ঢাকার মহাসমাবেশে যোগ দিতে বিভক্ত হয়ে ঢাকায় যাচ্ছে খুলনা বিএনপির দুই গ্রুপ। বুধবার (২৫ অক্টোবর) থেকে ঢাকায় যাওয়া শুরু করবেন নেতাকর্মীরা। দলের এই সংকটের মুহূর্তেও দুই গ্রুপের এমন যাত্রা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া গ্রেপ্তার ও পুলিশি হয়রানি এড়াতে কৌশলে ঢাকা যাচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, বিএনপির এক গ্রুপ সাবেক এমপি ও নগর আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ও অন্য গ্রুপ বর্তমান কমিটি।
বিএনপি নেতারা জানান, প্রতিবার ঢাকায় কর্মসূচিতে যাওয়ার সময় যানবাহন বন্ধ থাকা, পথে পথে তল্লাশিসহ নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন তারা। সে কারণে এবার তারা মহাসমাবেশের আগেই ঢাকায় চলে যাবেন। এ ছাড়া আবাসিক হোটেলে থাকলে সেখানে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আটক করে। সে কারণে ঢাকায় হোটেলে থাকার পরিবর্তে বন্ধুবান্ধব অথবা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে থাকার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন জানান, নগরীর ৫টি থানার নেতাকর্মীরা নিজ নিজ উদ্যোগে ও নিজস্ব খরচে বাসে অথবা ট্রেনে ঢাকায় যাবেন। মহাসমাবেশের দিন তারা একসঙ্গে সমাবেশে যাবেন। সেভাবে নির্দেশনা দিয়ে নেতাকর্মীদের সতর্কভাবে চলাচল করতে বলা হয়েছে। পৃথকভাবে ঢাকা যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যাদের দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে তারা দলের কেউ না। যদি কেউ যেতে চায় তারা যাবে। বহিষ্কৃতদের বিষয়ে দলের কোনো দায় নেই।
এদিকে আলাদাভাবে ঢাকার মহাসমাবেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নেতৃৃত্বাধীন সাবেক নেতারা। মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু জানান, প্রস্তুতি সভা করে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা জানানো হয়েছে। বুধবার থেকে ঢাকায় যাওয়া শুরু হবে। গ্রেপ্তার এড়াতে দল ধরে না যাওয়া, হোটেল-মেসে না থাকাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা।
শফিকুল আলম তুহিনের বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমি কী বর্তমান কমিটির কাছে শুনে রাজনীতি করব। আমি ৪০ বছরের বেশি সময় খুলনা বিএনপি রাজনীতি আগলে আছি। খুলনার মানুষের কাছে বিএনপি ও মঞ্জু একই শব্দ। আমি জিয়ার রাজনীতি করি, কারও কাছ থেকে শুনে রাজনীতি করব না।’
খুলনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী জানান, তারা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সভা করেছেন। জেলার ৯টি উপজেলা থেকে কয়েক হাজার নেতাকর্মী মহাসমাবেশে যোগ দেবে। তবে কোনো বাস ভাড়া করে নেতাকর্মীরা একসঙ্গে ঢাকায় যাবে না। নেতাকর্মীরা যে যার মতো সমাবেশের ২/১ দিন আগে ঢাকায় পৌঁছে যাবে। বুধবার বিকাল থেকেই নেতাকর্মীরা ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবেন।
এদিকে দলের এই সংকটময় মুহূর্তে পৃথকভাবে যাত্রা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক নেতাকর্মী।
খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক এক নেতা বলেন, যেখানে বেগম খালেদা জিয়ার জীবন সংকটাপন্ন, দেশের মানুষকে জিম্মি করে স্বৈরশাসন চালাচ্ছে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার সেখানে এ ধরনের গ্রুপিং ধরে রাখা দলের জন্য ভালো কথা নয়। খুলনা বিএনপি আরও শক্তিশালী করতে গ্রুপিং মিটিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে। এরপর এসএম শফিকুল আলম মনাকে আহ্বায়ক ও শফিকুল আলম তুহিনকে সদস্য সচিব করে কমিটি করা হলে সেখান থেকে বাদ যান মহানগর বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনিসহ মঞ্জুর অনুসারী সবাই। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় আলাদাভাবেই বিএনপির কর্মসূচি পালন করে আসছেন বিএনপিতে মঞ্জুর অনুসারীরা।
মন্তব্য করুন