

ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে চট্টগ্রাম বন্দরে বর্ধিত ট্যারিফ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে যৌক্তিকভাবে পুনর্নির্ধারণ করতে প্রধান উপদেষ্টা উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজারস ফোরামের আহ্বায়ক আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে নগরের আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের সিটি হল কনভেনশন হলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান।
চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামের উদ্যোগে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন সেবায় অযৌক্তিক ও অতিরিক্ত ট্যারিফ আরোপ বিষয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ট্যারিফ নিয়ে আমরা যে প্রথম সভা করেছি সেখানে আলটিমেটাম দেওয়ার পর পোর্টের চেয়ারম্যান স্বপ্রণোদিত হয়েই মন্ত্রণালয়ে লেখেন। ৪টি মূল সমস্যা ট্রাক ড্রাইভার, প্রাইম মুভার ও ট্রেইলারসহ চার ক্যাটাগরিতে তিনি বর্ধিত ট্যারিফ স্থগিত করার ব্যবস্থা নিয়েছেন। সিএন্ডএফ এজেন্ট চার ঘণ্টা ধরে কর্মবিরতি পালন করছিল। সেটা আমরা উইদড্র করে নিয়েছিলাম। আমরা চাই না চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো ক্ষতি হোক।
তিনি বলেন, আমরা আবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠি দিয়েছিলাম। আমি পরে জানতে পেরেছি তিনি একটি এজেন্সিকে এটা নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার জন্য নিযুক্ত করেছেন। তিনি আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন। এরপর মঙ্গলবার উনি এবং চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যানসহ আমরা আলাপ করেছি। আমি অত্যন্ত খুশি হয়ে আপনাদের জানাচ্ছি, বন্দরের চেয়ারম্যান আলাপ করে এটাতে সম্মত হয়েছেন- বন্দর ব্যবহারকারী, ক্ষতিগ্রস্ত যারা হয়েছেন, স্টোকহোল্ডারসহ সবার সঙ্গে আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে বৈঠকে বসবেন। আলোচনার প্রেক্ষিতে ওনারা ঠিক করবেন, আসলে কোনটা যৌক্তিক এবং বাস্তবসম্মত- সেটাই এই ট্যারিফকে অন্তর্ভুক্ত করবেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমার হুমায়ূন চৌধুরী বলেন, আমরা যেই কাজটা করতে যাচ্ছি তা আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। ব্যবসায়ী মহলের ঐক্য ও সমর্থন আমাদের দরকার ছিল। সেটা আমরা পেয়েছি। ব্যবসায়ী সমাজের সব সমস্যা সম্পর্কে অবগত আছি। আমরা যখন নির্বাচন করতে যাচ্ছি, তখনই ট্যারিফের বিষয়টি সামনে এসেছে। আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ ব্যবসায়ীরা আমাদের সমর্থন দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বারে আমরা এমন প্রতিনিধি পাঠাতে চাচ্ছি যারা রাত-দিন আপনাদের সহযোগিতা করবেন। আপনাদের সবার সহযোগিতায় আমরা প্রথম যেই কর্মসূচি দিয়েছি তাতে আমরা প্রাথমিকভাবে সফল হয়েছি। এখন দ্বিতীয় পর্যায়ে সব অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে আমরা অনুরোধ করব, কোন কোন দিকে তাদের ট্যারিফ বেশি ধরা হয়েছে তা আমাদের তালিকাভুক্ত করে দেবেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি ও ফোরাম সভাপতি এমএ সালাম বলেন, চিটাগাং চেম্বারে গতিশীল নেতৃত্ব দরকার। বিভিন্ন সেক্টর থেকে প্রতিনিধি নিয়ে ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামের প্যানেল দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ নিয়ে এ ফোরাম সোচ্চার ছিল। ২৪ জনের প্যানেল চিটাগাং চেম্বারকে মেরামত করবে। এ নির্বাচনে ৭ হাজার ৭০০ ভোটার। আগামী দুই বছরের মধ্যে ২০-৩০ হাজার ভোটার করতে হবে। মেম্বার ফি ৫ হাজার থেকে কমিয়ে ২-১ হাজারে নামাতে হবে। এ সরকারের আমলে বিজিএমইএতে সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। আশা করি চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচনও সুন্দর হবে।
চিটাগাং চেম্বারের সাবেক সভাপতি সরওয়ার জামাল নিজাম বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বার বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো প্রিমিয়াম চেম্বার। একজন যোগ্য ব্যক্তি সবসময় চেম্বারের নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোতে চট্টগ্রাম চেম্বার যে অবদান রাখে তা গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৫ সালে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যাই। যেসব সরকার আসে তারা বলে চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী। কিন্তু এতে যা দরকার তা কেউ করেনি। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার হলে চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী হবে। ১৫ দিনে জায়গা ঠিক করি। তখন নেত্রী দক্ষিণ কোরিয়া ছিলেন। কবলায় আমার সই আছে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বেগম খালেদা জিয়া করেছেন। চট্টগ্রাম চেম্বারে যোগ্য সভাপতি নির্বাচিত হলে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
