

চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার মধ্যবর্তী ধনাগোদা নদীর প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় বাঁশের বেড়া ও জাগ ফেলে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছেন বেশকিছু স্থানীয় প্রভাবশালী। এতে ডিমওয়ালা দেশি মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নির্বিচারে নিধন হচ্ছে। পাশাপাশি নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ও নৌযান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) ধনাগোদা নদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীর দুই পাড় ও মাঝ বরাবর আড়াআড়িভাবে বাঁশের বিশাল বেড়া বসিয়ে তাতে মশারির মতো সূক্ষ্ম জাল টানানো হয়েছে। পানির উপরিভাগ থেকে নদীর তলদেশ পর্যন্ত টানা এই জালে আটকা পড়ছে পুঁটি, টেংরা, বেলে, রুই, কাতলা, আইড়সহ সব ধরনের দেশি মাছ। এসব জালে ডিমওয়ালা মা-মাছ পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তারা বছরের পর বছর ধরে এভাবে মাছ ধরে আসছে। তাদের দাবি, এ অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ না হলে নদীর দেশি মাছ পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে।
মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলা মৎস্য দপ্তর ও স্থানীয় সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, দুই উপজেলার প্রায় ৩০টি পয়েন্টে নদীতে বাঁশের বেড়া বসানো হয়েছে। মতলব উত্তরের কালীপুর, কালীরবাজার, দুর্গাপুর, বাংলাবাজার, আমুয়াকান্দা, লক্ষ্মীপুর, নন্দলালপুর, ঠেটালিয়া, আমিরাবাদ, বিনন্দপুর, এনায়েতনগরসহ বহু এলাকায় এভাবে জাগ দেওয়া রয়েছে। মতলব দক্ষিণের চরমুকুন্দী, কাজির বাজার, উদ্দমদী, সাহাপুর, উত্তর বাইশপুর, নায়েরগাঁও, বাইশপুরসহ বহু স্থানে ২৫-৩০টির বেশি করে বেড়া বসানো হয়েছে।
এর মধ্যে কালীপুর ৪৫টি, সিপাইকান্দি ৩০টি, আমিরাবাদ ৫০টি, নন্দলালপুর ২৫টি, কালীরবাজার ৩০টি, নায়েরগাঁও ৪৫টি, বাইশপুর ৩০টি, মোট বেড়ার সংখ্যা ৬০০-এরও বেশি।
একই সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি বেড়া থেকে বছরে ২ টন করে মাছ নিধন হয়। সে হিসাবে বছরে ১২০০ টনেরও বেশি দেশি মাছ ধ্বংস হচ্ছে, যার বাজারমূল্য ২০-৩০ কোটি টাকা।
বাঁশের বেড়া ও জাগের কারণে শ্রীরায়ের চর ব্রিজ থেকে কালীরবাজার পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটারজুড়ে তীব্র কচুরিপানা জমে গেছে। এতে নৌকা চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। মতলব খেয়াঘাটে নৌযান পারাপার করতে মাঝি-যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
রফিক নামে একজন মাঝি বলেন, নৌকা ঠেলে নিয়ে যেতে হয়। অনেক সময় ১০ মিনিটের পথ পার হতে এক ঘণ্টা লেগে যায়।
ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান গোলাম নবী খোকন বলেন, এভাবে মাছ নিধন চলতে থাকলে দেশি মাছ একসময় বিলুপ্ত হবে। নদী ও পরিবেশ রক্ষায় এগুলো বন্ধ করা আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব।
মতলব উত্তর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, ১৯৫০ সালের মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী নদীতে বেড়া বা বাঁধ দিয়ে মাছ ধরা দণ্ডনীয় অপরাধ।
তিনি জানান, গত জুলাই-আগস্টে আমরা কয়েক দফা অভিযান পরিচালনা করেছি। ইলিশ রক্ষা অভিযানের কারণে কিছুদিন বিরতি ছিল। এখন কয়েক দিনের মধ্যেই আবার বড় ধরনের অভিযান চালানো হবে।
তিনি আরও বলেন, চলতি বছরজুড়েই নদী থেকে অবৈধ বেড়া ও জাল অপসারণে আমরা নিয়মিত অভিযান করেছি। নতুন করে আবারও বড় আকারের উচ্ছেদ অভিযান হাতে নেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন