতে পেরেছিল। এমন মহৎ উদ্যোগের জন্য কালবেলাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। সংবাদপত্র সমাজের দর্পণ। পজিটিভ জনমত সৃষ্টিতে কালবেলা কাজ করবে এমনটা প্রত্যাশা করি। কালবেলার বয়স খুবই কম। এই অল্পবয়সে কালবেলা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আমরা কালবেলার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।’
রাজশাহী মহানগরী জামায়াতের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক এবং রাজশাহী-০৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, গণমাধ্যম বা তাদের মালিকদের যে কোনো মতবাদ লালনের স্বাধীনতা আছে। কিন্তু তারা যেহেতু গোটা সমাজের প্রতিনিধিত্ব করছে অন্তত সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। এটি করতে পারলে সমাজ গড়ার ইতিবাচক ভূমিকা প্রতিফলিত হবে। আশা করি, কালবেলা সেই ভূমিকা পালন করবে।
কালবেলাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আরও বক্তব্য দেন— রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (রুয়া) ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. সাবরিনা শারমিন বনি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব ড. সাদিকুল ইসলাম স্বপন, রাজশাহী এডিটরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব অপু, রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আরটিজেএ) আহ্বায়ক মেহেদী হাসান শ্যামল, রাজশাহী প্রেস ক্লাবের সাবেক আহ্বায়ক ও এনটিভির সিনিয়র রিপোর্টার শ ম সাজু, দৈনিক উত্তরা প্রতিদিনের সম্পাদক এনায়েত করিম, দৈনিক দিনকালের রাজশাহী ব্যুরো প্রধান আব্দুস সবুর প্রমুখ।
কালবেলাকে শুভেচ্ছা জানানোর সময় বক্তব্যে বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব অধ্যাপক ড. সাদিকুল ইসলাম স্বপন বলেন, গণমাধ্যমকে একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয় এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, গণমাধ্যমের ভূমিক কী হতে পারে সেটি কিন্তু বাংলাদেশসহ গোটা পৃথিবীর ইতিহাসের উত্থান-পতনের ইতিহাসের সঙ্গে গণমাধ্যমের যে ভূমিক এটি প্রমাণ করেছে। আমরা সাংবাদিকরা যে গুরুত্বপূর্ণ, এটি আমরা নিজেরাই কমিয়ে দিচ্ছি। এটি তৈরি হয়েছে রাষ্ট্র, গণমাধ্যমের মালিক, আমাদের সমাজ ব্যবস্থার পাশাপাশি রাজনীতির দ্বারা প্রভাবিত হই তার কারণে। তাই সবার প্রাণান্ত প্রচেষ্টায় গণমাধ্যমকর্মীদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে হবে।
অনুষ্ঠানে রাজশাহী এডিটরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব অপু বলেন, বর্তমান সময়ে গণমাধ্যম বা সংবাদ মাধ্যম একটি জটিল সময় পার করছে। নানা প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে গণমাধ্যম তার সময় অতিবাহিত করছে। সামাজিক মাধ্যমের পাশাপাশি পাঠকের কাছে টিকে থাকাসহ নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হচ্ছে। সর্বোপরি আমার কাছে বড় প্রতিযোগিতা যেটি মনে হয় সেটি হচ্ছে, এই সমাজ গণমাধ্যমটাকে খলনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছে। সুতরাং এটি নিয়ে আমাদের এখনই ভাবনার সময় এসেছে।
রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান শ্যামল বলেন, কালবেলার তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাদের অভিনন্দন এবং মোবারকবাদ জানাচ্ছি। সেই ক্ষেত্রে কালবেলার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।
দৈনিক উত্তরা প্রতিদিনের সম্পাদক এনায়েত করিম বলেন, কালবেলা খুব দ্রুতই তাদের বস্তুনিষ্ঠ, সহজ, সুন্দর ও সাহসী সাংবাদিকতার মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। একটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান তখনই মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, যখন তারা তৃণমূল মানুষের কথা বলে। কালবেলা পত্রিকা ঠিক তেমনি তাদের বস্তুনিষ্ঠ ও সাহসী সাংবাদিকতার মাধ্যমে একটি ভালো প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কালবেলাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, রাজশাহী মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন, রাজশাহী মহানগরী জামায়াতের নেতা, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা, স্টার নিউজের রাজশাহী ব্যুরো প্রধান জিয়াউল গনি সেলিম, উত্তরা প্রতিদিনের সম্পাদক এনায়েত করিম, আরাফাত রহমান কোনো ক্রীড়া পরিষদ রাজশাহী মহানগরের সদস্য সচিব প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান সোহেল, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৫নং ওয়ার্ডের জামায়াত মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী প্রকৌশলী শাকিলুর রহমান শাকিল, রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক রমজান আলী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব ও রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতারাসহ অনেকেই।
এ ছাড়া কালবেলাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন মহানগরী জামায়াতের প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ শাহাদত হোসাইন, সাংগঠনিক সেক্রেটারি জসিম উদ্দিন সরকার, প্রচার বিভাগের সহকারী সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান আশু, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) যুগ্ম মহাসচিব রাশেদ রিপন, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, দৈনিক ইত্তেফাকের রাজশাহীর স্টাফ রিপোর্টার আনিসুজ্জামান, এটিএন নিউজ ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’র রাজশাহী ব্যুরো প্রধান বুলবুল হাবীব, দ্য নিউ এজ পত্রিকার রাজশাহীর স্টাফ রিপোর্টার সুজন আলী, জাগো নিউজ ও নাগরিক টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার সাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশ বেতার রাজশাহী মহানগর সংবাদদাতা আশিকুর রহমান, রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সাঈদ রনি, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম, ঢাকা মেইলের রাজশাহী প্রতিনিধি আমান উল্লাহ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের দপ্তর সম্পাদক ফাহমিদুর রহমান ফাহিম প্রমুখ।
মন্তব্য করুন