সোহেল আরমান সাইকেল নিয়ে এসেছেন বাজারে। সাইকেলটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে তিনটি সবজি দোকান উপেক্ষা করে দাঁড়িয়েনছেন আরেকটি সবজির দোকানে। হাতে একটি সাদা রঙের ব্যাগ। পকেট থেকে বের করলেন একটি ৫০০ টাকার নোট। এরপর দামাদামি করছেন বিভিন্ন সবজির। দাম শুনে মাথায় হাত দিয়ে কি যেন চিন্তা করছেন। অনেক্ষণ ভাবার পর পকেট থেকে একটি লিস্ট বের করেন। এরপর বিভিন্ন সবজি কিনে বাড়ি ফেরার পথে কথা হয়। তিনি পেশায় একজন শিক্ষার্থী। তার বাবা বাজারে আসার কথা থাকলেও তাকে পাঠিয়েছে।
সোহেল আরমান বলেন, ‘আমাদের উপজেলায় এত সবজি আবাদ হয়, তারপরও কেন দাম কমে না। সবজি বাজার এলে মনে হয়, ভুল করে স্বর্ণের বাজারে এসেছি। বাবার ইনকাম বাড়েনি কিন্তু জিনিসপত্রের দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বেড়েছে। আমরা সাধারণ মানুষ বর্তমান সিন্ডিকেটের হাত থেকে রেহাই চাই।’ লিস্টের তালিকায় কি ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লিস্টে যা ছিল তা সব কিনেছি, তবে অর্ধেক করে।’
এমনটাই ঘটেছে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকালে উত্তরের জেলা দিনাজপুরের খানসামা বাজারে। এ জেলায় আগাম শীত পড়ে এবং আগাম শীতকালীন সবজি উৎপাদিত হয়। আর এ উপজেলায় সবজি উৎপাদনে সেরা। এরপরও কমছে না শীতকালীন সবজির দাম। বাজারে সব ধরনের সবজির দামই দ্বিগুণ হয়েছে।
উপজেলার খানসামা বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা, মূলা ৩৫, পিয়াজ ১২০, করলা ৩০, আলু ৫৫ টাকা, পটল ৩০, পুঁইশাক ২০, শিম ৬০ টাকা, বেগুন (গোল) ৩৫ টাকা, বেগুন (লম্বা) ২০ টাকা, ফুলকপি কেজি থেকে ৪৫ টাকা, শসা ৪০, ঢেড়শ ৬০ টাকা, কায়তা ৪০, বটবটি ৪০, প্রতিটি লাউ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায় ও পেঁপের কেজি ২০ টাকা।
আব্দুর রহমান নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়লে আমাদের ওপর যে কী প্রভাব পড়ে সেটি বলে বোঝানো যাবে না। মাছ মাংস তো দূরের কথা, সবজি কিনতে টাকা শেষ।’
পাকেরহাট বাজারে সবজি কিনতে আসা আমিন বলেন, ‘কাঁচা বাজার ঢুকতেই ভয় লাগছে। বাজারে আগুন ধরেছে। এত দাম হলে আমরা মধ্যবিত্তরা কি করে কিনব। এতে দিশেহারা হয়ে গেছি। সংসারে টানাটানি শুরু হয়েছে। এখন আমাকে সংসার চালাতে হলে অতিরিক্ত কিছু করতে হবে, না হয় ধার করে চলতে হবে। অথবা কেনাকাটা কমাতে হবে। বাজারে এলে লিস্টের অনেক জিনিস না কিনেই ফিরে যেতে হচ্ছে।’
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রেজা বলেন, বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু আমার বেতন বাড়েনি। বাজার করতে এসে সবজির দোকানগুলোতে দাম দর করছি। কিন্তু বিক্রেতারা যেভাবে দাম হাঁকাচ্ছে তাতে কেনার সামর্থ্য নেই। শীতের এই ভরা মৌসুমে এমন মূল্যবৃদ্ধি কিভাবে সম্ভব আমার বুঝে আসছে না।
খানসামা বাজারের বিক্রেতা শাহীন বলেন, ‘আমরা প্রতিটি সবজিতে প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা লাভ করি। এখন যেমন লাভ করছি কিছু দিন আগে যখন দাম কম ছিল তখনো একই হারে লাভ করে বিক্রি করেছি। কিন্তু পাইকারি বাজারে প্রতিটি সবজির দাম দ্বিগুণ হয়েছে। এ জন্য আমাদের কেউ বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনো পুরোপুরি শীতকালীন সবজি আসে নাই। আসলে দাম অনেকটাই কমে যাবে। আশা করছি আগামী মাস থেকে দাম কমবে।’
মন্তব্য করুন