প্রিয়তমা স্ত্রী খালেদার মৃত্যু হয়েছিল ২০১৪ সালের দিকে। ঠিক তারও বছর দুয়েক আগে চিরনিদ্রায় শায়িত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে একটি কবর প্রস্তুত করে রেখেছিলেন আব্দুল কাদের। বয়স ৮০ ছুঁই ছুঁই। কিন্তু তার আগেই স্ত্রীর মৃত্যু হলে সেখানে দাফন করেন পত্নী খালেদাকে। পরে আরেকটি খবর খুঁড়ে পাকা করেন তিনি। ইচ্ছে ছিল সেই কবরে নিজেই থাকবেন তিনি। কিন্তু এখন ওই কবরে কে থাকবেন সেটি নিয়ে দোটানায় পড়েছেন কানুনগো (নকশাকার) কাদের।
গাইবান্ধা জেলা সদর থেকে ১২ এবং পলাশবাড়ী পৌরশহর থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে পাকা ও মেঠোপথ পাড়ি দিয়ে পশ্চিম ঘোড়াবান্দা গ্রামের ঝাকুয়াপাড়ায় আব্দুল কাদেরের বাড়ি। যিনি এলাকায় কানুনগো নামেই সমধিক পরিচিত।
জানা যায়, ৭ ভাইয়ের মধ্যে আব্দুল কাদের দ্বিতীয়। ১৯৫৯ সালে মেট্রিকুলেশন, ১৯৬১ আইএ এবং ১৯৬৩ সালে বিএ পাশ করেন তিনি। পরে ১৯৬৮ সালে রাজশাহী সেটেলমেন্ট অফিসে কানুনগো পদে যোগদানের মধ্যদিয়ে কর্মজীবনের শুরু করে লালমনিরহাট সেটেলমেন্টে অফিস থেকে ২০০১ সালে অবসরে যান কাদের। দাম্পত্য জীবনে কাদের-খালেদা দম্পতির রয়েছে ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে। হয়তো ব্যক্তিগত জীবনে ভালো কাজের বিনিময়ে ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পেরেছেন তিনি। বড় ছেলে খায়রুল আলম বাবলা হাউস বিল্ডিং ফিন্যান্স করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী। যিনি এখন পরিবারসহ ঢাকায় রয়েছেন। মেজো ছেলে মোস্তফা কামাল একজন হার্ডওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। স্ত্রীসহ থাকেন কানাডায়।
ছোট ছেলে শফিক কামাল শিমুল। যিনি মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। তিনিও থাকেন পরিবারসহ কানাডায়। একমাত্র মেয়ে জিনি আকতার শাপলা সম্পন্ন করেছেন জীববিদ্যায় স্নাতকোত্তর। বিয়ের পর তিনি থাকেন আমেরিকায়। সেদিক থেকে কানুনগো কাদের একজন সফল বাবাও। সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির উত্তর-পশ্চিম পাশে ফুল ও ফল বাগানের ভেতরে একটি টিনের ঘরের ভেতর দুটো কবর। একটির চারপাশে রয়েছে সুদৃশ্য টাইলস করা। আরেকটি নিচের চারপাশে পাকা করা এবং নিচের মাটিতে লাগানো হয়েছে ছোট ছোট ফুল ও ওষধি গাছ।
কানুনগো কাদের বলেন, ২০১৪ সালের কথা। ডায়াবেটিসে ভোগা গিন্নি খালেদা মারা যান তখন। তার ঠিক বছর দুই তিনেক আগে একটি কবর তৈরি করেন তিনি। যার একটিতে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন গিন্নি খালেদা। আর নিচের চারপাশ পাকা করা এবং নিচের মাটিতে ফুল ও ওষধি গাছ লাগানো কবরটি যে নিজের জন্য নয়, যার আগে মৃত্যু হবে তারই জন্য নির্ধারিত এমনটাই বলছিলেন কানুনগো। কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভালো নাই। একটাই সমস্যা কোনো খিদা লাগে না।
গিন্নির মৃত্যু ও সন্তানেরা কেউ বাড়িতে না থাকায় বেশ কষ্ট পাচ্ছিলেন কাদের। এজন্য নিঃসঙ্গতা ঘোচাতে ভাতিজা ও বড় ছেলে বিয়ে দিয়েছেন তাকে ২০১৭ সালে। তিনিও নাকি একজন ভালো শাশুড়ি ও মা, বলছিলেন কাদেরের এক ভাতিজা বউ।
বাড়িতে গেলে দেখা যায়, রেডিওতে গান শুনছিলেন কাদের। শিক্ষিত ও মার্জিত এ মানুষটি বলেন, দিন কাটে এখন রেডিও, ক্যাসেট ও টেলিভিশনে খবর আর গান শুনে। এ ছাড়া ভালোবাসেন খাদ্য দিয়ে মাছের খেলা দেখা, গরু, ছাগলের দেখাশোনা করা এবং বোরো মৌসুমে সেচ পাম্প চালানো।
সফল ও শৌখিন এ মানুষটি দ্বারা কবর তৈরি করা নিয়ে কৌতূহল এখন সবার। স্থানীয়দের মন্তব্য তিনি একজন ভালো মানুষও বটে।
মন্তব্য করুন