ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ১১:০৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ

অস্তিত্ব সংকটে পড়ে পেশা ছাড়ছেন মৃৎশিল্পীরা

মাটির হাঁড়ি তৈরি করছে মৃৎশিল্পী। ছবি : কালবেলা
মাটির হাঁড়ি তৈরি করছে মৃৎশিল্পী। ছবি : কালবেলা

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় দিন দিন ভাটা পড়ছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পে। আগেকার সেই স্পন্দন যেন নেই ব্রাহ্মণপাড়ার কুমার পাড়ায়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাজারে আসা প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প। এতে এ শিল্পে জড়িত অনেকেই জীবন-জীবিকার তাগিদে পেশা বদল করে চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়। আর বংশপরম্পরায় পাওয়া এ পেশার সঙ্গে এখনও যারা জড়িয়ে আছেন তারাও অস্তিত্ব সংকটে পড়ে আগ্রহ হারিয়ে দিন কাটাচ্ছেন হতাশায়।

সরেজমিনে উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের ষাইটশালা এলাকার কুমার পাড়ায় গিয়ে কথা হয় মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত পরিবারের সদস্য রবীন্দ্র রুদ্র পালের স্ত্রী অঞ্জনা রানী পালের সাথে।

তিনি জানান, প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের জিনিসপত্র বাজারে আসার পর থেকেই মাটি দিয়ে তৈরি পণ্যে ভাটা পড়া শুরু হয়েছে। এই কাজ করে এখন আর সংসার চলে না তাদের। বর্তমানে একটি পাতিল তৈরি করতে যে টাকা খরচ হয় সে টাকা অনেক সময় বিক্রিও করতে পারেন না তারা। এসব পণ্য তারা পাইকারি বিক্রি করেন ২০ টাকা করে। দৈনিক ৪৫ থেকে ৫০টি পাতিল তৈরি করতে পারেন একজন শ্রমিক। আর এই আয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয় তাদের। বাপ-দাদার পেশা, মায়ার কারণে ধরে রেখেছেন, আয় বলতে তেমন কিছু নেই, পাশাপাশি অন্য কিছু করে সংসার চালাতে হচ্ছে তাদের। তাদের ছেলে মেয়েরা এই কাজ করতে আগ্রহী না। তারাও চান না ছেলে মেয়েরা এই পেশায় আসুক।

স্বপন রুদ্র পাল নামে আরেক মৃৎশিল্পী জানান, আগে আশপাশের ডোবা-নালা থেকে মাটি এনে হাঁড়ি-পাতিলসহ নানা ধরনের মাটির পণ্য তৈরি করতেন। এখন এই মাটিটুকুও চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। মাটির এসব পণ্য আগুনে পোড়াতে প্রয়োজনীয় লাকড়ির দামও বেশি। এতে তাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। পাশাপাশি মাটির পণ্যের বিক্রি কমে যাওয়ায় লোকসানের বোঝা প্রতিনিয়ত ঘাড়ে চাপছে।

বাঙালির চিরচেনা ঐতিহ্য মৃৎশিল্পে ভাটার পেছনের গল্প জানান মৃৎশিল্পী কমল চন্দ্র পাল, নিরঞ্জন রুদ্র পাল, বিনোদ রুদ্র পাল ও সুমা রাণী পাল।

তারা জানান, এই পল্লীতে কোনো একসময় মৃৎশিল্পের কাজে নিয়োজিত ছিল ৪০০ পরিবার। সময়ের পরিক্রমা ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেকেই এ পেশা থেকে ভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। এক সময় মৃৎশিল্পপল্লীর শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করতেন, হিমশিম খেতেন পাইকারদের চাহিদা মেটাতে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়াও শিশুদের খেলনা, গৃহের শৌখিন পণ্যসহ বাহারি পণ্য থাকত কুমারপাড়া এলাকায়। এসব পণ্যে থাকত দৃষ্টিনন্দন আলপনার ছোঁয়াও। কিন্তু আজ এসবই হারিয়ে যাচ্ছে আধুনিকতার ছোঁয়ায়। তবে সময়ের পরিক্রমায় মৃৎশিল্পের অস্তিত্ব সংকটে পড়লেও ৪০টি পরিবার এখনও এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত থেকে বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখে জীবিকা নির্বাহ করছেন। অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন পরিবারগুলো।

মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমাদের মাধবপুর ইউনিয়নের ষাইটশালা এলাকার কুমারপাড়া মৃৎশিল্পীদের অবস্থা খুবই নাজুক। সবসময়ই তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। যদি সরকারি কোনো অনুদান আমার কাছে আসে আমি তাদের দিয়ে সহযোগিতা করি এবং ভবিষ্যতেও করব। আগে তাদের মাটি কিনতে হতো না, বাড়ির পাশের খাল-বিলের মাটি দিয়েই তাদের কাজ চলত। এখন তারা দূর থেকে মাটি কিনে জিনিসপত্র তৈরি করেন। কিন্তু সেই জিনিসপত্র আগের মতো না চলায় জীবিকা নির্বাহ করতে তাদের কষ্ট হচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

স্বাস্থ্য পরামর্শ / রান্নায় সরিষার তেলে ঝুঁকি ও অসংক্রামক রোগ

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে আবারো দুর্ঘটনা, নিহত আরও ৩

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে ৫৮% মার্কিনি : রয়েটার্স

স্পেনের বাইরে লা লিগার ম্যাচ খেলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাল ফুটবলাররা

দুবাইয়ে যাওয়ার ৪ মাস পরই ৩ কোটির লটারি জিতলেন প্রবাসী

এনজো ফার্নান্দেজের মুখে রিয়াল মাদ্রিদের নাম, বাড়ছে গুঞ্জন

কেশবপুরে নারী সমাবেশ/ / ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি

সাভারে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের দাওয়াতি মাসের শুভ উদ্বোধন

তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন, নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রীও হবেন : এ্যানি

দলবদলের বাজারে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর রেকর্ড ভাঙা খরচ

১০

ধর্মগড় সীমান্তে বিজিবির হাতে আটক চার বাংলাদেশি

১১

হাসিনাকে ফেরত পাঠানো নিয়ে মোদিকে ওয়েইসির প্রশ্ন

১২

জাকসুতে প্যানেল দ্বন্দ্ব, পদত্যাগ করে বাগছাস নেতার মিষ্টি বিতরণ

১৩

সৈয়দপুর বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা আন্তর্জাতিক মানের করতে চাই : বেবিচক চেয়ারম্যান

১৪

‘আ. লীগ বিদ্যুৎ খাতে চুরির লাইসেন্স দিয়েছিল’

১৫

আ.লীগ নেত্রী রুনু গ্রেপ্তার

১৬

ইসির ইউটিউব চ্যানেল চালু, মিলবে যেসব তথ্য

১৭

শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, গ্রেপ্তারের দাবি শিক্ষার্থী

১৮

চার বিভাগে ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি, পাহাড়ধসের আশঙ্কা

১৯

ভোলায় পাঁচ দিন ২০ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, ভোগান্তি চরমে

২০
X