মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এক উপসচিবের সাথে মতানৈক্য হওয়ায় খুলনা মেডিকেল কলেজ থেকে অধ্যাপক পদমর্যাদার দুই চিকিৎসককে হঠাৎ দিনাজপুরে বদলি করা হয়েছে। প্রতিবাদে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন এ দুই জ্যেষ্ঠ চিকিসক। আর এতে ফুসে উঠেছেন চিকিৎসকরা। প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে অন্যান্য চিকিৎসকের মাঝে। আদেশ পুনর্বিবেচনা করতে বিবৃতি দিয়েছে খুলনা বিএমএ। নির্বাচনের ঠিক আগে এমন পরিস্থিতিতে উত্তপ্ত অবস্থায় খুলনার চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা মেডিকেল কলেজ থেকে হঠাৎ ২৯ ডিসেম্বরে মানসিক বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. এসএম ফরিদুজ্জামানকে দিনাজপুরে আব্দুর রহীম মেডিকেল কলেজে বদলি করা হয়। এর ঠিক দুই দিন পরে নাক-কান-গলা বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. কামরুজ্জামানকেও আব্দুর রহীম মেডিকেল কলেজে বদলি করা হয়। বদলি আদেশে বলা হয়, তিন দিনের মধ্যে যোগদান না করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পদ অবমুক্ত এবং যোগদানে অবহেলা করলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয় বদলি আদেশে। এর প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার ওই দুই জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক চাকরি ছেড়ে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক বলেন, ২০২৩ সালে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার দিন আলাদা দুটি হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন ডা. কামরুজ্জামান এবং ডা. ফরিদুজ্জামান। তখন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে খুলনা মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেন একজন উপসচিব। সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে প্রশ্ন পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে মতানৈক্য সৃষ্টি হয় উপসচিব এবং ওই দুই চিকিৎসকের মধ্যে। পরীক্ষার পর মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ তদন্ত কমিটিতেও এই দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে এতদিন কোনো কিছু না হলেও আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত সভায় বিষয়টি আবার সামনে এলে হঠাৎ করে তাদের বদলি করা হলো।
জ্যেষ্ঠ এ দুই চিকিৎসকের বদলি আদেশ পুনর্বিবেচনা করতে লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন খুলনা বিএমএ সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মেহেদী নেওয়াজ। প্রচার সম্পাদক ডা. সাইফুল্লাহ মানসুরের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে অন্যান্যরা হলেন- সহসভাপতি ডা. মনজুর মোরশেদ, ডা. সামসুল আহসান মাসুম ও ডা. মোল্লা হারুন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কুতুব উদ্দিন মল্লিক, যুগ্ম সম্পাদক ডা. নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সুমন রায় প্রমুখ। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার সকাল থেকে খুলনার বেশিরভাগ চিকিৎসক তাদের ফেসবুক পেজে নিন্দার ঝড় তুলেছে। তারা দাবি করেছেন, তাদের এ দুই প্রতিথযশা শিক্ষকের সাথে অন্যায় এবং অবিচার করা হয়েছে। এতে নিন্দা জানান খুলনার মানুষের পাশাপাশি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগী ও উচ্চতর কোর্সের প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা।
খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, গত বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার দিন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির সাথে একটা সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু এখন ঠিক কী কারণে তাদের বদলি করা হয়েছে জানি না। তবে তারা দুজনই পদত্যাগপত্র দিয়েছেন।
খুলনা বিএমএ সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, চারদিকে যখন ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ও নির্বাচন কমিশন উত্তাপ ছড়াচ্ছে তখন এ উত্তাপে উত্তপ্ত সচিবালয় খুলনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের হাজারো সমস্যা উপেক্ষা করে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে স্বাস্থ্যসচিব দুই অধ্যাপককে বদলি ও তিন কর্মদিবসের মধ্যে অব্যাহতি দিয়ে ক্ষমতা প্রদর্শনের বাহাদুরির এক নজির সৃষ্টি করল। অথচ নির্বাচনকালে নির্বাচন কমিশন ব্যতিরেকে অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্মচারীদের বদলি করা নিষেধ ।
মন্তব্য করুন