স্মরণকালের বৃষ্টিপাতে রাজশাহীর পুরো শহর জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। শহরের অনেক রাস্তাঘাটে কোথাও কোমর পানি, আবার কোথাও হাঁটু পানি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য- প্রবল বর্ষণে রাজশাহীর রাস্তায় পথচারীদের পারাপারে ব্যবহার হচ্ছে নৌকার। অতি ভারী বর্ষণে রাজশাহী শহরের অনেক পুকুর-খাল প্লাবিত হয়েছে। এসব খাল ও পুকুরে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে বৃষ্টির পানিতে। সেসব মাছ ধরতে নগরীর রাস্তায়- পাশের খালগুলোতে জাল ফেলছেন অনেকেই। ধরা পড়ছে রুই, কাতলা, টেংরা, কৈ মাছ, তেলাপিয়া, জিওল ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজশাহী মহানগরে বুধপাড়া এলাকায় খেয়া জাল দিয়ে কয়েকজনকে মাছ ধরতে দেখা গেছে। তারা জানান, বৃষ্টিতে ভিজে সকাল থেকে তারা মাছ ধরছেন। অপরদিকে ১৬১ মিলিমিটারের অতি ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় নগরীর বেশকিছু এলাকার সড়কে পানি জমে গেছে।
রাজশাহীতে হঠাৎ অতিভারী বৃষ্টির কারণে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর। টানা বৃষ্টিতে রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নগরবাসী।
জলাবদ্ধতায় যানচলাচল না করতে পারলেও রাস্তায় চলছে নৌকা। নগরীর বর্ণালীর মোড়ের পিছনের রাস্তায় অনেক বেশি পানি হওয়ায় সেখানে ব্যবস্থা করা হয়েছে নৌকার।
রাজশাহী রয়েল কোচিং সেন্টারের পরিচালক মো. মাসুদ করিম বলেন, ‘বর্ণালীর পেছনের রাস্তাটি শহরের অন্য রাস্তাগুলোর চেয়ে দেড়-দুই ফুট নিচু। আর সেখানে আমাদের কোচিং সেন্টারটি অবস্থিত। একটু বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। এর আগেও একদিন ভারী বর্ষণ হয়েছিল। তারপরই কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের যাতে ভোগান্তি না হয় সেজন্য এই নৌকাটি ক্রয় করেছিলাম। আজ সারাদিন প্রায় ৬০০-৭০০ জনকে আমরা এভাবে নৌকায় পার করেছি।’
এদিকে ভারী বর্ষণের কারণে নগরীর কিছু এলাকার পুকুর তলিয়ে যাওয়ায় মাছ পুকুর থেকে বেরিয়ে গেছে। ফলে নগরীর বেশ কিছু এলাকায় জনগণকে মাছ মারতেও দেখা গেছে।
নগরীর বুধপাড়া এলাকার বাসিন্দা মনি মিয়া বলেন, আমাদের এই খাল দিয়ে তালাইমারী, কাজলা, বিনোদপুর, মির্জাপুর, ধরমপুর এলাকার পানি নামে। অন্যদিকে নতুন বুধপাড়া, পশ্চিম বুধপাড়া, মেহেরচন্ডি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), রাবির স্টেশন এলাকার পানি নামে। ফলে ওই এলাকার ছোট-বড় পুকুর ও ডোবাগুলো বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়ে মাছগুলো খালে ঢুকে গেছে। সকাল থেকে অনেকেই এসে মাছ ধরছে।
খেয়া জাল দিয়ে মাছ ধরতে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, সকালের দিকে ভালো মাছ পাচ্ছিলাম। এখানে তিনজন আলাদা আলাদা জালে মাছ ধরেছি। সবাই আড়াই থেকে তিন কেজি করে মাছ পেয়েছে। কেউ কেউ আবার বিক্রিও করেছে। অনেকদিন পরে এমনভাবে মাছ ধরলাম। পানি থাকলে এমনভাবে বেশ কয়েকদিন মাছ পাওয়া যাবে।
জাল পেতে মাছ ধরছেন শামসুল ইসলাম। তিনি পেয়েছেন জিওল, টেংরা, কই মাছ। তিনি বলেন, পানি ঘোলা হলে তার জালে বেশি মাছ ধরা পড়ে। এই জালে সবচেয়ে বেশি মাছ পড়ে রাতে। রাতে যদি বৃষ্টি হয় তাহলে পানি ঘোলা হয়ে যাবে। এতে করে বেশি মাছ পড়বে। টেংরা, কই মিলে ১ কেজির মতো মাছ পেয়েছি।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক আব্দুস সালাম জানান, গত বুধবার রাত ১০টার পর থেকে বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিকেল ৩টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৬১ মিলিমিটার। এখনো বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এটি আরও ২-১ দিন স্থায়ী হতে পারে।
রাজশাহী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বৃষ্টি এখনো হচ্ছে। খাল ও পুকুরে প্লাবিত হয়ে গেছে। মাঠে আমাদের লোকজন কাজ করছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর ইসলাম তুষার বলেন, রাজশাহী সিঅ্যান্ডবির মোড়ে কিছু জলকপাট আছে। এগুলোর প্রশস্ততা দুই থেকে আড়াই ফুট, এটি বাড়াতে হবে। তবে এ কাজটি আমাদের নয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা এগুলো নিয়ে কাজ করছেন।
তিনি আরও বলেন, সব ড্রেন ও নদীর পাড় পরিষ্কার করা হয়েছে। কিছু নির্মাণকাজ চলমান থাকায় এ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। আমরা কাজ করছি। আশা করছি নতুন করে বৃষ্টি না হলে আগামী দু-একদিনের মধ্যে সব পানি নেমে যাবে।
মন্তব্য করুন