

নরসিংদীতে সাংবাদিক ও পুলিশের পর এবার জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে পৌর প্রশাসনের দুজনসহ চারজন আহত হয়েছেন। বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে নরসিংদী বড় বাজার এলাকায় জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকালে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে নরসিংদী সদর হাসপাতালে সংবাদ সংগ্রহের সময় যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিক আইয়ুব খান সরকার এবং গত ৪ অক্টোবর সকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
জেলা প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায়, সড়কে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ জনসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনা করে নরসিংদী পৌরশহরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ গ্রহণ করে জেলা প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে বুধবার দুপুরে নরসিংদী পৌরসভা মোড় থেকে বড়বাজার এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় ফলপট্টিতে অভিযানে গেলে একদল দুর্বৃত্ত ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকে।
এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় নরসিংদী পৌরসভার ভেকুচালক টিপু সুলতান, নিরাপত্তা কর্মী সবুজ মিয়া, ছাত্র প্রতিনিধি রাকিব মিয়াসহ চারজন আহত হন। আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ভেকুচালক আহত টিপু সুলতান বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রশাসকের নির্দেশে বড় বাজার এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে যাই। বাজারে কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও ফলপট্টি এলাকায় গেলে কিছু উচ্ছৃঙ্খল মানুষ স্যারসহ আমাদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। আমি ভেকু নিয়ে সামনে চলে আসার সময় তারা হাতুড়ি ও ইট দিয়ে আমাকে আঘাত করে। এতে আমি গুরুতর আহত হই।
ছাত্র প্রতিনিধি আহত মোহাম্মদ আলী বলেন, নরসিংদী বাজার এলাকায় জেলা প্রশাসনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে আমরা উপস্থিত ছিলাম। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতলসহ আমাদের ওপর একদল দুর্বৃত্ত হামলা চালায়। এতে আমরা চারজন আহত হই।
নরসিংদী বাজার বণিক কমিটির সভাপতি বাবুল সরকার বলেন, জেলা প্রশাসনের অভিযানে ব্যবসায়ীরা কোনো হামলা চালায়নি। এ ঘটনার সঙ্গে কোনো ব্যবসায়ী জড়িত নযন। একদল উচ্ছৃঙ্খল ও দুর্বৃত্ত অভিযানে হামলা চালায়। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি করেছি। আমরা ব্যবসায়ীরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ও নরসিংদী পৌরসভার প্রশাসক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা পৌর এলাকায় নিয়মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতেছি। সড়ক থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে মাইকিং করে সতর্ক করা হয়েছে। বুধবার আমরা পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পৌরসভার সামনে থেকে বাজার পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করছিলাম। আমরা যখন বাজারের ফলপট্টিতে অভিযানে ছিলাম তখন কিছু উচ্ছৃঙ্খল মানুষ আমাদের দিকে তেড়ে এসে হামলা চালায়। এতে আমার পৌরসভার দুজন কর্মচারীসহ চারজন আহত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বলেন, নরসিংদী বাজারের ঘটনার প্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। এ সময় ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন তারা হামলার সঙ্গে জড়িত নন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে। এ হামলার ঘটনায় একটি মামলা দায়েরের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সাংবাদিক ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হলধর দাস বলেন, এ দেশের বেশির ভাগ পুলিশ নিরস্ত্র কিন্তু সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র। বর্তমানে লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার হয় না ও অপরাধীরা ধরা পড়ছে না। যাদের ধরা হচ্ছে তাদের কোনো বিচার হয় না। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে যায়।
তিনি বলেন, সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ ও জেলা প্রশাসন কঠোর হলে হয়তো পরবর্তীতে পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর এ ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটত না। শুধু গ্রেপ্তার করলেই হবে না, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার নিশ্চিত করে সেটা জনগণের সামনে তুলে ধরলে অপরাধীরা ভয় পাবে এবং অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে।
মন্তব্য করুন