

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আশায় এবার গ্রহণযোগ্য মতামতের ভিত্তিতে গঠন করেছে নাগরিক সংগঠন ‘ইউনাইটেড কাউন্সিল অব রোহাং’ (ইউসিআর)।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় উখিয়ার ১৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় ইউসিআরের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথ গ্রহণ ও আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান। অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহর উপস্থিতিতে ও সংগঠনটির সমন্বয় কমিটির আয়োজনে শপথ নেন ‘কংগ্রেস অব কাউন্সেলরস’-এর সভাপতি ও সদস্যরা।
সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফুরকান মির্জা বলেন, আমরা প্রমাণ করেছি রোহিঙ্গারা শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীলভাবে নিজেদের সংগঠিত করতে পারে। ইউসিআর আমাদের ঐক্য, জবাবদিহিতা এবং মর্যাদাপূর্ণ ভবিষ্যতের প্রতীক।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের অনুমতি নিয়ে কক্সবাজারের ৩৩টি ক্যাম্পে প্রতিনিধি নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। অনুষ্ঠানের প্রেস ব্রিফিংয়ে ইউসিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয় এটি রোহিঙ্গাদের বৈধভাবে প্রতিনিধিত্বের প্রথম আনুষ্ঠানিক নাগরিক সংগঠন।
সংগঠনটি জানায়, রোহিঙ্গারা বহু বছর ধরে মিয়ানমারে গণহত্যা, নিপীড়ন ও উচ্ছেদের শিকার। প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েও তাদের জন্য এখনো কোনো স্থায়ী সমাধান আসেনি। ইউসিআর মনে করে, তাদের আত্মপ্রকাশ রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ঐক্য ও স্বচ্ছ, দায়িত্বশীল নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ।
প্রথম ধাপে ৩৩টি ক্যাম্প থেকে মোট ৩ হাজার ৬৯৩ জন ভোটার নির্বাচন করা হয়। তারা এসেছেন ১৪টি শ্রেণি থেকে- ইমাম, মুহতামিম, ছাত্র, শিক্ষক, ওকতা (চেয়ারম্যান), নারী প্রতিনিধি, সোশ্যাল মিডিয়া কর্মী, হেড মাঝি, প্রবীণ নাগরিক, কমিউনিটি ডাক্তার, ব্যবসায়ী, যুবক, ক্যাম্পভিত্তিক সংগঠন ও প্রবাসী রোহিঙ্গা। ভোটারদের ক্যাম্প ও এলাকা ভিত্তিতে আটটি ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করা হয়।
নির্বাচনের আগে প্রতিটি অঞ্চলে সভা করে ভোট প্রক্রিয়া, সময়সূচি ও কেন্দ্রের তথ্য জানানো হয়। আলোচনার মাধ্যমে ঐক্য না হলে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হয়। সব ফলাফল যথাযথভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে জানায় ইউসিআর। সব প্রক্রিয়া শেষে ৫০০ সদস্যের কাউন্সেলর কংগ্রেস গঠিত হয়। এই কংগ্রেস থেকে ২৮ জন নির্বাহী সদস্য ও ৫ জন সভাপতি নির্বাচিত হন।
ইউসিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সভাপতির নেতৃত্ব প্রতি ছয় মাসে পরিবর্তিত হবে এবং তিন বছরের মেয়াদ শেষে নতুন কংগ্রেস আহ্বান করা হবে। পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও যোগ্যতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা সমন্বয় কমিটির সদস্য ও তাদের নিকট আত্মীয়রা প্রার্থী হতে পারেননি। এটি সম্পূর্ণ নিচু স্তর থেকে গঠিত একটি সংগঠন, যা রোহিঙ্গা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঐক্যবদ্ধ নাগরিক সমাজ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী নেতৃত্ব ও সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে ইউসিআর—এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে সংগঠনের নেতারা।
মন্তব্য করুন