জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:০৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

লিবিয়ায় দালাল চক্রের জাল থেকে বেঁচে ফিরলেন মামুনুর

মামুনুর রহমান। ছবি : কালবেলা
মামুনুর রহমান। ছবি : কালবেলা

পরিবারের ভাগ্য বদলানোর জন্য দালালদের মাধ্যমে লিবিয়া গিয়েছিলেন যুবক মামুনুর রহমান। গন্তব্য ছিল ইতালি। কিন্তু লিবিয়ায় দালাল চক্রের জালে ফেঁসে ৪৫ লাখ টাকা খুইয়ে ২২ মাস বন্দিজীবন কাটিয়েছেন তিনি। এরপর নিঃস্ব অবস্থায় দেশে ফেরেন তিনি।

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার ইকড়ছই গ্রামের বাসিন্দা মতিউর রহমানের ছেলে মামুনুর রহমান। নির্যাতন ও প্রতারণার শিকার হয়ে জগন্নাথপুর থানায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জগন্নাথপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, বিষয়টির তদন্ত করে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

নিজের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে মামুনুর রহমান বলেন, ২০২১ সালের এপ্রিলে জগন্নাথপুর উপজেলার আলাগদি গ্রামের মানব পাচারকারী মুজিবুর রহমানের প্ররোচনায় সাড়ে আট লাখ টাকার চুক্তিতে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে লিবিয়াতে পৌঁছান। লিবিয়ায় পৌঁছে দালালকে আরও চার লাখ টাকা দেন। সেখানে দুই মাস পার হলে জাহেদ নামের এক দালালের ক্যাম্পে পাঠানো হয় তাকে। কিছুদিন পরে আমিনুল ও রাজ্জাক দালালের আস্তানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ রকম কয়েকটি ক্যাম্পে তাকে রাখা হয়। এসব ক্যাম্পে জিম্মি করে গেমের (নৌকায় করে সাগর পাড়ি দেওয়ার প্রক্রিয়া) কথা বলে মুজিবুর আরও ছয় লাখ টাকা নেন। পাঁচ মাস পর এক রাতে গেমের কথা বলে নৌকায় তোলা হয়। কিছুক্ষণ সাগরে ঘোরাঘুরির পর তুলে দেওয়া হয় লিবিয়ার পুলিশের হাতে।

মামুনুর রহমান আরও বলেন, ‘পুলিশ ধরে নিয়ে ছোট একটি ঘরে বন্দি করে রাখে। সেই ঘরে আমরা ২০০ জন বন্দি ছিলাম। ওই ঘরের সঙ্গে থাকা শৌচাগারের পয়োনিষ্কাশনের ময়লা-আবর্জনার পানি ঘরে হাঁটুসমান জমে ছিল। দুর্গন্ধে শ্বাস-নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মরতে মরতে কোনো রকমে বেঁচে যাই। এক দিন এক রাত থাকার পর বাড়িতে যোগাযোগ করে কুদ্দুস নামের আরেক দালালের মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে সেখান থেকে মুক্ত হই।’

লিখিত অভিযোগে মামুনুর বলেন, ‘পুলিশের বন্দিখানা থেকে বের হওয়ার পর আবার ইতালি পাঠানোর কথা বলে জগন্নাথপুরের বালিকান্দি গ্রামের দালাল রাসেল ৯ লাখ টাকা নিয়ে এনাম দালালের মাধ্যমে লিবিয়ার মাফিয়া চক্রের কাছে বিক্রি করে দেন। চক্রটি একটি কক্ষে ১২০ জনকে রাখে। সেখানে টাকার জন্য রশি দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে লোহার পাইপ দিয়ে মারধর করতে থাকে আমাকে। মারধরের অডিও এবং ভিডিও মোবাইলের মাধ্যমে বাড়িতে পাঠায়। বাড়িতে আমার ছোট ভাইকে ফোন দিয়ে ১১ লাখ টাকা দাবি করে। দাবি করা টাকা না দিলে আমাকে হত্যা করা হবে বলে জানায়। আমাকে বাঁচাতে জায়গা-জমি বিক্রি ও ধারদেনা করে ১১ লাখ টাকা দেওয়া হয়। সেখানে ৭ মাস থাকার পর আরেক মাফিয়ার কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেখানে তিন মাস আটকে রাখা হয়। চক্রটিকে ৩ লাখ টাকা দিয়েও ছাড়া পাইনি। একদিন গেমের কথা বলে বন্দিদের একটি মাইক্রোবাসে ওঠানো হচ্ছিল। আমাকেও নেওয়া হবে। আমাদের যে ভবনে আটকে রাখা হয়েছিল, হঠাৎ দেখলাম, ছাদে লোকজন কেউ নেই। এই সুযোগে আমরা তিনজন ছাদ থেকে লাফ দিয়ে নিচের একটি বাগানে পড়ে দৌড়ে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকি। অনাহারে সারা রাত জঙ্গলে থাকার পর ভোরে একটি মসজিদে আশ্রয় নেই। পরে মসজিদের ইমামের সহযোগিতায় দেশে ফিরেছি। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে এখন চিকিৎসা নিচ্ছি।’

মামুনুর রহমানের ছোট ভাই হিমেল বলেন, ‘ইতালি না পাঠিয়ে একাধিকবার মাফিয়া চক্রের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয় আমার ভাইকে। তাকে বাঁচাতে ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় মানব পাচারকারী চক্র। ধারকর্জ করে এসব টাকা জোগাড় করতে হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গরুর মাংসে হাড়-চর্বি বেশি দেওয়ায় সংঘর্ষ

‘বিএনপি ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না’

এক ইলিশ ১০ হাজার টাকা

ভাতের হোটেলের পাওনা চাওয়ায় গুলি

ব্যক্তি স্বার্থে দলকে ব্যবহার করা যাবে না : সেলিমুজ্জামান

‘জনগণের অধিকার ও মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে কাজ করছে বিএনপি’

নিউইয়র্কের প্রবাসীদের এনআইডি কার্যক্রমের উদ্বোধন

কুয়েতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর

ফের জামায়াতের সমালোচনা করলেন হেফাজত আমির

জবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল নেতা হাসিবুলের প্রথম জানাজা সম্পন্ন

১০

গণতন্ত্রে উত্তরণে বিশ্বের সমর্থন পাওয়া গেছে : মির্জা ফখরুল

১১

আমরা পা ছেড়ে মাথার রগে ফোকাস করছি, মজার ছলে সর্ব মিত্র

১২

নাটকীয় ম্যাচ জিতে টাইগারদের সিরিজ জয়

১৩

জবি ছাত্রদল নেতার মৃত্যুতে হাসপাতালে ভিপি সাদিক কায়েম

১৪

হঠাৎ খিঁচুনিতে জবি ছাত্রদল নেতার মৃত্যু

১৫

আবারও ইনজুরিতে ইয়ামাল

১৬

ঈদগাহের নামকরণ নিয়ে দ্বন্দ্ব, দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ

১৭

খুলনায় ছেলের হাতে বাবা খুন

১৮

চাকসু নির্বাচন / ১৫ সেকেন্ডে দিতে হবে ১ ভোট

১৯

‘ভোটের অধিকার না থাকায় শ্রমজীবীরা বেশি অমর্যাদার শিকার’

২০
X