বরিশালের দুই শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী কাউনিয়া মহাশ্মশানে উদযাপিত হয়েছে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় শ্মশান দীপাবলি উৎসব।
রোববার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা হতেই হাজারো মোমবাতির আলোয় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে মহাশ্মশান।
মোববাতি জ্বালিয়ে পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। প্রতি বছরের মতো চতুর্দশীতে পরলোকগত আত্মার শান্তি কামনায় সমাধিতে মোমবাতি, ধূপকাঠি প্রজ্বলন, প্রার্থনা ও প্রয়াত স্বজনদের প্রিয় খাবার সমাধিস্থলে প্রদান করেন তারা।
এ বছর তিথি শুরু হয় বিকেল ৩টায়। তবে মোমবাতি প্রজ্বলন শুরু হয় বিকেল ৫টা থেকে, চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সন্ধ্যার আগেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আসেন শ্মশানে। প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দীপাবলি উৎসব। প্রয়াত স্বজনদের সমাধি সাজানো হয় পছন্দের খাবারসহ নানা উপাচারে। আত্মার শান্তি কামনায় ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী চলে প্রার্থনা।
বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সভাপতি অসিম কুমার মুরালি ও সাধারণ সম্পাদক বিজয় ভক্ত জানান, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে দীপাবলি উৎসব পালিত হচ্ছে। এটি দুই শতাধিক বছরের পুরোনো একটি ঐতিহ্য। যারা পরলোকগমন করেছেন তাদের আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করি। এখানে প্রতি বছর দিপাবলীর আয়োজন করা হয়। স্বজনরা আসেন, প্রদীপ প্রজ্বালন করেন।
তারা বলেন, শ্মশান দীপাবলি উৎসব ঘিরে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহযোগিতা করছেন। মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকেও স্বেচ্ছাসেবক রাখা হয়েছে। এবার আয়োজনে কিছুটা ব্যতিক্রম রয়েছে। আগের মতো শ্মশান এলাকায় আলোকসজ্জা এবং মেলার পাশাপাশি ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে।
বরিশাল নগরীর কাউনিয়ায় এই মহাশ্মশানটি প্রায় ২০০ বছর আগে ৫ একর ৯৬ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। নতুন পুরোনো মিলিয়ে মহাশ্মশানে ৬১ হাজারেরও বেশি সমাধি রয়েছে। তার মধ্যে ৫০ হাজারের বেশি পাকা, ১০ হাজার কাঁচা মঠ রয়েছে। এ ছাড়া ৯০০ মঠ রয়েছে যাদের স্বজন এই দেশে নেই, সেসব মঠ হলুদ রঙ করা হয়েছে। স্বজন না থাকা মঠগুলোতে কমিটির পক্ষ থেকে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়।
শ্মশান দীপাবলি উৎসব কেন্দ্র করে কাউনিয়া এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণভাবে দীপাবলি উৎসব উদযাপিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ১৫০ পুলিশ সদস্যসহ অন্যান্য বাহিনী শ্মশানের মধ্যে এবং বাইরে কাজ করছে।
মন্তব্য করুন