বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:২০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বগুড়া হানাদারমুক্ত দিবস আগামীকাল, দুঃসহ স্মৃতি এখন গৌরবের

বগুড়ার মানচিত্র। গ্রাফিক্স : কালবেলা
বগুড়ার মানচিত্র। গ্রাফিক্স : কালবেলা

বগুড়া পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর। তাই আগামীকাল বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) দিনটি জেলায় হানাদারমুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হবে। ওই দিনে শহরের ফুলবাড়ী এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণের মধ্য দিয়ে বগুড়াকে হানাদারমুক্ত করা হয়। এর আগে টানা তিন দিন মিত্রবাহিনীর সহায়তায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।

বগুড়া বাংলাদেশের একমাত্র জেলা, যেটি দখল নিতে পাক বাহিনীর সময় লেগেছিল ২৩ দিন। এরপর নির্ভীক মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে পাক বাহিনীর বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সকালে রংপুর থেকে পাকিস্তানি বাহিনী সড়ক পথে এসে বগুড়া দখল নিতে আক্রমণ চালায়। টানা পাঁচ দিন যুদ্ধের পর মুক্তিবাহিনীর তীব্র প্রতিরোধের মুখে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানি বাহিনীকে বগুড়া থেকে হটিয়ে দিতে ওই দিন আজাদ, টিটু, তোতা, তারেকসহ প্রায় ৪০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পরে ১৭ এপ্রিল সড়ক এবং আকাশ পথে হামলা চালিয়ে আবারও বগুড়ার দখল নেয় পাকিস্তানি বাহিনী। এর পরপরই শুরু হয় তাদের নারকীয় হত্যাকাণ্ড। শহর এলাকা ছাড়াও তারা বগুড়ার শাজাহানপুরের বাবুর পুকুর এলাকায় ১৪ জনকে গুলি করে হত্যা করে তারা।

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ভোর থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বগুড়াকে শক্র মুক্ত করার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নওদাপাড়া, চাঁদপুর ও ঠেঙ্গামারা এলাকায় নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করেন।

পরে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর ৬৪ মাউন্টেন্ট রেজিমেন্টের বিগ্রেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার প্রেম সিংহের নেতৃত্বে ট্যাংক নিয়ে তারা শহরের দিকে এগুতে থাকেন। ওই সব এলাকার অসংখ্য স্থানীয় যুবকও সেদিন তাদের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

১৩ ডিসেম্বর সকালে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী শহরের ফুলবাড়ী এলাকায় পৌঁছার পর পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। তবে সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পাক বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। পরে এ দিন দুপুরে ফুলবাড়ী এলাকার পাশে শহরের বৃন্দাবন পাড়া এলাকায় পাক বাহিনীর প্রায় ৭০০ সৈন্য অস্ত্রসহ মিত্র বাহিনীর মিত্রবাহিনীর ৬৪ মাউনটেন্ট রেজিমেন্টের বিগ্রেডিয়ার প্রেম সিংহের কাছে আত্মসমর্পণ করে। বগুড়ায় উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলার রক্ত লাল পতাকা।

আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হওয়ার পর তাদের বন্দী করে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয়ে মিত্র বাহিনীর হেফাজতে রাখা হয়। ফুলবাড়ীতে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের স্মরণে ২০০৫ সালে ‘মুক্তির ফুলবাড়ী’ নামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সম্বলিত স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্মিত হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ স্কোয়ার। প্রাচীন সভ্যতার ঐতিহাসিক নগরী মহাস্থানগড় খ্যাত বগুড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেও অনেকটা স্থান জুড়ে রয়েছে। আগামী প্রজন্মকে সেই ইতিহাস সঠিকভাবে জানাতে প্রয়োজন একটি সমৃদ্ধশালী সংগ্রহশালা বা মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর প্রতিষ্ঠা। এমনটাই দাবি এ অঞ্চলের মানুষের। এই দিনেই হানাদার মুক্ত হয় বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও কাহালু উপজেলা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এসিআই-এ নিয়োগ, আবেদন করুন অনলাইনে

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

বসতভিটা ছিনিয়ে নেওয়ার হুমকি, সন্তানের বিরুদ্ধে বাবার মামলা

ব্রাজিলের মন্ত্রীর মার্কিন ভিসা বাতিল, দায়িত্বজ্ঞানহীন বললেন লুলা

ভিপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে রুমমেটকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগ, কী বললেন প্রক্টর

শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে বৃদ্ধ আটক

২৭ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

২৭ আগস্ট : টিভিতে আজকের খেলা 

আজ থেকে নতুন দামে বিক্রি হবে স্বর্ণ

২৭ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

১০

বুধবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১১

কৃষিবিদ আসাদুজ্জামান কিটোনকে সংবর্ধনা দিল এ্যাব

১২

মাছ ধরার নৌকায় মিলল সাড়ে ৪ লাখ পিস ইয়াবা, আটক ৯

১৩

ভোলায় নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল / এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা

১৪

যৌথ বাহিনীর অভিযানে অনলাইন জুয়া চক্রের ২ সদস্য আটক

১৫

জেলেরা হেলমেট পরে মাছ ধরেন যেখানে

১৬

বিমানবাহিনীর আন্তঃঘাঁটি স্কোয়াশ প্রতিযোগিতা সমাপ্ত

১৭

স্পেনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

১৮

কারাগারে সন্তান জন্ম দিলেন হত্যা মামলার আসামি

১৯

সিলেটের সাদাপাথর লুটের ঘটনায় সিআইডির অনুসন্ধান শুরু

২০
X