বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধ কর্মসূচির প্রথমদিন কেটেছে উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে। যদিও ময়মনসিংহে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষিপ্তভাবে মিছিল করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। বাস টার্মিনালগুলো থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার বাস। তবে আন্তঃজেলা ও ঢাকাগামী বাস চলেছে স্বল্প পরিমাণে। অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাহিন্দ্র ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল স্বাভাবিক ছিল। ময়মনসিংহ জংশন থেকে সব ট্রেন যথা সময়ে ছেড়ে গেছে।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকাল পৌনে ১০টার দিকে ময়মনসিংহ পাটগুদাম ব্রিজ মোড় এলাকায় মিছিল বের করে মহানগর বিএনপি। কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের নেতৃত্বে মিছিলটি বের হয়।
নানান শ্লোগান দিয়ে মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ব্রিজমোড় রেলক্রসিং পর্যন্ত গেলে পুলিশের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। ওই সময় বিএনপি নেতাদের ধাওয়া দিলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। ওই সময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিআরটিসির বাসসহ কয়েকটি যানবাহনের গ্লাস ভাঙচুর করা হয়। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার এক পর্যায়ে পালিয়ে যান বিএনপি নেতাকর্মীরা। মিছিলে মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এম এ হান্নান, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জোবায়েদ হোসেন শাকিলসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ বলেন, পুলিশের অবস্থান দেখে ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায় বিএনপি নেতাকর্মীরা।
এ ছাড়া জেলার ফুলপুর ও তারাকান্দায় অবরোধের সমর্থনে মিছিল হয়। ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদারের নেতৃত্বে দুটি উপজেলায় পৃথক ঝটিকা মিছিল শেষে সড়ক ছেড়ে পালিয়ে যান বিএনপি নেতাকর্মীরা। যাত্রী সংকটে বাস চলেছে কম
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের প্রথম দিন ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাসহ দূর পাল্লার রুটের বাস চলাচল করে খুম কম। আন্তঃজেলা রুটগুলোতে বাস চালানোর চেষ্টা করেছেন মালিক-শ্রমিকরা। যাত্রী কম থাকায় সেগুলোও সময়মতো ছাড়েনি। তবে ময়মনসিংহ থেকে থেকে ঢাকাসহ অন্যান্য রুটের ট্রেনগুলো সময়মতো ছেড়ে গেছে। বাস টার্মিনালসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিজিবি-পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে দিনভর টহল চলেছে।
তালাবদ্ধ বিএনপি কার্যালয়, যুবলীগ-ছাত্রলীগের মহড়া
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা দেশব্যাপী তিনদিনের অবরোধকে ঘিরে জনমনে উৎকণ্ঠা ছিল। ময়মনসিংহেও মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা ছিল। অবরোধের সমর্থনে সকাল ১০টার দিকে নগরীর পাটগুদাম ব্রিজ মোড় এলাকায় একটি ঝটিকা মিছিল করলেও আর কোথাও বিএনপি নেতাকর্মীদের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। নগরীর হরিকিশোর রায় রোডের বিএনপির দলীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ ছিল দিনভর। এদিন যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দিনভর শহরের বিভিন্ন সড়কে লাঠি হাতে স্লোগান দিয়ে মোটরসাইকেল মহড়া দেয়।
বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার
ময়মনসিংহের বিভিন্ন থানা পুলিশের অভিযানে বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা। এর মধ্যে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত কোতোয়ালি থানায় ১৬, ত্রিশালে ৯, মুক্তাগাছা ও নান্দাইলে ৪ জন করে, ঈশ্বরগঞ্জ, ভালুকা ও ধোবাউড়ায় ৩ জন করে, ফুলপুরে ২, গফরগাঁও, গৌরীপুর ও ফুলবাড়িয়ায় একজন করে মোট ৪৭ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ত্রিশালে পেট্রোল বোমাসহ শিবিরের তিনজন ও বিএনপির ৬ নেতাকর্মী আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন ত্রিশাল থানার ওসি মাইন উদ্দিন।
তিনি আরও জানান, নাশকতার উদ্দেশ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুটি মোটরসাইকেলে শিবিরের পাঁচ নেতাকর্মী ঘোরাফেরা করছিল। তাদের কাঁধে ব্যাগ ঝুলানো ছিল। এতে মহাসড়কে টহলরত পুলিশদের সন্দেহ হয়। পুলিশ তাদের থামতে বললেও তারা বেপরোয়াভাবে বাইক চালাতে থাকে। পরে তাদের পিছু নিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের ব্যাগ থেকে দুটি পেট্রোল বোমা ও দিয়াশলাই উদ্ধার করা হয়।
এ ছাড়া দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান রানা ও মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহম্মেদ রবিনকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর পৃথক পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে ছাত্রদলের এসব নেতা গ্রেপ্তার করা হয়।
জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওসি ফারুক হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তাদের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে।
তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে টিম মাঠে কাজ করছে। সদরে ৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে টিম মাঠে কাজ করছে। দুই প্লাটুন বিজিবি, র্যাব, ১৯৮ জন (১৬ প্লাটুন) আনসার ও পুলিশ মাঠে কাজ করছে। সকাল থেকে দু-এক জায়গায় মিছিল বের করার চেষ্টা করা হলেও তা প্রতিহত করা হয়। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি।
র্যাব-১৪ ময়মনসিংহের অধিনায়ক মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বলেন, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড এড়াতে ১০ প্লাটুন র্যাব মাঠে কাজ করছে।
ময়মনসিংহ বিজিবি অধিনায়ক ল্যাফটেনেন্ট কর্নেল মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য বেসামরিক বাহিনীকে সহযোগিতা করতে বিজিবি কাজ করছে।
মন্তব্য করুন