দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুরের তিনটি আসন থেকে ১২টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ছাড়া জামানত হারিয়েছে ১১টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীসহ একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। জাতীয় সংসদ নির্বাচনী আইন অনুযায়ী জামানত রক্ষায় প্রার্থীদের প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ পেতে হয়। কিন্তু ওই প্রার্থীরা ওই ভোট না পাওয়ায় জামানত হারান।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুরের তিনটি আসনে মোট ভোটার ছিল ১০ লাখ ৬৪ হাজার ৩০ জন। তিনটি আসন মিলিয়ে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ৫ লাখ ৭৫ হাজার ২৮৩। এই হিসেবে জেলার ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশ ভোটার ভোট প্রয়োগ করেছেন। জেলার তিনটি আসনের ১৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ১১ টি রাজনৈতিক দলের ১৪ জনসহ ১৫ জন প্রার্থী আট ভাগের এক ভাগ ভোট পাননি।
শরীয়তপুর-১ (পালং-জাজিরা) আসনে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৩৩৯ ভোটারের মধ্যে ভোট প্রয়োগ করেছেন ২ লাখ ৯ হাজার ৫২৪ জন। আসনটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন অপু ১ লাখ ৯৯ হাজার ৬৩৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ হিসাব করলে জামানত রক্ষা করতে প্রত্যেক প্রার্থীর প্রয়োজন ছিল ২৬ হাজার ১৯০ ভোট। কিন্তু ইকবাল হোসেন অপুর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা পেয়েছেন ৩ হাজার ৪৮৮ ভোট, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান মাসুদ পেয়েছেন ১ হাজার ৯০৪ ভোট, তৃণমূল বিএনপির সোনালি আঁশ প্রতীকের আবুল বাসার মাদবর পেয়েছেন ১ হাজার ২৮৮ ভোট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের বটগাছ প্রতীকের মো. আব্দুস সামাদ ৯৭০ ভোট। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী শরীয়তপুর-১ আসনের বিজয়ী প্রার্থী ছাড়া সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনে ৩ লাখ ৮১ হাজার ২৮৭ ভোটারের মধ্যে ভোট প্রয়োগ করেছেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৬৮ জন ভোটার। আসনটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী একেএম এনামুল হক শামীম ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪০১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। প্রদত্ত ভোটের ৮ ভাগের এক ভাগ হিসাব করলে জামানত রক্ষা করতে প্রত্যেক প্রার্থীর প্রয়োজন ছিল ২৪ হাজার ৪৩৩ ভোট। আসনটির বিজয়ী প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেদ শওকত আলী পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৮২৭ ভোট।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের মো. ওয়াহিদুর রহমান পেয়েছেন ৩৬২ ভোট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের বটগাছ প্রতীকের মাহমুদুল হাসান পেয়েছেন ৭৫০ ভোট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের মশাল প্রতীকের ফিরোজ মিয়া পেয়েছেন ২২১ ভোট, মুক্তিজোটের ছড়ি প্রতীকের মো. মনির হোসেন পেয়েছেন ৬১ ভোট, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকের সৌমিত্র দত্ত পেয়েছেন ৬১ ভোট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আম প্রতীকের মো. আবুল হাসান পেয়েছেন ১৬৭ ভোট, বিকল্পধারা বাংলাদেশের কুলা প্রতীকের আমিনুল ইসলাম পেয়েছেন ৪৬ ভোট, গণফ্রন্টের মাছ প্রতীকের কাজী জাকির হোসেন পেয়েছেন ২১১ ভোট। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী শরীয়তপুর-২ আসনের বিজয়ী একেএম এনামুল হক শামীম ও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেদ শওকত আলী ছাড়া বাকিদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
শরীয়তপুর-৩ (ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা, গোসাইরহাট) আসনে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৪০৪ ভোটারের মধ্যে ভোট প্রয়োগ করেছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ২৯১ জন ভোটার। আসনটিতে নৌকা প্রতীকের নাহিম রাজ্জাক ১ লাখ ৫৭ হাজার ২৫৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। প্রদত্ত ভোটের ৮ ভাগের এক ভাগ হিসাব করলে জামানত রক্ষা করতে প্রত্যেক প্রার্থীর প্রয়োজন ছিল ২১ হাজার ২৮৬ ভোট। আসনটির বিজয়ী প্রার্থীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের আব্দুল হান্নান পেয়েছেন ৪ হাজার ৪১৯ ভোট, ইসলামী ঐক্যজোটের মিনার প্রতীকের মো. মাহদী হাসান পেয়েছেন ৪ হাজার ১৮৮ ভোট, তরিকত ফেডারেশনের ফুলের মালা প্রতীকের মো. সিরাজ চৌকিদার পেয়েছেন ১ হাজার ৫২০ ভোট। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী শরীয়তপুর-৩ আসনের বিজয়ী প্রার্থী ছাড়া বাকিদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান কালবেলাকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিধিমালা অনুযায়ী প্রত্যেক প্রার্থীকে জামানত রক্ষা করতে হলে ভোটারদের প্রদত্ত ভোটের ৮ ভাগের এক ভাগ সমপরিমাণ বা তার থেকে বেশি ভোট পেতে হবে। কোনো প্রার্থী যদি ৮ ভাগের চেয়ে কম ভোট পায় সেক্ষেত্রে তিনি জামানত হারাবেন। শরীয়তপুরের তিনটি আসনের ১৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ১১টি রাজনৈতিক দলের ১৪ জনসহ ১৫ জন প্রার্থী ৮ ভাগের এক ভাগ ভোট না পাওয়ায় তাদের জামানত হারিয়েছেন।
মন্তব্য করুন