রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

শিহাবের মৃত্যুতে এলাকায় শোক, আসামিরা কেউ ধরা পড়েনি

শিহাব আলী। ছবি : সংগৃহীত
শিহাব আলী। ছবি : সংগৃহীত

শিহাব আলীর বয়স ১৭। হাজারো কল্পনা, প্রেম, বন্ধুত্ব, হাসি-আনন্দে ভরে ছিল তার দিনগুলো। কিশোর শিহাব ভালোবেসেছিল এক কিশোরীকে। মনের টানেই গত ২০ অক্টোবর সন্ধ্যায় প্রথমবারের মতো দেখা করতে গিয়েছিল তার সঙ্গে। কয়েক সেকেন্ডের দৃষ্টি বিনিময়, কিছু কথা— এই ক্ষণিক মুহূর্তটাই ছিল কিশোরটির জীবনের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।

কিন্তু সেই মুহূর্তের পরই ওলটপালট হয়ে যায় সবকিছু। প্রেমিকার প্রতিবেশীরা লাঠি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে কিশোর শিহাবের ওপর। বেধড়ক পিটুনিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে। খবর পেয়ে স্বজনরা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান।

সেখানে আইসিইউতে টানা ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে শনিবার (০১ নভেম্বর) নিভে যায় কিশোর শিহাবের জীবন প্রদীপ। রোববার (০২ নভেম্বর) বাদ আসর শত স্বজনের কান্নায় জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার বসন্তপুর গোরস্তানে দাফন সম্পন্ন হয় তার।

শিহাব রাজশাহীর বসন্তপুর এ গ্রামের ক্ষুদ্র মুদি ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান রিপনের ছেলে। দুই বোনের মধ্যে একমাত্র ভাই ছিল সে। চলতি বছর এসএসসি পাস করেছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার দোকানেও কাজ করত। তার এমন মৃত্যুতে পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

মা শারমিন বেগম, বাবা রিপন ও দুই বোন এখন বাকরুদ্ধ। বারবার মায়ের আর্তনাদ ‘তুই একবার আব্বা বলে ডাকলি না রে বাপ, তুই চলে গেলি।’— এ কান্নায় চারপাশের বাতাস ভারী করে তুলছে।

রোববার (০২ নভেম্বর) দুপুরে হাসপাতাল থেকে শিহাবের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে চারপাশে কান্নার রোল পড়ে যায়। বাবা রিপন ছেলের মুখে হাত রেখে বারবার বলছিলেন, ‘তুই একবার চোখ খুলে তাকাস বাপ, একবার।’ এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্যে কেঁদেছে গোটা গ্রাম। ছেলের মৃত্যুর পর বাবা রিপন এখন ন্যায়বিচার চান। বলেন, ‘আমার ছেলেকে যারা মেরেছে, তাদের নাম দিয়ে মামলা করেছি। কিন্তু কেউ গ্রেপ্তার হয় না। তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।’

শিহাবের ওপর হামলার পর গত ২৪ অক্টোবর রাতে রিপন বান্দুড়িয়া এলাকার রতন আলী, কানন, সুজন আলী, ইয়ার উদ্দীন, শরীফ, রাব্বি, হালিম ও কলিমসহ নয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করে গোদাগাড়ী থানায় মামলা করেন। কিন্তু মামলা হওয়ার ৯ দিন পেরিয়ে গেলেও কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। শিহাবের মৃত্যুর পর ওই মামলাটিই হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়েছে।

নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, আসামিদের অবস্থান জানানো হলেও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মাহবুবুর রহমান গুরুত্ব দেননি। তাদের ভাষায়, ‘আসামিরা দিনের পর দিন এলাকায় ঘুরেছে, চা খেয়েছে, রাতেও বাড়িতে থেকেছে। অথচ পুলিশ শুধু আশ্বাস দিয়েছে।’

শিহাবের খালাত ভাই মাসুদ রানা বলেন, ‘কম বয়সের ছেলেটাকে নির্মমভাবে মারা হলো। অথচ পুলিশ বলছে- ‘ধরব ধরব’। আমরা এখন শুধু চাই, ওর হত্যাকারীরা যেন শাস্তি পায়।’

জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আসামিরা পলাতক। বাংলাদেশের যেখানেই তারা লুকাক না কেন, শিগ্‌গিরই তাদের ধরা হবে।’

জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলিম কালবেলাকে বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনো গাফিলতি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

খুলনায় বিএনপি অফিসে গুলি-বোমা হামলা, নিহত ১

ভিউ বাড়াতে রাম দা হাতে ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট শিক্ষকের

বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল ছিল : আমির খসরু

নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমোদনে বিটিসিএ’র উদ্বেগ

ক্লাসিকোর দুঃস্বপ্ন পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়াল বার্সা

সন্দ্বীপে ধানের শীষের প্রচারণায় উপচেপড়া লোকসমাগম

হলান্ডের জোড়া গোলে জয়ে ফিরল ম্যানসিটি

জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিএনপি

আলী রীয়াজের পদত্যাগ দাবি নিউইয়র্ক বিএনপির

‘অর্থ নয়, আত্মতৃপ্তিই চিকিৎসার আসল প্রাপ্তি’

১০

প্রোটিয়াদের হারিয়ে বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলল ভারত

১১

নেত্রকোনা স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

১২

দুটি দল বাংলাদেশের রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র করছে : জুয়েল

১৩

দাঙ্গা-ফ্যাসাদে না জড়াতে কর্মীদের কঠোর নির্দেশনা সেলিমুজ্জামানের 

১৪

ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো অক্ষুণ্ণ রাখার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ডাকসুর প্রতিবাদ

১৫

সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ 

১৬

রাজধানীতে বিশেষ অভিযান, গ্রেপ্তার ১৪

১৭

সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম সংবাদ সম্মেলন

১৮

‘৯০ শতাংশ স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব’

১৯

নাগরিকদের সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে যে বার্তা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ

২০
X