বগুড়ার নন্দীগ্রামে আমন ধানের বাজারে সিন্ডিকেটের থাবায় দাম কমেছে। উৎপাদন খরচ তুলতে ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কায় কৃষকদের কপালে যেন দুশ্চিন্তার ভাঁজ। তারা বাজারে ধানের দাম কম পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ধান উৎপাদন করে ঋণ পরিশোধ করতেই হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা। গত বছর মিনিকেট ১৬শ টাকা মণ এবং কাটারিভোগ ১৪শ টাকা মণ দরে বিক্রি হলেও এ বছর বাজারে ধানের দরপতন হয়েছে। গত সোমবার উপজেলার রণবাঘা হাটে মিনিকেট ১৩শ টাকা থেকে ১৪শ টাকা মণ, কাটারিভোগ ১৩শ টাকা মণ এবং গ্রাম পর্যায়ের বাজারে কাটারিভোগ ১২শ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়।
কৃষকরা জানান, হাটে সিন্ডিকেটের লোকজন বেড়েছে। তারা ধানের দাম বাড়াতে দিচ্ছে না। আড়তদার, চাতাল ব্যবসায়ী, চালকল ব্যবসায়ী ও মাঠপর্যায়ের ধান ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দরপতন ঘটাচ্ছেন বলে কৃষকদের অভিযোগ। আমন মৌসুমে নন্দীগ্রাম উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এলাকার মাঠে ১৯ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে ১৯ জাতের ধান চাষাবাদ হয়েছে। উপজেলার সবগুলো মাঠের ধান কাটা-মাড়াই শেষ পর্যায়ে। কিছু মাঠে ধানের ফলন কম হওয়ায় লোকসানের কবলে পড়েছেন চাষিরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কয়েকটি গ্রামের মাঠে প্রতি বিঘা জমিতে ফলন হয়েছে মাত্র ৭ মণ থেকে ১০ মণ।
মায়ামনি অটোরাইস মিলের ম্যানেজার সোহেল বিশ্বাস জানান, তিনি রণবাঘা হাট থেকে বিভিন্ন জাতের ধান ক্রয় করেছেন। গত বছর মিনিকেট ১৬শ টাকা মণ এবং কাটারিভোগ ১৪শ টাকা মণ দরে ক্রয় করেছিলেন। বর্তমান বাজারে ধানের দাম কিছুটা কম। গেল সোমবার হাটে কাটারিভোগ ১৩শ টাকা মণ, মিনিকেট ১৩শ টাকা থেকে ১৪শ টাকা, ব্রি-৪৯ প্রতি মণ ১১শ টাকা, ব্রি-৯০ জাতের ১২শ ৫০ টাকা থেকে ১৩শ টাকা, বিনা-৭ জাতের ১১শ ৫০ টাকা, বিনা-১৭ জাতের ১১শ ২০ টাকা, ব্রি-৫১ জাতের এক হাজার টাকা, ব্রি-৭৫ জাতের ১১শ ৫০ টাকা এবং হাইব্রিড জাতের ধান এক হাজার ৫০ টাকা মণ দরে ক্রয়-বিক্রয় হয়। তবে ব্রি ধান ৩৪ সর্বোচ্চ বাজারমূল্য ১৮শ থেকে দুই হাজার টাকা মণ।
অন্যদিকে গ্রাম পর্যায়ে হাটে ধানের দাম কমেছে জানিয়ে থালতা-মাঝগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক শামীম হোসেন জানান, কাটারিভোগ ১২শ টাকা এবং ব্রি-৯০ প্রতি মণ ১১৫০ টাকা থেকে ১১৮০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চককয়া মাঠে স্বর্ণা ও রনজিত জাতের ধান চাষ হয়েছে। এ বছর ফলন কম, হাটে স্বর্ণা ধান এক হাজার ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা মণ দরে বিক্রয় করেছেন।
উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের কৈগাড়ী গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম ও পৌরসভার দামগাড়া মহল্লার এরফান আলী বলেন, এ বছর কাটারিভোগ ধানের ফলন হয়েছে ১৩ মণ থেকে ১৫ মণ। গতবছর প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছিল ২০ মণ থেকে ২২ মণ। গত অক্টোবর মাসে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৈগাড়ীসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মাঠের ফসলি জমিগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় ধানের ফলনে বিপর্যয় হয়েছে। প্রতি বিঘায় ৭ মণ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত ধান পেয়েছেন কৃষকরা।
নন্দীগ্রাম সদর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম জানান, তিনি মথুরাপুর গ্রামের পশ্চিম মাঠে ২ বিঘা ব্রি-৪৯ এবং ১৬ বিঘা জমিতে ব্রি-৩৪ চাষ করেছেন। তার জমিতে ফলন ভালো হয়েছে। ৮ বিঘা জমির ধান কাটা-মাড়াই করে রণবাঘা হাটে ১০০ মণ ধান ১১শ ৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। তবে ওই এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষকের চাষাবাদি জমিতে ফলন কম হয়েছে।
কৃষক ফেরদৌস আলী বলেন, বর্তমান বাজারে ব্রি-৯০ এবং কাটারিভোগ ধান ১৩শ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. গাজীউল হক জানান, কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। ধানের বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সক্রিয়ভাবে পরামর্শ প্রদান করেছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কিছু মাঠে ফলন কম হতে পারে। তবে আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে।
মন্তব্য করুন