ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন পূরণের আশায় দালালের খপ্পরে পড়ে লিবিয়ায় পাড়ি জমান কিশোরগঞ্জের ভৈরবের ছয় যুবক। ভৈরবের পৌর এলাকায় কালিপুর মধ্যপাড়ার ওই ছয় যুবক চলতি বছরের মার্চ মাসে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া যান সেলিম মিয়া নামের এক দালালের মাধ্যমে। ওই দালাল লিবিয়ায় অবস্থান করেন এবং তার নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে ইতালি পাঠানোর চুক্তি করা টাকা লেনদেন করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কালিপুর গ্রামের মোরাদ মিয়ার ছেলে নয়ন মিয়া (১৮), সিদ্দিক মিয়ার ছেলে ওমর ফারুক মবিন (২৩), গোলাপ মিয়ার আনোয়ার হোসাইন (৩২), আকবর আলীর ছেলে শিমুল (১৮), মোশারফ হোসেনের ছেলে আব্দুর রহমান (৪০), দ্বিন ইসলাম মিয়ার ছেলে রিফাত মিয়া (২৩) নামের ৬ যুবককে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার জন্য জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে চুক্তি করা হয়। লিবিয়া যাওয়া পর্যন্ত কয়েক ধাপে ব্যাংক চেক ও নগদে ৬ পরিবারের কাছ থেকে স্বজনদের মাধ্যমে মোট ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় দালাল সেলিম। মার্চ মাসে ভুক্তভোগী ৬ যুবককে লিবিয়ায় নেওয়ার পর সেখান থেকে ২০ মে ছোট নৌকায় সাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করলে তীরের কাছেই নৌকা ফেটে গেলে কোনোরকমে জীবন বাঁচায় তারা। বেঁচে যাওয়া যুবকরা ২২ মে এ ঘটনা বাড়িতে জানালে স্বজনরা দালালকে ফোন করে চাপ দিলে পরর্বতীতে বড় নৌকায় সাগর পাড়ি দেওয়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
এরপর থেকে ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজনের সঙ্গে তাদের প্রবাসী সন্তানদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাদের সন্তানদের সন্ধান পেতে দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা মিলেনি। দালাল সেলিম বিভিন্ন সময় সান্ত্বনামূলক কথা বললেও স্পষ্ট কোনো তথ্য দিচ্ছে না। সর্বশেষ মে মাসের ২৮ তারিখের পর থেকে স্বজনরা দালাল সেলিম মিয়াকে ফোন করে পাচ্ছেন না।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ৬ পরিবারের পক্ষে নিখোঁজ শিমুলের মা মোছা. রুবিনা আক্তার বাদী হয়ে ২ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এ চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, মো. ইসমাইল (৪৯), মো. সারোয়ার মিয়া (২২), মো. সাহানুর মিয়া (২০) ও মোছা. রেখা আক্তার (২৫)। অভিযুক্তরা দালাল সেলিম মিয়ার পরিবারের লোকজন। তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় টাকা লেনদেন করা হতো। মামলাটি কিশোরগঞ্জ পিবিআই তদন্ত করছে।
অভিযুক্ত দালাল সেলিমের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ী গ্রামে। বর্তমানে তার পরিবারের লোকজন রায়পুর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ফারকান্দি গ্রামে বসবাস করছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
কালিপুর গ্রামে ভুক্তভোগীদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কান্নাকাটি করছেন স্বজনরা। তারা জানেন না তাদের সন্তানরা কেমন আছেন, কীভাবে আছেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। দালালেরও খোঁজ পাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ কালবেলাকে বলেন, ‘মানবপাচার একটি অপরাধমূলক কাজ। এ মানবপাচারে যারা জড়িত, দেশে হোক আর দেশের বাইরে হোক তাদের বিরুদ্ধে সরকার কাজ করছে। তারা নিরপরাধ মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দালালদের তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব। এ ব্যাপারে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ও দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ করছে।’
মন্তব্য করুন