

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সোমবার (০৩ নভেম্বর) জাতীয় সংসদের ২৩৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। ৬৩টি আসনে তারা প্রার্থীর নাম এখনো জানায়নি। এরই মধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে নেতাকর্মীদের একযোগে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে কেন্দ্র থেকে ঐক্যের বার্তা এলেও খুলনা মহানগর বিএনপিতে এখনো দেখা মিলছে না সেই কাঙ্ক্ষিত সংহতির।
দীর্ঘদিনের অভিমান-দ্বন্দ্ব ও নেতৃত্বের টানাপোড়েনে সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও বর্তমান সভাপতি শফিকুল আলম মনার মধ্যে সম্পর্কের বরফ এখনো গলতে শুরু করেনি। ফলে খুলনা-২ আসনের প্রার্থী হয়েও দলীয় কার্যালয়ে না গিয়ে বাইরে থেকেই ঐক্যের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। প্রার্থী হয়ে এখনো অফিসে বসতে পারেনি তিনি।
জানা যায়, প্রার্থী ঘোষণার পরও খুলনা নগর বিএনপির নির্বাচনী মাঠে ঐক্যের বদলে বইছে শীতলতা ও সন্দেহের বাতাস। এমনকি আগামী ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করতে যাচ্ছে মঞ্জু ও মনা অনুসারীরা।
আরও পড়ুন : প্রার্থীকে গুলি, জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিএনপি নেতার
২০২১ সালের ডিসেম্বরে রাজনৈতিক জীবনে ছন্দপতন ঘটে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর। ওই বছর ৯ ডিসেম্বর মহানগর বিএনপির তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয় কেন্দ্র থেকে। কমিটি থেকে বাদ পড়েন মঞ্জু ও তার অনুসারীরা। ১২ ডিসেম্বর দলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ডিসেম্বর শোকজ করা হয় তাকে। পরে ২৫ ডিসেম্বর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয় খুলনার দীর্ঘদিনের বিএনপির এ কান্ডারিকে।
আরও জানা গেছে, ২০২১ সালে কমিটি বিলুপ্তির পর থেকে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে রয়েছেন মহানগর বিএনপির দুপক্ষ। এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন শফিকুল আলম মনা ও শফিকুল আলম তুহিন। অন্য পক্ষে রয়েছেন নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নেতৃত্বে নগর ও থানা বিএনপির সাবেক নেতাকর্মীরা। গত ৩ বছর ধরে কেন্দ্রীয় ও দিবসভিত্তিক কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করে আসছেন তারা।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে ছিলেন মহানগর বিএনপির বর্তমান সভাপতি শফিকুল আলম মনা, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন এবং সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু। এমনকি মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ধারাবাহিক বৈঠকে ঢাকায় আমন্ত্রণ পান মনা ও তুহিন।
তবে, সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর হাতেই ধানের শীষ প্রতীক তুলে দিয়েছেন তারেক রহমান। সেই থেকে উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে মঞ্জু শিবিরে।
খুলনা মহানগর বিএনপির বর্তমান সভাপতি শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটাই আমাদের সিদ্ধান্ত। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করব।’
প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তাকে ফোন দেইনি। তিনিও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।’
এদিকে খুলনা-২ আসনে ধানের শীষের কান্ডারি নজরুল ইসলাম মঞ্জু চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এখনও নিজ বাসায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কালবেলাকে তিনি বলেন, ‘শারীরিকভাবে এখনও অনেক অসুস্থবোধ করায় সবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। বাইরেও বের হতে পারছি না। বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল খুলনায় আসলে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসার কথা রয়েছে। শারীরিক সুস্থতার ওপর অনেককিছু নির্ভর করছে।’
সোনাাডাঙ্গা থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদ বলেন, ‘মঞ্জু ভাই এখনও অসুস্থ থাকায় তেমনভাবে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়নি। আশা করি, দ্রুত ভাই সুস্থ হলে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ শুরু করা হবে ‘
অফিসে যেতে পেরেছেন কিনা জানতে চাইলে মুরাদ বলেন, ‘মঞ্জু ভাই প্রার্থী হয়ে এখনো অফিসে বসতে পারেনি। যেহেতু আমরা এখন কোনো কমিটিতে নেই সবকিছু একটা প্রক্রিয়ার ব্যাপার। তবে আশা করি, দ্রুত সব জটিলতার অবসান ঘটবে।’
মন্তব্য করুন