কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন (নাসিক এন-৫৩) পেঁয়াজের ভালো ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যেই চাষিরা ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলতে শুরু করেছেন। আমদানি নির্ভরতা কমাতে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
জানা যায়, দেশের বেশিরভাগ কৃষক শীতকালীন পেঁয়াজ চাষ করেন। ফলে গ্রীষ্মকাল আসতে আসতে পণ্যটির দাম বেড়ে যায়। বিদেশ থেকে আমদানির পরও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। গত কয়েক বছর ধরে এই অবস্থা চলতে থাকায় কৃষি বিভাগ দেশে গ্রীষ্মকালেও পেঁয়াজ চাষের পদক্ষেপ নিয়েছে।গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে লাখ টাকা আয় করছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা। স্বল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় অন্য কৃষকরাও ঝুঁকছেন নতুন গ্রীষ্মকালীন এন-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জেলায় ২৭০ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৫০০ জন কৃষককে প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। হেক্টর প্রতি পেঁয়াজের ফলন ১৭ মেট্রিকটন। আবহওয়া ভালো ও কৃষকরা যথাযথ পরিচর্যা করলে ফলন আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর গ্রামের কৃষক গনেশ চন্দ্র রায় বলেন, সরকারি প্রণোদনা গত বছর থেকে আগাম জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করছি। গতবার পরীক্ষামূলকভাবে ৫ শতক জমিতে লাগিয়ে বাম্পার ফলন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় এবার ১০ কাঠা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করেছি। এবারও পেঁয়াজের ভালো ফলন হয়েছে একেকটি পেঁয়াজের ওজন ২০০ গ্রামের বেশি। আমার ১০ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। এখন এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ১২০ টাকা তাতে খরচ বাদ দিয়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লাভ হবে।
পেঁয়াজ চাষি নিশি কান্ত রায় বলেন, গত বছর থেকে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করছি প্রণোদনার আওতায় এবারও ২০ শতক জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। বৃষ্টির জন্য কিছু চারা মারা গেছে তবে পেঁয়াজের ভালো ফলন হয়েছে। একেকটি পেঁয়াজের ওজন হয়েছে ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম। বাজারে বর্তমান পেঁয়াজের দাম ভালো পাচ্ছি।
পেঁয়াজ চাষি কৃষ্ট মহন্ত বলেন, আমি প্রথম এবার প্রণোদনার আওতায় ১০ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ লাগিয়েছি। প্রথম দিকে বৃষ্টির কারণে আমার খেতের কিছু চারা মারা গেছে। আর এক সপ্তাহ পরে পেঁয়াজগুলো বিক্রি করবো। আশা করছি উৎপাদন খরচের থেকে দ্বিগুণ দামে বাজারে বিক্রি করব।
চিরিরবন্দর উপজেলার কৃষক কর্মকর্তা জোহরা সুলতানা বলেন, উপজেলার ১৫০ জন কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় বীজ সার বিতরণ করা হয়। সেইসঙ্গে বীজতলা তৈরির জন্য কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। এখন পেঁয়াজের সংকটকালীন সময়ে কৃষকরা সেই পেঁয়াজ বাজারে নিয়ে আসতে পারছে। বর্তমান বাজারে রপ্তানি করা পেঁয়াজের দাম যে উদ্ধগতি তাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ।
মন্তব্য করুন