তীব্র প্রতিবাদের মুখে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে অনুমতি ছাড়া সংবাদ সংগ্রহে নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত সংশোধন করেছে কর্তৃপক্ষ।
হঠাৎ গণমাধ্যম কর্মীদের সংবাদ সংগ্রহে বাধা দিয়ে এমন চিঠি প্রকাশ করায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে খুলনা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ। এ নির্দেশনার ফলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
রোববার (১২ অক্টোবর) খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. কাজী মো. আইনুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ সংশোধনী আদেশ প্রকাশ করা হয়।
অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫০০ শয্যায় দৈনিক ২ হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা নেওয়ায় নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেওয়া প্রয়োজন। এমতাবস্থায় পরবর্তীতে অফিস চলাকালে পরিচালক/কর্তব্যরত চিকিৎসক/দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে অবহিত করে, অফিস সময়ের পূর্বে ও পরে কর্তব্যরত চিকিৎসককে অবহিত করে এবং সাংবাদিকতার নিয়ম মেনে সাংবাদিক ও অন্যান্য মিডিয়া ব্যক্তিত্বের সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
অনুমতি ছাড়া সংবাদ সংগ্রহে নিষেধাজ্ঞা জারির ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে খুলনায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীরা। তারা বলছেন, যখন কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান সাংবাদিকদের বিনা অনুমতিতে সংবাদ সংগ্রহে বাধা দেয়, তখন তা শুধু মতপ্রকাশের স্বাধীনতাই নয়, বরং জনগণের জানার অধিকারকেও হুমকির মুখে ফেলে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রশাসনিক কর্তৃত্বের অপব্যবহার এবং দুর্নীতি বা অনিয়ম ঢাকতে একটি নিরাপদ আবরণ হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করে।
তারা আরও বলেন, যদিও পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের আদেশ সংশোধন করেছে, তবু এটি প্রাথমিকভাবে যে মানসিকতা থেকে এসেছে, সেটি উদ্বেগজনক। সরকারি প্রতিষ্ঠান জনস্বার্থে পরিচালিত হয় এবং সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য জানানো ও অনিয়মের বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো গণমাধ্যমের সাংবিধানিক অধিকার। গণমাধ্যমকর্মীদের কাজ করার পথে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা বা প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা কেবল জবাবদিহিতার পরিবেশ নষ্ট করে না, বরং সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবাসংক্রান্ত মৌলিক অধিকারকেও ক্ষুণ্ন করে।
আরও পড়ুন : রাবিতে ফারুক হত্যা মামলার সব আসামি বেকসুর খালাস
এদিকে, খুমেক হাসপাতালের গণমাধ্যম পরিপন্থি আদেশে নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে প্রতিবাদলিপি দিয়েছে খুলনা টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটি, পেশাজীবী সাংবাদিক সুরক্ষা মঞ্চ খুলনা ও খুলনা টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন।
খুলনা টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোস্তফা জামাল পপলু কালবেলাকে বলেন, খুমেক হাসপাতালের এ আদেশ গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি এক প্রকার হুমকি। এটি শুধু সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করবে না, বরং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের প্রবাহও বাধাগ্রস্ত হবে, যা একটি গণতান্ত্রিক সমাজে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
মন্তব্য করুন