প্রধান বক্তা ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামের টিম লিডার মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাইয়ে একটি ওজন স্কেল আছে। দেশের ৩৬টি হাইওয়েতে কোনো স্কেল নেই। আপনারা শুনে লজ্জিত হবেন, খুবই দুঃখজনক, মহাসড়কে একটি স্কেলের জন্য চট্টগ্রাম থেকে মীরসরাইয়ে পাথর-কয়লা যায় না। মোংলা বন্দর থেকে ট্রাকে মীরসরাইয়ের ইকোনমিক জোনে কয়লা-পাথর আসে। তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ দুর্ভোগ আমাদের দিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরীকে সুন্দর, পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ফুটপাত থেকে হকারদের অন্য জায়গায় নিতে হবে। আর কোনো অপশন নেই। আমি জানি না এরা কোন দল করে। সবসময় তারা সরকারি দল করে। এখন তো অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকারের আমলেও তারা ফুটপাত দখল করে আছে। এর জন্য ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মার্কেটের সামনে, দোকানের সামনে ফুটপাতে কাউকে বসতে দেবেন না। নারী, শিশুরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারেন। ব্যবসায়ীদের যে কোনো আন্দোলনে দরকার হলে রাস্তায় বসে যাব আমি।
তিনি আরও বলেন, আপনারা যদি সঙ্গে থাকেন চট্টগ্রামকে হকারমুক্ত করা সম্ভব। প্যাকেজ ভ্যাট সবাই মিলে কথা বললে করা যাবে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের জায়গাটি সরওয়ার জামাল নিজাম সাহেব যখন চেম্বার সভাপতি ছিলেন তখন বেগম খালেদা জিয়া দিয়েছিলেন। বাকি জায়গাটুকু আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী যখন চেম্বার সভাপতি ছিলেন তখন ব্যবস্থা করেছিলেন। দুজনকে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। চিটাগাং চেম্বারের সদস্য ফি ৫ হাজার থেকে নামিয়ে আমি ২ হাজার টাকার নিচে আনার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, আমরা শুধু গলাকাটা ট্যারিফের কথা বলছি, চট্টগ্রাম চেম্বারের ২ হাজার টাকার সদস্য ফি ১০ হাজার টাকা, নবায়ন ৫ হাজার সংস্কার করতে হবে। এখান থেকে যারা নির্বাচিত হয়ে পরিষদে থাকবেন, তাদের আগামীতে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে- এটা বড় বৈষম্য। সবাইকে সদস্য হওয়ার ব্যবস্থাপনা করতে হলে এটা সংস্কার করতে হবে।
তিনি বলেন, ট্যারিফ নিয়ে আন্দোলন মাত্র ১৫ দিনের মাথায় সিএন্ডএফের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ৪ ঘণ্টার কর্মবিরতির ওপর ৪টি খাতে ট্যারিফ স্থগিত করা হয়েছে। ৪১ শতাংশ ট্যারিফের বিষয়টি সঠিক নয়, আমরা শুনতে পাচ্ছি প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে একটি সংস্কার করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী অল্প দিনের মধ্যে ব্যবসায়ীদের উপদেষ্টার কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। এই নির্বাচনকে অর্থবহ করতে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এসে ভোট দেওয়ার জন্য কাজ করবেন।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মহিউদ্দিন বলেন, ছয় বছর ধরে সবার কাছে গেছি। কিন্তু আমাদের পাশে কাউকে পাইনি। তবে ইউনাইটেড প্যানেলকে পেয়েছি। ওজন স্কেল পরিমার্জন করতে তারা ইস্তেহার দিয়েছেন। তার জন্য তাদের ধন্যবাদ। ওনারা আমাদের যেই কথা দিয়েছেন, আশা করি এ প্যানেলের মাধ্যমে আমরা আমাদের কাজ উদ্ধার করতে পারব।
টেরিবাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর আমরা চেম্বারে ভোট দিতে পারিনি। আমরা চাই এমন একটি চেম্বার যেখানে ব্যবসায়ীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার সুযোগ থাকবে। আশা করি তাদের মাধ্যমে আমরা একটি সাফল্য পাব। আমরা ভ্যাট নিয়ে দীর্ঘ সময় হয়রানির শিকার হয়েছিলাম। ঘুষ দিতে হয়েছে। আজকে আমাদের একটি দাবি, দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানিষ কর্ণফুলী সেতুতে টোল দিচ্ছে। আগে এই টোল বন্ধ করে দিতে হবে।
বিজেএমইএর প্রথম সহসভাপতি নাসিরুদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী চৌধুরী, শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশের পরিচালক সাহেদ সরোয়ার, বিজিএপিএমইএর সভাপতি শহীদুল্লাহ চৌধুরী, বিজিএপিএমইএর উপদেষ্টা লতিফুল রহমান আজিজ, টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির উপদেষ্টা আলহাজ বেলায়েত হোসেন, টায়ার টিউব ডিলার গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান, চট্টগ্রাম বন্দর মেরিন কনট্রাকটর অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি দোস্ত মোহাম্মদ, সেন্ট্রাল প্লাজা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি তুহিনুল আলম টিটু, ফিনলে স্কয়ার ব্যবসায়ী সমিতির মিয়া মো. খালেদ, ব্যবসায়ী নেতা এরফান উদ্দিন খোকন প্রমুখ।
মন্তব্য করুন