শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২
আতাউর রহমান, শরীয়তপুর থেকে
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩২ পিএম
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আমরা কোনো প্রতিহিংসার রাজনীতি চাই না : নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

শরীয়তপুর মডেল টাউনে এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু । ছবি : কালবেলা
শরীয়তপুর মডেল টাউনে এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু । ছবি : কালবেলা

সকালে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু পার হতেই দেখ গেল জনতার স্রোত। তাদের মুখে স্লোগান—বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলীয় প্রতীক ধানের শীষ আর মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপুর নামে। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায় পথসভার সেই জনস্রোত মুহূর্তেই রূপ নেয় জনসমুদ্রে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-৩ (ডামুড্যা-গোসাইরহাট ও ভেদরগঞ্জ আংশিক) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা পার হতেই ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করেন দলের নেতাকর্মী আর জনতা।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক একান্ত সচিব (পিএস) নুরুদ্দিন অপু দলের মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ জেলায় যান। দীর্ঘ বছর রাজপথ কাঁপানো আর বারবার কারা নির্যাতিত সাবেক এই ছাত্রনেতাকে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে পেয়ে উচ্ছ্বাসে ভেসে যান নেতাকর্মীরা। অবহেলিত শরীয়তপুরের উন্নয়নের আশায় তারেক রহমানের এই ঘনিষ্ঠজনকে কাছে পেয়ে গণসংযোগ আর পথসভাগুলোতে নামে জনতার ঢল। দিনভর কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও হাজারো সাধারণ মানুষ যোগ দেন। কেউ কেউ অপুকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরেন, বয়োজ্যেষ্ঠরা মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করেন তাদের প্রিয় নেতাকে।

ধানের শীষ, তারেক রহমান এবং অপুর নামে উত্তাল স্লোগান আর মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হন মিয়া নুরুদ্দিন অপু। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, মানুষের জন্য রাজনীতি করতে গিয়ে, শরীয়তপুরবাসীর ভাগ্য ফেরাতে গিয়ে জেল-জুলুমের শিকার হয়েছি। বেগম খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে শরীয়তপুরের হাজার হাজার নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এখন সুযোগ এসেছে শরীয়তপুরবাসীকে দেওয়ার। জেল-নির্যাতন সহ্য করেও তিনি সবার দোয়ায় প্রিয় জন্মভূমিতে সবার মাঝে ফিরে আসতে পেরেছেন। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দলের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সৈনিক হয়ে প্রত্যেক নেতাকর্মীকে মানুষের পাশে থাকতে হবে।

অবহেলিত শরীয়তপুরের উন্নয়নে নিজের ভাবনার কথা উল্লেখ করে অপু শরীয়তপুরবাসীর ভাগ্য উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, স্বপ্ন বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে, দল ও নেতার উন্নয়ন বার্তা, শান্তির বার্তা পৌঁছে দিতে হবে।

জনসংযোগ ও পথসভাগুলোতে মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা উল্লেখ করে প্রচার চালান। তিনি সারা দেশে গত ১৭ বছর ধরে চলা জিয়া পরিবারসহ সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। বলেন, তারেক রহমান নির্দেশ দিয়েছেন, বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতি করেনি, করবে না। তাই নেতাকর্মীদের মানুষের পাশে থেকে বিএনপির আদর্শ ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।

গত ১৭ বছরে গোটা শরীয়তপুরের রাস্তাঘাট, শিক্ষাব্যবস্থা, চিকিৎসাসহ নানা খাতে অবহেলার চিত্র তুলে ধরেন। শরীয়তপুরের মাটি ও মানুষের এই নেতা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শরীয়তপুরকে উন্নয়নের মডেল জেলা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এজন্য সবার কাছে তিনি ধানের শীষে ভোট প্রার্থনা করেন।

নাওডোবা থেকে সকালে শুরু হওয়া পথসভা আর জনসংযোগ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শেষ হয় রাতে। শরীয়তপুর-১ আসনের অন্তর্ভুক্ত জাজিরার কাজীর হাট, জাজিরা সদরের টিঅ্যান্ডটি মোড়, কলেজ গেট হয়ে প্রেমতলা মোড়, শরীয়তপুর সদর, মনোহর বাজার আর বুড়িরহাট বাজারে পথসভা হাজার হাজার নেতাকর্মীর ভিড়ে জনসভায় পরিণত হয়। ওই সময় মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু শরীয়তপুর-১ আসনে (সদর-জাজিরা) বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদ আহমেদ আসলামকে পরিচয় করিয়ে দেন। দিনভর এ নেতা অপুর সঙ্গে জনসংযোগে অংশ নেন। মাঝে জাজিরা থেকে ফেরার পথে অপু শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনের অন্তর্ভুক্ত ডগ্রী বাজার ও রাজনগরে পথসভায় অংশ নেন অপু। এ দুটি পথসভায় তিনি ওই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী শফিকুর রহমান কিরণের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। ডগ্রী বাজারে অপুকে স্বাগত জানান সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুল ইসলাম তালুকদার ও মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে নশাসন ও রাজনগর ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

