ঝিনাইদহ ব্যুরো
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:১১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৭ সদস্যের অনাস্থা

ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে ৭ সদস্যের অনাস্থা। ছবি : কালবেলা
ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে ৭ সদস্যের অনাস্থা। ছবি : কালবেলা

ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ড. এম হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম ও চরম স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। তা ছাড়া চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সরকারি এই দপ্তরটি নিজের এনজিও দপ্তরে পরিণত করারও অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেস ক্লাবে জেলা পরিষদের নির্বাচিত ৮ সদস্যের মধ্যে ৭ জন সদস্য যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তুলে তার প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেন। এ ছাড়া শৈলকুপা উপজেলা থেকে নির্বাচিত সদস্য মুক্তার মৃধা উপস্থিত না থাকলেও মোবাইল ফোনে এই সংবাদ সম্মেলনের সাথে একাত্ততা প্রকাশ করেছেন বলেও জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোরাদিম মোস্তাকিম মনির। এ সময় পরিষেদের হরিণাকুণ্ডু উপজেলা থেকে নির্বাচিত সদস্য আলাউদ্দীন, কালীগঞ্জ উপজেলা থেকে নির্বাচিত সদস্য জসিম উদ্দীন সেলিম, মহেশপুর উপজেলা থেকে নির্বাচিত লিটন মিয়া, কোটচাঁদপুর উপজেলা থেকে নির্বাচিত সদস্য রাজিবুল কবীর, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য আনোয়ারা খাতুন ও অনীতা বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ সৃজনী এনজিওর প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাজমুল হুসাইন ও হিসাব রক্ষক অর্জুন কুমারকে জেলা পরিষদের অফিসে আলাদা রুমে বসিয়ে ভুয়া ও কল্পিত প্রকল্প বানিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন গ্রহণ ছাড়াই একই প্রকল্প বারবার দেখিয়ে টাকা লোপাট করছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ড. হারুন অর রশিদ। শহরের হামদহ মনুমেন্টের পাশে একক সিদ্ধান্তে অবৈধভাবে রাস্তার পাশে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না নিয়ে মার্কেট নির্মাণ করে অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। ধোপাঘাটা ব্রিজের পূর্ব পাশে মার্কেট নির্মাণ ও মাটি ভরাটের প্রকল্প দেখিয়ে জেলা পরিষদের ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

২০২২-২৩ অর্থবছরে এডিপি এবং রাজস্ব থেকে দুস্থ মহিলাদের সেলাই মেশিন দেওয়ার কথা বলে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা ও গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের বাইসাইকেল কেনার নামে প্রায় ১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। জেলা পরিষদের নামাজ ঘর, অফিস, ডাকবাংলো, ছাদ বাগান ও অফিস পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা দেখিয়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই প্রায় ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

তা ছাড়া চেয়ারম্যান তার নিজ প্রতিষ্ঠান সৃজনি প্রিন্টার্স ও তাজ ফিলিং স্টেশন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত মালামাল ক্রয় দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন।

লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, জেলা পরিষদ অফিস চত্বরে ০৮-১০ লাখ টাকার কাঠ নামমাত্র মূল্য দেখিয়ে রাতের আঁধারে পাচার করা হয়েছে। এ ছাড়া গত জানুয়ারি মাসে দুস্থদের মাঝে বিতরণের জন্য ৬ হাজার পিস কম্বল ক্রয় দেখিয়ে ১৫ লাখ টাকা পকেটস্থ করেছেন। এভাবে তিনি বিভিন্ন খাত থেকে লাখ লাখ টাকা লুটপাট করছেন বলে অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কে বিগত পরিষদের সময়কার টেন্ডারকৃত গাছের ঠিকাদারদের জিম্মি করে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রণালয়ের আদেশ উপেক্ষা করে খাল ও পুকুর একক সিদ্ধান্তে ইজারা দিয়ে সরকারি আইন ভঙ্গ করেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি কোনো সদস্যদের মতামত নেন না। বরং সদস্যদের সাদা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নিয়ে নিজের ইচ্ছামতো রেজুলেশন তৈরি করে রাজস্ব তহবিল থেকে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ এবং একই প্রকল্প বারবার দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন।

এদিকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের এই দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ জেলার চারজন সংসদ সদস্য যৌথ স্বাক্ষরে গত ৯ মে স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রী তাজুল ইসলামের কাছে অভিযোগ করেন। মন্ত্রী বিষয়টি আমলে নিয়ে সচিবকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সংসদ সদস্যরা অভিযোগপত্রে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ নিজের খেয়ালখুশি মতো প্রকল্প গ্রহণ করেন, উপদেষ্টা হিসেবে এমপিদের মতামত গ্রহণ করেন না বলে উল্লেখ করেন।

তা ছাড়া বিগত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দেওয়া নিয়োগকৃত কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করছেন, যা অমানবিক। ঝিনাইদহ যশোর সড়কের কড়ই ও মেহগনি গাছ নামে-বেনামে টেন্ডার করে নিজের নামে নিচ্ছেন। এ অবস্থায় পরিষদের সব সদস্য তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করে তার অপসারণের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন দাখিল করেছেন।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, আমি মাত্র ৬ মাস দায়িত্ব পালন করছি। এ অবস্থায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীনভাবে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে। এ ছাড়া প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগের উত্তর দিবেনও বলে জানান।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মহাসড়কে গাছ ফেলে বিক্ষোভ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন

গাজায় রুয়ান্ডার ছায়া, কী হতে চলেছে

আংশিক সূর্যগ্রহণের বিষয়ে জানাল আইএসপিআর

সিলেটে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে না : পুলিশ কমিশনার

মায়ের মৃত্যুর পর ১৪ বছর ধরে শিকলবন্দি লিটন

এক সপ্তাহের মধ্যে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে ব্রিটেন

শুক্রবার ৮ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

কাদের সঙ্গে জোট করবে জমিয়ত, জানালেন মহাসচিব

কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবি

১০

আফগানিস্তান সফরে গেলেন মামুনুল হকসহ ৭ আলেম

১১

১১ বছর পর ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে স্পেন

১২

সৌদি-পাকিস্তানের চুক্তি নিয়ে আসিফ নজরুলের প্রতিক্রিয়া

১৩

একদিনে ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু

১৪

প্রকাশিত হলো আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী কোচ স্কালোনির আত্মজীবনী

১৫

শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে চার বিভাগে বর্ষণের শঙ্কা, গরম কমবে না

১৬

বিজিবিতে চাকরি পেলেন সেই ফেলানীর ভাই

১৭

পিজ্জা’র একপাশে ভারত একপাশে পাকিস্তান, আছে বিশেষ বৈশিষ্ট্যও

১৮

৯ দিনের সরকারি সফরে পাকিস্তান গেলেন স্বরাষ্ট্র সচিব

১৯

মুশফিকের সামনে ঐতিহাসিক মাইলফলক

২০
X