গাজীপুরে নদী খননের বালু চুরির অভিযোগ তৌহিদুল ইসলাম নামে এক কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তাসহ তার বাবা ও বড় ভাইয়ের নামে থানায় মামলা করা হয়েছে। গত ২৬ জুন সনমানিয়া ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ খবীর উদ্দিন মোল্যা বাদী হয়ে কাপাসিয়া থানায় মামলাটি করেন।
অভিযোগ উঠেছে, কাপাসিয়ার চরসনমানিয়া গ্রামের দক্ষিণপাড়া জামাল বেপারীর বাড়ির মসজিদ সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদ খননের এক লাখ ঘনফুট সরকারি বালু চুরি করে অন্য জায়গায় বিক্রি করেছেন অভিযুক্তরা। এমন অভিযোগে গত ২৬ জুন সনমানিয়া ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ খবীর উদ্দিন মোল্যা বাদী হয়ে কাপাসিয়া থানায় মামলাটি করেন।
আসামিরা হলেন- কাপাসিয়া সনমানিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মৃত আবদুর রহমানের ছেলে শাহাদাত হোসেন (৬৫), তার বড় ছেলে সনমানিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনকি সম্পাদক জাহিদ (৩৮) এবং ছোট ছেলে বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা কৃষি পরিষদের নেতা গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম (৩৫)। এ ছাড়া একই এলাকার মৃত মিয়ার উদ্দিনের ছেলে সোহরাব (৪৫) ও জাকিরকে (৪৮) আসামি করা হয়েছে।
গাজীপুর কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে গত সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রচারণায় চালিয়ে ছিলেন। যার কিছু ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া যায়।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, গত ১৯ জুন দুপুরে চরসনমানিয়া গ্রামের দক্ষিণপাড়া জামাল বেপারীর বাড়ির মসজিদ সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদ খননের সরকারি বালু কিছু দুষ্কৃতকারী চুরি করে অন্য জায়গায় বিক্রি করছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এমন খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্সের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালান করেন। এ সময় বাদী নিয়ে উপস্থিত ছিলাম।
ভ্রাম্যমাণ আদালত উপস্থিতি টের পেয়ে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। সেখানে বালু কাটার সরঞ্জামাদি পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনাস্থলে বালু কাটার যথেষ্ট আলামত বিদ্যমান রয়েছে।
জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদ খননের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। নদী খননের কিছু বালু নদীর তীরে না রেখে ঠিকাদারের যোগসাজশে তীর থেকে ৪০০ মিটার দূরে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে স্তূপ আকারে রাখা হয়। এ স্তূপ করা বালু সরকারি সম্পদ, যা জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে নিলাম হওয়ার কথা থাকলেও পরে তা আর হয়নি।
সাক্ষীরা জানান, ব্রহ্মপুত্র নদ খননের সরকারি বালু চুরি করে বিক্রি করা হয়েছে। এরই মধ্যে আসামিরা ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক ১ লাখ ঘনফুট বালু চুরি করে বিক্রি করেছে, যার বাজারমূল্য ২০ লাখ টাকা।
সরেজমিন চরসনমানিয়া গেলে স্থানীয়রা জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম ওরফে তৌহিদ সরকারি বালু চুরির অপরাধে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী ৩৭৯ ধারায় চুরির মামলা হয়েছে। তার বাবা শাহাদাত হোসেন মাস্টার সনমানিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী দুঃশাসনের নৌকা প্রতীকের অবৈধ চেয়ারম্যান ছিল।
এ বিষয়ে মামলায় অভিযুক্ত উপসহকারী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানান, বালু বিক্রির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। বালুগুলো যখন স্থানান্তর করা হয় তখন একটি চুক্তিপত্র করে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছিল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাজীপুরের উপপরিচালক (ডিডি) রফিকুল ইসলাম খান বলেন, তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কাপাসিয়া থানায় একটি ফৌজদারি মামলা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে থানা বা আদালত থেকে এখনো কোনো কিছুই জানানো হয়নি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।
কাপাসিয়া থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল জানান, সরকারি বালু চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ছাড়া আসামি গ্রেপ্তার এবং বালু উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে।
মন্তব্য করুন