আবহাওয়ার আগাম বার্তা দিতে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন পরিষদে কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস বোর্ড স্থাপন করা হলেও অব্যবস্থাপনা ও অবহেলায় সেটি দীর্ঘদিন অকেজো পড়ে রয়েছে।
বোর্ডে রয়েছে কৃষিভিত্তিক আবহাওয়ার হালনাগাদ তথ্যের নানা ছক; সাথে রেইন গজ মিটার ও সৌরবিদ্যুতের প্যানেল।
মূলত ইউনিয়ন পরিষদের কৃষকদের তিন দিন আগের ও তিন দিন পরের আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানানোর উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হলেও বোর্ডগুলোর কোনো কার্যক্রম নেই। কৃষকরা বলছেন, তথ্য তো দূরের কথা; স্থাপনের পর থেকে বোর্ডের চাকা এক দিনও ঘোরেনি।
এতে একদিকে যেমন কৃষকরা এ প্রকল্পের কোনো সুফল পাচ্ছেন না, অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে সরকারি অর্থ। বোর্ডগুলোর `অব্যবস্থাপনা’ নিয়ে চার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মধ্যে কয়েকজন আবার কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সুম জানান, বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশজুড়ে `কৃষি আবহাওয়া তথ্যপদ্ধতি উন্নতিকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এর অংশ হিসেবে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস বোর্ড ও রেইন গেজ মিটার স্থাপন করে কৃষি সম্প্রসারণ ও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। এটি পরিচালনার জন্য ওই সময় প্রত্যেক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে দুই দিন করে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছিল। সেইসাথে আবহাওয়াবিষয়ক সফটওয়্যারসহ প্রত্যেককে একটি করে ট্যাব দেওয়া হয়। ওয়েবসাইট থেকে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করার জন্য সরকারিভাবে প্রতি মাসে ইন্টারনেট প্যাকেজও দেওয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কলকলিয়া, সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়ন, মিরপুর ইউনিয়ন ও চিলাউড়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে কৃষি আবহাওয়া বোর্ডগুলো স্থাপন করা হয়েছে। অযত্নে আর অবহেলায় পড়ে আছে ডিসপ্লে বোর্ড, সোলার প্যানেল ও রেইন গেজ মেশিন। ডিসপ্লে বোর্ডে বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতার হার, বায়ুপ্রবাহ, দিনের আলো কতক্ষণ থাকবে ও ঝড়ের পূর্বাভাসসহ ১০টি তথ্য ছক আছে। মূলত তিন দিন আগের ও তিন দিন পরের আবহাওয়ার পূর্বাভাস কৃষকদের জানানোর উদ্দেশ্যে স্থপান করা হলেও বোর্ডগুলোর কোনো কার্যক্রমই নেই।
আবহাওয়া পূর্বাভাস বোর্ডগুলোর তদারকির দায়িত্বে কারা রয়েছেন জানতে চাইলে সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ মো. সজীব হোসেন জানান, মূলত কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তর এগুলোর দেখভাল করে। এটা তাদের দায়িত্ব নয়।
জগন্নাথপুরের চিলাউড়া ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের সামনে দেয়ালে কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস বোর্ড টানানো থাকলেও কোনো তথ্য হালনাগাদ করা নেই। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য কৃষি কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বরও নেই।
চিলাউড়া ইউনিয়নের কৃষক জায়েদ মিয়া বলেন, ‘ঝড়-বৃষ্টিতে প্রতিবছরই আমাদের ফসলের অনেক ক্ষতি হয়। কিন্তু পরিষদ থেকে আগাম কোনো তথ্য পাই না। আগাম তথ্য পেলে আগে থেকেই সতর্ক হওয়া যেত।’
চিলাউড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, ‘আমার পরিষদ বোর্ড আছে। কিন্তু এটা ঠিক করার জন্য কৃষি অফিসারদের কাউকে দেখা যায়নি।‘
একই অবস্থা কলকলিয়া, সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়ন, মিরপুর ইউনিয়নেরও। মিরপুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের বোর্ড শুরু থেকে নষ্ট; তাই আবহাওয়া বার্তা প্রতিদিন আপডেট করা যাচ্ছে না।’
আর কলকলিয়া ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, তার ইউনিয়নের মেশিন চুরি হয়ে গেছে। আর রানীগঞ্জ ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দাসের ভাষ্য, আবহাওয়া বার্তা বোর্ড আছে কি নাই তার জানা নেই।
মন্তব্য করুন