মেহেরপুরে লাভের আশায় আগাম বাঁধাকপি চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছে পাঁচ শতাধিক চাষি। ঘরোয়া ভেজাল বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন চাষিরা। চাষিদের অভিযোগ জেবিটি সিডসের রাজাসান বাঁধাকপির বীজে শুধু গাছ বড় হচ্ছে, অথচ সময় পেরিয়ে গেলেও ফলনের দেখা নেই।
এদিকে ফলন না হওয়ায় উপড়ে ফেলা হচ্ছে জমির বাঁধাকপি। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তার।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার সবজি গ্রামখ্যাত চকশ্যামনগর গ্রামের বাঁধাকপি চাষ করেন চা ক্রেতা নাজের আলী। অন্যের দুই বিঘা জমি লিজ নিয়ে ৬০ হাজার টাকা খরচ করে আগাম জাতের বাঁধাকপি চাষ করেছেন তিনি। তবে ক্ষেতে চারা গজালেও কোনো পাতা বাঁধেনি। তার আশা ছিল ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা আয় করবেন। তবে সেই আশা পূরণ হয়নি তার। তার মতে জেলার বিভিন্ন এলাকার পাঁচ শতাধিক চাষি এমন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
নাজের আলী বলেন, স্থানীয় বাজার থেকে জেবিটি সিডসের সরবরাহকৃত রাজাসান বীজ ব্যবহার করা হয়। বীজ থেকে গাছ জন্মালেও এখন পাতা বাঁধছে না। অন্যান্য কোম্পানির দেওয়া বীজ বোপণ করে তারা বাঁধাকপি বাজারে তুলেছেন অথচ জেবিটি কোম্পানির রাজাসান কপি আজও পাতা বাঁধেনি। একেকটি গাছের ৩ থেকে ৪টি ডগা গজিয়েছে। আবার অনেকটা পাতা কোঁকড়ানো। সার দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বিঘাপ্রতি ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এ বাঁধাকপি চাষে।
বীজ প্রত্যয়ন অফিসার রঞ্জন কুমার প্রামানিক বলেন, কয়েকদিন আগে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে তদন্তের কিছু প্রতিবেদন কৃষি কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে। এর আগেও রাজাসান বাঁধাকপি চাষ করতে গিয়ে শত শত চাষি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এই জাতের বীজ আমদানির জন্য আমরা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি। একটি কোম্পানির লাইসেন্সও বাতিল করা হয়েছে। তবে মেহেরপুরে আগাম বাঁধাকপি চাষের ভালো চাহিদা আছে তাই ওই কোম্পানির মালিক ঢাকায় থেকে বিভিন্ন যোগসাজশ করে ওই এ ধরণের বীজ এই অঞ্চলে আবার বিক্রি করছে।
তিনি আরও বলেন, কৃষি অফিসারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া চাষিরা কোথার থেকে এই বীজগুলো নিয়েছে তা জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া চাষিদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শীতের আগাম সবজি হিসেবে এ অঞ্চলে সাড়ে ১২০০ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপির চাষ করা হয়। তবে এখন বাঁধা কপির ফলন বিপর্যয় ঘটেছে। বীজ কোম্পানির লোকজন নিম্নমানের বীজ সরবরাহ করায় কপির পাতা বাঁধেনি। নিয়ম অনুযায়ী ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে পাতা বাঁধার কথা।
মন্তব্য করুন