

প্রযুক্তি ব্যবহার করে ‘সামুদ্রিক আগাছা’ বা ‘সি উইড’ থেকে উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদনে সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) একটি গবেষণা।
গবেষকরা জানিয়েছেন, শৈবাল থেকে সফলভাবে রঞ্জক পদার্থ, অ্যাগার (জেল-উৎপাদক উপাদান) ও সেলুলোজ নিষ্কাশন করেছেন তারা। এ উদ্ভাবন বাংলাদেশের ‘ব্লু ইকোনমিকে’ আরও শক্তিশালী ও টেকসই করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় কৃষি অনুষদের সম্মেলন কক্ষে ‘সামুদ্রিক শৈবালভিত্তিক বায়োরিফাইনারি প্রযুক্তির মাধ্যমে উচ্চমূল্যের পণ্য উন্নয়ন’ শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পের সমাপনী কর্মশালায় এ তথ্য জানান গবেষণা দলের প্রধান বাকৃবির প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হান্নান।
এতে সহযোগী গবেষক ছিলেন পবিপ্রবির ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল হক। এ গবেষণায় সহযোগিতা করেছে, প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করেছে, সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প (এসসিএমএফপি)।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষণায় গ্র্যাসিলারিয়া টেনুইস্টিপিটাটা নামের সামুদ্রিক শৈবাল ব্যবহার করা হয়েছে। আর এ শৈবাল থেকে রঞ্জক পদার্থ, অ্যাগার (জেল-উৎপাদক উপাদান) ও সেলুলোজ সফলভাবে নিষ্কাশন করা হয়েছে। বায়োরিফাইনারি প্রযুক্তির বিশেষত্ব হলো, শৈবালের প্রতিটি অংশই ব্যবহৃত হয়; ফলে বর্জ্য তৈরি হয় খুব কম।
গবেষক ড. আব্দুল হান্নান বলেন, ‘প্রথম ধাপে জলীয় পদ্ধতিতে শৈবাল থেকে ফাইকোবিলিপ্রোটিন রঞ্জক সংগ্রহ করা হয়। এতে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী গুণ রয়েছে। এই প্রাকৃতিক রঞ্জক দইসহ বিভিন্ন খাদ্যে ব্যবহার করা যায় এবং স্বাদ, গন্ধ, রং ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়। এরপর বাকি থাকা অংশ থেকে অ্যাগার উৎপাদিত হয়েছে। এর উৎপাদন মাত্রা পাওয়া গেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। শেষে যে অংশটি অবশিষ্ট থাকে, তা থেকে সেলুলোজ সংগ্রহ করে অ্যাগার ও জিলেটিনের সঙ্গে মিশিয়ে একটি শক্তিশালী, অতিবেগুনি রশ্মি প্রতিরোধী ও জৈব-বিয়োজ্য বায়োফিল্ম তৈরি করা হয়েছে। এই বায়োফিল্ম প্যাকেজিং ও বায়োমেটেরিয়াল শিল্পে ব্যবহারের উপযোগী।’
সমাপনী কর্মশালায় প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. শায়লা শারমিনের সভাপতিত্বে ও প্রভাষক খাদিজা খাতুনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এসসিএমএফপি প্রকল্পের উপপরিচালক মো. মেজানুর রহমান, কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জি এম মুজিবুর রহমান এবং বাকৃবি রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাম্মাদুর রহমান।
উপাচার্য তার বক্তব্যে বলেন, সামুদ্রিক সম্পদের সুষম ও বৈজ্ঞানিক ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করা সম্ভব। বাকৃবিতে পরিচালিত এ গবেষণা সমুদ্রসম্পদের মূল্যায়ন ও ব্যবহারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এনে দেবে।
মন্তব্য করুন