হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বদলপুর ইউনিয়নের দীঘলবাগ গ্রামের বাসিন্দা প্রতাপ চন্দ্র দাস। প্রায় দেড় যুগের বেশি সময় ধরে বছরের সাত মাস সময় কাটান নানা জাতের মিঠাপানির শুঁটকি উৎপাদন করে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে মাছ সংগ্রহে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। দিন দিন এ সংকট বাড়ছে। কারণ, নদ-নদী, খাল-বিলে দেশি মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। আগের মতো মাছ সহজলভ্য নয়। ভবিষ্যতের দুর্দিন যেন তিনি দেখতে পাচ্ছেন। তাই শুঁটকির ব্যবসা ছেড়ে অন্য পেশায় যুক্ত হতে চান প্রতাপ চন্দ্র দাস।
শুধু প্রতাপ দাসই নন, এক সমযের ভাটির মৎস্য ভান্ডারখ্যাত আজমিরীগঞ্জ উপজেলার মিঠা পানির মাছ ও মাছের শুঁটকির কদর ছিল দেশ ও দেশের বাইরে। প্রতি বছরের আশ্বিন মাস থেকে শুরু করে চৈত্র মাস পর্যন্ত এই শুঁটকি উৎপাদন ও বিক্রি চলছে বহু যুগ ধরে। এক সময় উপজেলার সদর, বিরাট, কোদালিয়া, জলসুখা ইউনিয়নের নোয়াগড়, বদলপুর ইউনিয়নে অসংখ্য ডাঙ্গাই (চাতল) থাকলেও নানা সংকটে উপজেলার সদর, বদলপুর ও নোয়াগড়ের ছোট বড় ১১টি (জলসুখার নোয়াগড়ে ছোটবড় ৬টি বদলপুরের দীগলবাগে ৩টি এবং সদরে ২টি) চাতল ছাড়া ইতিমধ্যে সব কটি চাতল বন্ধ হয়ে যাওয়াতে পেশা বদল করছেন শুঁটকি উৎপাদনে জড়িত অনেকে।
ডাঙ্গাইয়ে আগে দেশি প্রজাতির পুঁটি, চিংড়ি, কাকিয়া, বোয়াল, শৌল, গজার,টাকি, বাইম, টেংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকি উৎপাদন হলেও বর্তমানে ছোট পুঁটি আর টেংরা ছাড়া আর তেমন কোনো মাছের শুঁটকি উৎপাদন হচ্ছে না।
উৎপাদনকারীরা বলছেন মাছের সংকট আর অতিরিক্ত দাম এবং স্থানীয় মৎস্য বিভাগের কোনো ধরনের সহযোগিতা না থাকায় লোকসানে মুখ থুবড়ে এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে শুঁটকি উৎপাদন।
প্রতাপ চন্দ্র দাস কালবেলাকে বলেন, ২০২১ সালে পাঁচটি ডাঙ্গাই ছিল।চলতি বছর তিনটি রয়েছে। আগামী বছর এভাবেই চলতে থাকলে আমরা অন্য পেশায় যুক্ত হব। এ ছাড়া আমাদের কোনো গতি নেই। স্থানীয় মৎস্য বিভাগের কেউ কখনও আমাদের কোনো খোঁজ নেয়নি।
উপজেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, ২০২১ সালে ৭ টি ডাঙ্গাইর হিসেব থাকলে চলতি বছরে কয়টি ডাঙ্গাই রয়েছে তার হিসেব নেই মৎস্য অফিসে।
জলসুখার নোয়াগড় গ্রামের শুঁটকি উৎপাদনকারী ফয়েজ মিয়া বলেন, বছর দশেক আগেও প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার কেজি মাছ আমরা কিনেছি শুঁটকির জন্য। কিন্তু বর্তমানে গড়ে শতেক কেজিও মেলাতে পারি না।
শাজাহান মিয়া বলেন, মাছের সংকটের পাশাপাশি স্থানীয় মৎস্য বিভাগের কোনো রকমের সহযোগিতা না থাকায় দিন দিন কমে যাচ্ছে শুঁটকি উৎপাদন। আমরা মৎস্য বিভাগ থেকে কোনো রকমের সহযোগিতা পাইনি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুর রহমান মজুমদার বলেন, বিভিন্ন কারণে হাওড় অঞ্চলের নদ-নদীগুলোতে দেশি প্রজাতির মাছের উৎপাদন কমেছে। বিশেষ করে জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারসহ মাছের অভয়ারণ্য না থাকায় মাছের উৎপাদন কমে আসছে । তবে আমরা মৎস্য বিভাগ থেকে জলাশয়, নদীতে পোনা মাছ অবমুক্তসহ নানা কর্মসূচি পালন করছি। শুঁটকি উৎপাদনকারী (চাতালের মালিকদের) আমরা লাখাই উপজেলায় প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচংয়ে বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনে লিফলেট বিতরণসহ কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। কোনো প্রকল্প না থাকায় আমরা শুঁটকি উৎপাদনকারীদের কোনো সহযোগিতা করতে পারছি না।
মন্তব্য করুন