বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় এমপি ছাড়া অন্য কাউকে গাড়ি দিলে এবং বাইরের কোনো গাড়ি বাঁশখালীতে প্রবেশ করলেই তা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুজিবুর রহমান সিআইপি বাঁশখালীর যানবাহন মালিক সমিতির কাছ থেকে গাড়ি চাওয়ার খবরে এমপি এমন হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেছেন যানবাহন মালিক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। যে কারণে মুজিবুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যেতে কোনো গাড়ি দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যানবাহন মালিক সমিতি। এ সংক্রান্ত একটি অডিও রেকর্ড পেয়েছেন এ প্রতিবেদক।
অডিও রেকর্ডে শোনা যায়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুজিবুর রহমান সিআইপির পক্ষে গাড়ি নিয়ে যানবাহন মালিক সমিতির সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন তার এক প্রতিনিধি। যানবাহন মালিক সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম জানান, এমপিকে আমরা কতটি গাড়ি আছে জানানোর পর উনি বলেছেন সব গাড়ির তালিকা আমার কাছে আছে। কোনো গাড়ি কাউকে দিতে পারবে না। আমি ছাড়া কাউকে গাড়ি দিলে সেগুলো ভেঙে দেওয়া হবে। এমনকি জনসভার দিন বাইরের কোনো গাড়িও বাঁশখালীতে আনা যাবে না বলে এমপি জানিয়ে দেন। যে কারণে আমরা গাড়ি দিতে পারব না বলে সিআইপি সাহেবকে আগে-ভাগে জানিয়ে দিয়েছি। এমপি খুব খারাপ আচরণ করেছেন। তার ব্যবহার খুব খারাপ। কথোপকথনে মুজিবুর রহমান সিআইপিকে গাড়ি দিতে না পারায় ক্ষমা প্রার্থনা করেন গাড়ি মালিক সমিতির দুই নেতা।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুজিবুর রহমান সিআইপি বলেন, ‘আমি যেহেতু আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি সে হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় নেতাকর্মীদের নিয়ে উপস্থিত হওয়া আমার দায়িত্ব। যানবাহন মালিক সমিতির সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক থাকায় আগেভাগেই তাদের গাড়ির কথা বলেছিলাম। তারা আমাকে ২০টি গাড়ি দেবে বলে জানালেও পরে গাড়ি দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। কারণ হিসেবে বলেছেন, এমপি না কি তাদের বকাঝকা করেছেন। গাড়ি দিলে ভেঙে দেবেন বলেছেন। এখন আমি নেতাকর্মীদের নিয়ে জনসভায় আসতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ জন্য আমি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। ইতিমধ্যে আমার লোকজন কয়েকটি গাড়ি অগ্রিম টাকা দিয়ে বুকিং করলেও গাড়ি চালকরা ভয়ে টাকা ফেরত দিয়েছে।’
বাঁশখালী কোস্টার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘বাশঁখালী থেকে অনেকেই গাড়ি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যাবেন। এরই মধ্যে অনেকেই গাড়ির জন্য বলেছিল। সবাইকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করি। এতো গাড়ি কীভাবে দেব, অনেক গাড়ি নষ্ট। তাই আলোচনা করে গাড়ি দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি।’
গাড়ি না দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ‘আমি এখন খুবই ব্যস্ত।’ একটা মিটিংয়ে আছেন বলে কল কেটে দেন। তবে এমপির পিএস মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল বলেন, ‘স্যার মিটিংয়ে রয়েছেন। আমি যতটুকু জানি অনেক গাড়ি দিচ্ছেন জনসভায় যাওয়ার জন্য। গাড়ি না পেলে অন্যভাবে হলেও আসবেন।’ বাকি বিষয়টা জানেন না বলে জানান তিনি।
জনসভার জন্য গাড়ি দিতে না পারায় টাকা ফেরত দেওয়া গাড়িরচালক মো. সোহাগ বলেন, ‘আমরা কষ্ট করে চলি। এতে জনসভার জন্য অনেকেই গাড়ির জন্য বলেছিল। তবে ঠিক মতো গাড়ি দিতে না পারায় টাকাও ফেরত দিয়েছি দলের নেতাদের কাছে।’
মন্তব্য করুন