

সিরাজগঞ্জে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে এইচআইভি পজিটিভ (এইডস) রোগীর সংখ্যা। চলতি বছর ৩৮ জন এইডস রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। গত ৬ বছরে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৫৫ জন। এদের মধ্যে ২৬ জন মারা গেছেন। চলতি বছরেই মারা গেছেন ২৬ জন এইডস রোগী। আক্রান্তদের মধ্যে সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক নেওয়া রোগীর সংখ্যাই বেশি। এছাড়াও সমকামী পুরুষরাও মহামারি এইডসে আক্রান্ত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ এইচআইভি রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের এইচআইভি কাউন্সিলিং অ্যান্ড টেস্টিং সেন্টারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৩৭১০ জন ব্যক্তিকে পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে এইচআইভি পজিটিভ ৩৮ জন। ২০২০ সালে এ কাউন্সিলিং অ্যান্ড টেস্টিং সেন্টার চালুর পর থেকে মোট ১৩ হাজারেরও বেশি রোগীকে পরীক্ষা করা হয়েছে।
এর মধ্যে এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে ২৫৫ জন। এআরটি সেন্টারের মাধ্যমে ওইসব রোগীদের চিকিৎসাসেবা ও কাউন্সিলিং করা হচ্ছে। তবে এ পরিসংখ্যানের চেয়ে রোগীর সংখ্যা আরও অনেক বেশি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
এইচআইভি কাউন্সিলিং অ্যান্ড টেস্টিং সেন্টার আক্রন্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার পাশাপশি ওষুধ দিচ্ছে। সেই সঙ্গে রোগীদের মাধ্যমে আর যাতে এইচআইভি না ছড়ায় সে জন্য তাদের কাউন্সিলিং করা হচ্ছে।
এইচআইভি আক্রান্ত এক যুবক বলেন, রেলওয়ে কলোনির ভেতরে ইনজেকশন বিক্রি করে। বন্ধু-বান্ধবের তালে পরে ইনজেকশন নিয়েছি, দু-চারজন ভাগবাটোয়ারা করে ইনজেকশন নিয়েছি। ২০২১ সালে আমাকে এখানে নিয়ে এসে পরীক্ষা করানোর পর এইচআইভি পজিটিভ হয়। এখানে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ আছি।
এ রোগের উপসর্গ কী জানতে চাইল বলেন, ‘আমার জ্বর হয়, ব্যথা করে তাছাড়া তেমন কোনো সমস্যা নেই।’
সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের এইচআইভি কাউন্সিলিং অ্যান্ড টেস্টিং সেন্টারের কাউন্সিলর কাম অ্যাডমিনিস্টেটর মাসুদ রানা বলেন, চলতি বছরে মাদকের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছে ১৩ জন, সাধারণ আক্রান্ত (অর্থ্যাৎ, ব্লাড শেয়ারিং বা যৌন পল্লীতে যাওয়ার কারণে) ৮ জন এবং ১৭ জন আক্রান্ত হয়েছে এমএসএমের (সমকামিতা) মাধ্যমে। এমএসএম আক্রান্তদের বেশিরভাগই স্টুডেন্ট।
তিনি বলেন, এইচআইভি টেস্ট রুটিন টেস্ট। যেমন গর্ভবতী মা, সার্জারি করতে আসে, গাইনী বিভাগ ও ইমার্জেন্সী থেকেও রোগী আসে টেস্টের জন্য। টেস্টের আগে আমরা তার হিস্ট্রি নেই। নেগেটিভ হলেও আমরা কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে কীভাবে এইডস রোগী ছড়ায় সেটা বুঝিয়ে দেই।
এনজিও ব্যক্তিত্ব ও সাংস্কৃতিক কর্মী, মামুন সালাম বলেন, সিরাজগঞ্জ এইচআইভি’র রেড জোন এটা জানতে পেরে আমরা উদ্বিগ্ন। এর গভীরে গিয়ে আমি আরও হতাশা বেড়ে যায়। আমার ভাই-সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে আমার শঙ্কিত। এর প্রধান কারণ মাদক। মাদক আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও ভেতরে ভেতরে যে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছে সেটা বিস্ময়ের। আর সমকামিতার মাধ্যমে এটা ছড়াচ্ছে, এটা জেনে আতঙ্কে নীল হয়ে যাচ্ছি। এ অবস্থায় বসে থাকার সুযোগ নেই। এটাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকার ও জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করছি। পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।
সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শিমুল তালুকদার বলেন, বর্তমানে আমাদের সিরাজগঞ্জ জেলায় এইচআইভি কার্যক্রমটা ২০২০ সাল থেকে শুরু হয়েছে। বর্তমানে এটা রেড জোন হিসেবে পরিচিত। আমরা বিনামূল্যে ওষুধ এবং যে কোন ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাচ্ছি। আক্রান্তদের মধ্যে ১৮৯ জনই ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক সেবনকারী। সংখ্যাটা বর্তমানে অনেক বেশি। এটা আমাদের জেলার জন্য আতংকের।
সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আকিকুন নাহার বলেন, আমাদের এখানে ২০২০ সালে ৪ জন, ২১ সালে ৮ জন, ২২ সালে ৭৮ জন, ২৩ সালে ৭৬, ২৪ সালে ৩৯ এবং ২৫ সালে ৩৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। ২৬ জন মারা গেছে। এখানে ইনভিস্টিগেশন, পরীক্ষা ও চিকিৎসা বিনামূলে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে কাউন্সিলিংও করা হয়।
মন্তব্য করুন