শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলনের ভুয়া নোটিশ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জনতা ব্যাংক ভেদরগঞ্জ শাখার সিনিয়র অফিসার (RC) সুব্রত কুমার মন্ডলের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরভাগা ইউনিয়নের মোল্লাকান্দি এলাকার মৃত রহমালী মোল্লার ছেলে শাজাহান মোল্লা ২০১২ সালে ১ বছরের জন্য জনতা ব্যাংক লি. ভেদরগঞ্জ শাখা থেকে শস্য কৃষি লোন বাবদ ৪০,০০০ টাকা লোন নিয়েছেন। কিন্তু বিগত ১১ বছরে সেই পরিশোধ না করায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে তার কাছে একটি নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে উল্লেখ করা হয়, তার নেওয়া ৪০,০০০ হাজার টাকার লোনটি বেড়ে ৮০,০০০ টাকা হয়েছে। সেটি পরিশোধের জন্য সময় ১৫ দিন। তবে বিপত্তি বাধে নোটিশের শাখা ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক বা ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর না থাকায়।
পরবর্তী সেটি নিয়ে জনতা ব্যাংক ভেদরগঞ্জ শাখায় আসলে নোটিশটি ভুয়া বলে জানা যায়। শাজাহান মোল্লা ছাড়াও একাধিক ব্যাক্তি এই ধরনের ভুয়া নোটিশ পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নোটিশ পাওয়ার বিষয়ে শাজাহান মোল্লা বলেন, ‘আমি জনতা ব্যাংক ভেদরগঞ্জ শাখা থেকে ২০১২ সালে কৃষি লোন বাবদ ৬,০০০ টাকা উত্তোলন করি। কিন্তু মোস্তফা নামে এক লোক একটি নোটিশটি দিয়ে বলেন আমি ৪০,০০০ টাকা লোন নিয়েছি। জনতা ব্যাংক ভেদরগঞ্জ শাখার সিনিয়র অফিসার সুব্রত কুমার মন্ডল নোটিশটি আমাকে পাঠিয়েছেন বলে জানান মোস্তফা।’
শাজাহান মোল্লা আরও বলেন, ‘মোস্তফা আমাকে জানিয়েছেন, জনতা ব্যাংক আমার কাছে ৮০,০০০ টাকা পাবে। মোস্তফা বলেন, আপনি আমাকে ৬০,০০০ টাকা দিয়ে দেন, আমি সুব্রত কুমার মন্ডল স্যারের কাছে জমা দিয়ে দেব। বাকি ২০,০০০ টাকা দেওয়া লাগবে না। নোটিশে স্বাক্ষর না থাকায় আমার সন্দেহ হলে আমি ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারি এটা ভুয়া নোটিশ। তবে এর আগের দিন মোস্তফা ও সুব্রত কুমার মন্ডল আমার বাসায় গিয়েছিলেন। তাই আমি প্রথমে বিশ্বাস করেছিলাম।’
নোটিশ দেওয়ার বিষয় মোস্তফা বলেন, ‘জনতা ব্যাংক ভেদরগঞ্জ শাখার সিনিয়র অফিসার সুব্রত কুমার মন্ডল আমাকে নোটিশটি দিয়ে টাকা উত্তোলন করে তাকে দিতে বলেছেন। তাই আমি নোটিশ দিয়েছি। তিনি আমাকে না দিলে আমি কী অফিসে গিয়ে আনতে পারি। তিনি আমাকে পাঠিয়েছে তাই দিয়েছি।’
এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক লি. ভেদরগঞ্জ শাখার সিনিয়র অফিসার সুব্রত কুমার মন্ডল বলেন, ‘মোস্তফা এক সময় আমাদের ব্যাংকে চাকরি করতেন। তাই তিনি গ্রাহককে দেওয়ার জন্য আমার কাছে নোটিশটি চাইলে আমি তাকে দিয়ে দেই। তবে নোটিশটি দেওয়া আমার ঠিক হয়নি। আমি আমার কতৃপক্ষকে না জানিয়ে তাকে এটি দিয়েছিলাম। কাজটা আমার ভুল হয়েছে। টাকা উত্তোলনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। নিউজ করার দরকার নেই আপনি আমার সাথে দেখা কইরেন।’
ভেদরগঞ্জ উপজেলা জনতা ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক সুমন আহমেদ জানান, ‘নোটিশ দেওয়ার বিষয় আমার জানা নেই। ওই নোটিশটি আমাদের ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। আমরা গ্রাহকদের সবসময় পাওনা টাকা উত্তোলনে লাল নোটিশ দিয়ে থাকি। আমাদের নোটিশের নিচে শাখা ব্যবস্থাপক অথবা ইউএনওর স্বাক্ষর থাকবে। এই ভুয়া নোটিশের বিষয়ে যদি আমাদের অফিসের কেউ জড়িত থাকেন তবে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।’
ভেদরগঞ্জ উপজেলার ইউএনও আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘বিষয়টি মৌখিকভাবে জানতে পেরেছি। গ্রাহকদের কখনো এই ধরনের নোটিশ দেওয়া হয় না। টাকা উত্তলনের ক্ষেত্রে আমরা সবসময় লাল নোটিশ দিয়ে থাকি। এ বিষয়ে শাখা ব্যবস্থাপকে জানানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে কেউ জাল নোটিশ নিয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মন্তব্য করুন