সন্ধ্যার পর বুড়িরহাট এলাকা থেকে নিজ নির্বাচনী এলাকা ভেদরগঞ্জ অংশে অপুর গাড়িবহর ঢুকলে হাজারো জনতা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। অপুর গাড়িবহর সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই উচ্ছ্বসিত মানুষ যোগ দেন সেই বহরে। রাস্তায় রাস্তায় ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন তিনি। সন্ধ্যার পর শুরু হওয়া খানিকটা বৃষ্টির মধ্যেই তিনি পথসভা মঞ্চে উঠলে নেতাকর্মীরা স্লোগানে মুখর করেন। অপু তাদের ভালোবাসার প্রতিদান যেন দিতে পারেন, সেই দোয়া চান। এজন্য নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার পাশাপাশি সবার কাছে ধানের শীষে ভোট চান। পরে তিনি ডামুড্যা উপজেলা ও গোসাইরহাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পথসভা ও জনসংযোগ করেন।

মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু বলেন, আমরা কোনো প্রতিশোধ কিংবা প্রতিহিংসার রাজনীতি চাই না। আমরা ভালোবাসার প্রতীক হয়ে মানুষের হৃদয় জয় করতে চাই। দীর্ঘ আট বছর পর নিজ এলাকায় ফিরে এসে পথসভায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে আপনাদের ভালোবাসতে এসেছিলাম। কিন্তু আপনাদের মাঝ থেকে আমার ভালোবাসাকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সেদিন স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের গুন্ডাদের হামলায় শরীয়তপুরের রাজপথ রক্তে ভিজে গিয়েছিল। আমরা সেই দিনের কথা ভুলে যাইনি।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে অপু বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আপনাদের মাঝে আমাকে পাঠিয়েছেন। আপনারা কেউ মানুষের মনে কষ্ট দেবেন না, দলের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করবেন না। আমরা প্রমাণ করব—শরীয়তপুর বিএনপির ঘাঁটি। শরীয়তপুর থেকেই আমরা শুরু করতে চাই, বিএনপির তৃণমূলে কোনো বিভেদ নেই; সবাই এক। এজন্য আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমরা একটি ফ্যাসিস্টকে হটিয়েছি। আজকের এই দিনটি আমাদের ত্যাগ, সংগ্রাম আর অবিচল বিশ্বাসের প্রতিফলন। আগামী দিনে আমরা শরীয়তপুরকে আধুনিক শরীয়তপুর হিসেবে গড়ে তুলব—এটাই আমাদের অঙ্গীকার।

সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, এই দিনের জন্য আমরা অনেক বঞ্চনা, লাঞ্ছনা ও নির্যাতন সহ্য করেছি। আজ সেই ইতিহাস বদলের সূচনা হয়েছে। আমাদের সামনে এখন একটাই লক্ষ্য—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করা। তিনি আরও বলেন, দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, মানুষের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এই সংগ্রামে শরীয়তপুরবাসীই হবে অগ্রণী শক্তি।

পথসভা ও জনসংযোগ অনুষ্ঠানে কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, বিএনপির ফরিদপুর বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি এস এম ফয়সাল, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মহিউদ্দিন আহাম্মেদ ঝিন্টু, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদ আহাম্মেদ আসলাম, মাহবুব আলম তালুকদার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মহিতুল গনি মিন্টু সরদারসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন কালবেলার শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি এবং নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ, জাজিরা ও ডামুড্যা প্রতিনিধি)

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভারতের বিরুদ্ধে ডব্লিউটিওতে চীনের মামলা

হেসে খেলে প্রোটিয়াদের হারিয়ে সিরিজ জিতে নিল ভারত

বন্ধুত্বের খেলায় আইনি নোটিশ, বয়কট

ভারত ও আ.লীগকে নিয়ে যা বললেন হাদির বোন মাসুমা

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না ভারত

হাদিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগে চিকিৎসককে অব্যাহতি

আবারও এশিয়া কাপের ফাইনালে মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান

ভারত ম্যাচে জয়ের পর যে কারণে শাস্তির মুখে পড়ল বাফুফে

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে অগ্নিসংযোগ, বিএনপির প্রতিক্রিয়া

জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে আসছেন নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত

১০

কৃষকের ৩০ শতাংশ আলুগাছ উপড়ে ফেলল দুর্বৃত্তরা

১১

জমি নিয়ে বিরোধে একজন গুলিবিদ্ধ

১২

হাসিনাকে আশ্রয় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, জানাল ভারত

১৩

শিশুর কাঁন্নায় বেঁচে গেল মায়ের জীবন

১৪

হাদি হত্যায় সরকারকে দুষলেন রুমিন ফারহানা

১৫

৪২২ চোরাই মোবাইল উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৪

১৬

নির্বাচন জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রধান মাধ্যম : শেখ রবিউল আলম

১৭

খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও ওসমান হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় মিন্টুর দোয়া মাহফিল

১৮

ঐক্য পরিষদ / ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদ, জড়িতদের শাস্তি দাবি

১৯

ওসমান হাদির জানাজা শনিবার, যানচলাচল নিয়ে যে নির্দেশনা দিল ডিএমপি

২০
X