স্বামীকে হত্যার হুমকি দিয়ে কৌশলে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের সময় এলাকাবাসীর হাতে আটক সেই ছাত্রলীগ নেতা সোলায়মান আলী সবুজের নামে থানায় দায়ের করা অভিযোগ ২৪ ঘণ্টা পর আমলে নিয়েছে পুলিশ। তবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকে দুদিনেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এর আগে ঘটনার ৪ দিন পর গত মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) ভুক্তভোগী গৃহবধূ বাদী হয়ে অভিযোগ দিলেও ২৪ ঘণ্টা পর বুধবার রাতে সেটি রেকর্ড করে পুলিশ। মামলা নং ২৬।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের বারোহাত কালী নামক স্থানে গত ১৩ আক্টোবর সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ ওই এলাকার জলধর বিশ্বাসের স্ত্রী। অভিযুক্ত সোলায়মান আলী সবুজ একই ইউনিয়নের কুলাঘাট এলাকার সফিকুল ইসলামের ছেলে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে ছাত্রলীগ নেতা সবুজ তাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এতে রাজি না হওয়ায় সে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। তার স্বামী স্থানীয় কুলাঘাট বাজারে মাছের ব্যবসা করে সংসার চালায়। স্বামী জলধর বিশ্বাস রাতে বাজার থেকে ফেরার পথে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় ছাত্রলীগ নেতা সবুজ। কিন্তু এতেও কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে সুযোগের সন্ধানে থাকে ওই ছাত্রলীগ নেতা। পরে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় বাড়িতে প্রবেশ করে ঘরের দরজায় কড়া নাড়ে।
গৃহবধূ আরও জানান, ঘটনার দিন আমি বাড়িতে একা ছিলাম। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পেয়ে তা খোলামাত্রই সে আমাকে মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে আমি চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। এ সময় সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে প্রতিবেশীরা আটক করে।
পরে খবর পেয়ে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে সবুজকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এদিকে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য টাকা দিয়ে জোরপূর্বক মীমাংসার চাপ দিচ্ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও গ্রামের মাতব্বররা। মীমাংসায় রাজি না হলে ভুক্তভোগী পরিবারকে গৃহবন্দি করে রাখে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী। বাড়ির সামনে রীতিমতো পাহারা বসায় তারা। ভুক্তভোগী পরিবার ঘর থেকে বের হতে না পেরে থানায় জানাতে পারেনি। ৩ দিন ধরে মীমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ১০০ টাকা মূল্যের ৩টি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে নিজ বাড়ি থেকে বের করে দেয় তারা। পরে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে স্বামী জলধর কুড়িগ্রামে শ্বশুরবাড়িতে চলে আসে। সেখান থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লালমনিরহাট সদর থানায় গিয়ে ভুক্তভোগী গৃহবধূ বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। পরদিন বুধবার রাতে অভিযোগটি আমলে নিয়ে মামলা হিসেবে রেকর্ড করেন থানা পুলিশ।
গৃহবধূর স্বামী জলধর বিশ্বাস জানান, ‘আমার স্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন নম্বর দিয়ে কথা বলে কুপ্রস্তাব দিত। এতে রাজি না হওয়ায় বাড়িতে একা পেয়ে তাকে ধর্ষণ করেছে। পরে আমাকে টাকা নিয়ে মীমাংসা করার চাপ দেয় ছাত্রলীগ নেতা সবুজের লোকজন। এতে রাজি না হলে তারা আমাদের তিন দিন বাড়ি থেকে বের হতে দেয়নি। পরে গত সোমবার বিকেলে ৩টি ১০০ টাকার ফাঁকা স্ট্যাম্পে আমাদের স্বাক্ষর নিয়ে নিজ বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে কুড়িগ্রামে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে আশ্রয় নিই। সেখান থেকে লালমনিরহাট সদর থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। সামনে দুর্গাপূজা। ওরা আমাদের পূজার আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। আমি ছাত্রলীগের লম্পট নেতা সবুজের বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সোলায়মান আলী সবুজ বলেন, ‘আমাকে সমস্যার কথা বলে তার বাড়িতে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। পরে ওই গৃহবধূ এলাকার লোকজনকে ডেকে এনে আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দেয়। আমার সঙ্গে ওই গৃহবধূর কোনো সম্পর্ক নেই।’
সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এনামুল হক বলেন, গত ২৩ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ঘটনাটি শুনেছি। শিগগিরই সবার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে সদর থানার ওসি ওমর ফারুক জানান, গত মঙ্গলবার রাতে অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার দ্রুত তদন্ত শেষে বুধবার রাতে অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও তিনি জানান।
মন্তব্য করুন