বগুড়ায় বরাদ্দ পাওয়া সব কম্বল বিতরণ শেষ। তবু পথেঘাটে, গ্রাম-গঞ্জে শীতার্ত অসহায় মানুষের দেখা মিলছে। এদিকে সূর্যের দেখা না পাওয়া এবং হিমেল হাওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আরও ২০ হাজার কম্বল চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জরুরি বার্তা পাঠিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
এ অঞ্চলে হিমেল বাতাস আর কুয়াশায় তীব্র শীত জেঁকে বসেছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে ফুটপাত ও স্টেশনে থাকা ভ্রাম্যমাণ মানুষ। শীতের তীব্রতায় কাজে যেতে না পারায় এবং মানবিক সহযোগিতা না পেয়ে এক রকম মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। তাদের একজন রংপুরের পীরগাছা অন্নদানগোড়া গ্রামের ইব্রাহিম শেখ (৬৫) । স্ত্রী ও ৯ বছর বয়সী নাতিকে নিয়ে গত দেড় বছর ধরে বগুড়া রেল স্টেশন এলাকাতে ফুটপাতে থাকেন।
পলিথিন দিয়ে চারপাশ ঘিরে ছেঁড়া কম্বল গায়ে দিয়ে শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচার প্রচেষ্টায় আছেন ইব্রাহিম। দিনে শহরের মোড়ে মোড়ে ঝালমুড়ি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন এই বৃদ্ধ। গত এক সপ্তাহে শীতের দাপট বাড়ায় উপার্জনের উৎস বন্ধ হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
ইব্রাহিম শেখ বলেন, শীত বাড়ায় রাস্তাঘাটে মানুষজন কম। ঝালমুড়ি বিক্রি নেই বললেই চলে। দুদিন বিক্রির জন্য বের হয়েছিলাম তবে কাঁচামাল নষ্ট হওয়ায় আর সাহস পাচ্ছি না। হাতে যেই টাকা আছে তাতে কোনো রকম শুকনো মুড়ি আর ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে আছি। তবে এইভাবে চলতে থাকলে না খেয়েই থাকতে হবে। সরকারি বা বেসরকারিভাবে কেউই এখনও সহযোগিতা করেনি।
বগুড়া আবহাওয়া অফিস সূত্র বলছে, এ জেলায় সর্বনিম্ন ১২-১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। জানুয়ারি মাসে এ রকম শীতের তীব্রতা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আগামী আরও তিন থেকে চার দিন শীতের পাশাপাশি কুয়াশা আর বাতাসের দাপট থাকবে। এরপরে বৃষ্টির সম্ভবনা আছে। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
জানা যায়, বগুড়া জেলায় গত চার দিন ধরে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় বাড়িয়েছে শীতের তীব্রতা। হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন। জেলার কোথাও সূর্যের দেখা মিলছে না। ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে ঘর থেকে বের হলেও কাজ পাচ্ছেন না খেটে খাওয়া মানুষরা। শীত নিবারণে শহর এবং গ্রামের মানুষ খড়কুটো, পরিত্যক্ত কাগজ জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় শহরের ফুটপাত থেকে শুরু করে মার্কেটগুলোতে গরম কাপড় কিনতে ভিড় করছেন সব শ্রেণিপেশার মানুষ।
অপরদিকে ছিন্নমূল মানুষ বেশি বিপাকে পড়েছেন। কনকনে শীতে জবুথবু তারা। শহরের রেলস্টেশন এলাকায় ছিন্নমূল মানুষেরা খোলা আকাশের নিচে কোনো রকমে কাঁথা-কম্বল জড়িয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছেন।
গাবতলী সুখানপুকুরের বাসিন্দা ৮০ বছর বয়সী ভিক্ষুক সুধা রানী রেলস্টেশনের পাশে ফুটপাতে জীর্ণশীর্ণ কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে আছেন। তীব্র শীত ভিক্ষা করার জন্যও গত চার দিনে বের হতে পরেননি তিনি। রোববার দুপুরে একটি কলা আর শুকনো রুটি দিয়ে দুপুরের খাবার সেরে নিয়েছেন।
সুধা রানী বলেন, ‘কাপড়চোপড় নেই তাই শরীরে শীতের দাপট আর খাবার নেই তাই পেটে ক্ষুধার দাপট। ভিক্ষে করতে পারলে দুই বেলা ভালোমন্দ খেয়ে বেঁচে থাকতে পারি। শীতের জন্য এক পা ফেলার সাহস পাচ্ছি না। ফুটপাতে এত শীত এই বয়সে কীভাবে সহ্য হয় বলেন? আমাদের দিকে তাকানোর কেউ নেই।’
স্থানীয় আবহাওয়া অফিস থেকে বলা হচ্ছে, মাঘের শুরুতে কিংবা পরের সপ্তাহে শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া জানান, ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বগুড়া জেলায় এখন পর্যন্ত ৬২ হাজার কম্বল এবং জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নামে পাঠানো আড়াই হাজারসহ মোট সাড়ে ৬৪ হাজার কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে যার সবগুলোই উপজেলা ও পৌরসভায় পর্যায়ক্রমে বণ্টন ও বিতরণ করা হয়েছে। শীতে বর্তমানে শীতের প্রকোপ বাড়ায় রোববার (১৪ জানুয়ারি) জরুরি ভিত্তিতে আরও ২০ হাজার কম্বল চেয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে।
এদিকে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল বলেন, আমরা শিগগিরই দলীয় উদ্যোগে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াব। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। এ ব্যাপারে আলোচনা করে আমরা সাধ্যমতো সহযোগিতা করব।
মন্তব্য করুন