শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২
ঝিনাইদহ ব্যুরো
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:১১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৭ সদস্যের অনাস্থা

ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে ৭ সদস্যের অনাস্থা। ছবি : কালবেলা
ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে ৭ সদস্যের অনাস্থা। ছবি : কালবেলা

ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ড. এম হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম ও চরম স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। তা ছাড়া চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সরকারি এই দপ্তরটি নিজের এনজিও দপ্তরে পরিণত করারও অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেস ক্লাবে জেলা পরিষদের নির্বাচিত ৮ সদস্যের মধ্যে ৭ জন সদস্য যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তুলে তার প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেন। এ ছাড়া শৈলকুপা উপজেলা থেকে নির্বাচিত সদস্য মুক্তার মৃধা উপস্থিত না থাকলেও মোবাইল ফোনে এই সংবাদ সম্মেলনের সাথে একাত্ততা প্রকাশ করেছেন বলেও জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোরাদিম মোস্তাকিম মনির। এ সময় পরিষেদের হরিণাকুণ্ডু উপজেলা থেকে নির্বাচিত সদস্য আলাউদ্দীন, কালীগঞ্জ উপজেলা থেকে নির্বাচিত সদস্য জসিম উদ্দীন সেলিম, মহেশপুর উপজেলা থেকে নির্বাচিত লিটন মিয়া, কোটচাঁদপুর উপজেলা থেকে নির্বাচিত সদস্য রাজিবুল কবীর, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য আনোয়ারা খাতুন ও অনীতা বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ সৃজনী এনজিওর প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাজমুল হুসাইন ও হিসাব রক্ষক অর্জুন কুমারকে জেলা পরিষদের অফিসে আলাদা রুমে বসিয়ে ভুয়া ও কল্পিত প্রকল্প বানিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন গ্রহণ ছাড়াই একই প্রকল্প বারবার দেখিয়ে টাকা লোপাট করছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ড. হারুন অর রশিদ। শহরের হামদহ মনুমেন্টের পাশে একক সিদ্ধান্তে অবৈধভাবে রাস্তার পাশে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না নিয়ে মার্কেট নির্মাণ করে অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। ধোপাঘাটা ব্রিজের পূর্ব পাশে মার্কেট নির্মাণ ও মাটি ভরাটের প্রকল্প দেখিয়ে জেলা পরিষদের ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

২০২২-২৩ অর্থবছরে এডিপি এবং রাজস্ব থেকে দুস্থ মহিলাদের সেলাই মেশিন দেওয়ার কথা বলে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা ও গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের বাইসাইকেল কেনার নামে প্রায় ১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। জেলা পরিষদের নামাজ ঘর, অফিস, ডাকবাংলো, ছাদ বাগান ও অফিস পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা দেখিয়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই প্রায় ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

তা ছাড়া চেয়ারম্যান তার নিজ প্রতিষ্ঠান সৃজনি প্রিন্টার্স ও তাজ ফিলিং স্টেশন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত মালামাল ক্রয় দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন।

লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, জেলা পরিষদ অফিস চত্বরে ০৮-১০ লাখ টাকার কাঠ নামমাত্র মূল্য দেখিয়ে রাতের আঁধারে পাচার করা হয়েছে। এ ছাড়া গত জানুয়ারি মাসে দুস্থদের মাঝে বিতরণের জন্য ৬ হাজার পিস কম্বল ক্রয় দেখিয়ে ১৫ লাখ টাকা পকেটস্থ করেছেন। এভাবে তিনি বিভিন্ন খাত থেকে লাখ লাখ টাকা লুটপাট করছেন বলে অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কে বিগত পরিষদের সময়কার টেন্ডারকৃত গাছের ঠিকাদারদের জিম্মি করে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রণালয়ের আদেশ উপেক্ষা করে খাল ও পুকুর একক সিদ্ধান্তে ইজারা দিয়ে সরকারি আইন ভঙ্গ করেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি কোনো সদস্যদের মতামত নেন না। বরং সদস্যদের সাদা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নিয়ে নিজের ইচ্ছামতো রেজুলেশন তৈরি করে রাজস্ব তহবিল থেকে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ এবং একই প্রকল্প বারবার দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন।

এদিকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের এই দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ জেলার চারজন সংসদ সদস্য যৌথ স্বাক্ষরে গত ৯ মে স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রী তাজুল ইসলামের কাছে অভিযোগ করেন। মন্ত্রী বিষয়টি আমলে নিয়ে সচিবকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সংসদ সদস্যরা অভিযোগপত্রে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ নিজের খেয়ালখুশি মতো প্রকল্প গ্রহণ করেন, উপদেষ্টা হিসেবে এমপিদের মতামত গ্রহণ করেন না বলে উল্লেখ করেন।

তা ছাড়া বিগত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দেওয়া নিয়োগকৃত কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করছেন, যা অমানবিক। ঝিনাইদহ যশোর সড়কের কড়ই ও মেহগনি গাছ নামে-বেনামে টেন্ডার করে নিজের নামে নিচ্ছেন। এ অবস্থায় পরিষদের সব সদস্য তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করে তার অপসারণের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন দাখিল করেছেন।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, আমি মাত্র ৬ মাস দায়িত্ব পালন করছি। এ অবস্থায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীনভাবে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে। এ ছাড়া প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগের উত্তর দিবেনও বলে জানান।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পদত্যাগের বিষয়টি সঠিক নয়’

নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের সেমিতে ভারত

সুপ্রিম কোর্টের হাতে যাচ্ছে আইন মন্ত্রণালয়ের যেসব ক্ষমতা

থাইল্যান্ড পরীক্ষায় নামছে ঋতু-আফিদারা

রিশাদের ঝুলিতে দুই রেকর্ড

ভাইফোঁটায় ঘরে ঘরে ভ্রাতৃস্নেহের আনন্দ

হাসিনা সরকারের কিছু প্রাথমিক ‘ভুল’ ছিল: জয়

কক্সবাজারে অসুস্থ ঘোড়াদের চিকিৎসা দিয়েছে অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন

অধিগ্রহণ হচ্ছে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের জমি

পেশাগত দায়িত্ব পালনে যাওয়ার পথে সাংবাদিকের ওপর হামলা

১০

বাংলামোটরে ৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার চাকরিপ্রত্যাশীদের সড়ক অবরোধ

১১

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সভা

১২

বিএনপি-জামায়াতের অভিযোগ যেসব উপদেষ্টার নিয়ে

১৩

রাবি চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগে শাটডাউন, চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন

১৪

ফের লঘুচাপের আভাস, বৃষ্টি নিয়ে নতুন বার্তা

১৫

‘নজরুলের সাহিত্যকে প্রচলিত মাপকাঠিতে বিচার করা যায় না’

১৬

ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন, চালকের সাহসিকতায় বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা

১৭

জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন বিগত এমপি : কাদের গণি

১৮

নতুন উপজেলায় সংযোজনের প্রস্তাব, ফটিকছড়িতে সড়ক অবরোধ

১৯

‘বিএনপির প্রকৃত কর্মী আরেক কর্মীকে হুমকি দিতে পারে না’

২০
X