ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুতে কেনার নাম করে অর্ধশত কৃষকের গরু নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান। এ ঘটনায় টাকা পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগী কৃষকদের দাবি, সারাবছর কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে বাড়িতে গরু পালন করেন তারা। বছর শেষে সেটি বিক্রি করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন এখন তাদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। ধারদেনা করে সারাবছর বিচালি, খড়, ভুসি কিনে এখন মহাজনদের টাকাও দিতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে অনেকে সহায় সম্বল বিক্রি করে ধারদেনা পরিশোধ করছেন।
জানা গেছে, গত দুই মাস আগে থেকে উপজেলার হরিশপুর, গোবিন্দপুর, ভবিতপুর, কুলবাড়িয়াসহ বিভিন্ন গ্রামের অন্তত অর্ধশত কৃষকের গরু ও নগদ টাকা নেন উপজেলার ২নং জোড়াদহ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান। গত ১৫ দিন ধরে তিনি লাপাত্তা। ভুক্তভোগী ওইসব কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেনার নাম করে বাকিতে গরু নিয়ে যান তিনি। এক সপ্তাহ পর টাকা পরিশোধ করবেন বলে গরু নিয়ে গেলেও এখনও পরিশোধ করা হয়নি কৃষকদের টাকা। ফলে দিশাহারা হয়ে পাওনা টাকা আদায়ের আশায় ঘুরছেন ওইসব কৃষক।
হরিশপুর গ্রামের বাখের আলী মুন্সীর ছেলে কৃষক তারিফ মুন্সী দাবি করেন, গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আমার একটি ষাড় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাম ধরিয়ে বাকিতে নেন মিজান। এক সপ্তাহ পর টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন আর তার কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। তিনি বাড়িতেও নেই তার মোবাইল ফোন নাম্বারটিও বন্ধ। এখন কী করব বুঝতে পারছি না। সারাবছর ধারদেনা করে গরুর বিচালি, খড় ও ভুসি নিয়েছিলাম। এখন সেই মহাজনরাও টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে।
ওই গ্রামের খালপাড়া এলাকার কামিরুল ইসলাম নামে আরও এক কৃষকের দাবি, গত দুই মাস আগে মিজান আমার একজোড়া মহিষ ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা দাম ধরিয়ে বাকিতে নেন। তখন তিনি ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। এক সপ্তাহ পর বাকি ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু আজও সেই টাকা পরিশোধ করেননি। প্রথমে আজ দিই কাল দিই বলে ঘুরিয়েছেন। এখন আর তার দেখা নেই।
এলাকাবাসীদের ভাষ্য, মিজানুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে গরু কেনাবেচার ব্যবসা করেন। এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে বাকিতে গরু কিনে দেশের বড় বড় হাটগুলোতে বিক্রি করেন। কিন্তু গত দুইমাস ধরে বিভিন্ন এলাকার প্রায় অর্ধশত গরু নিয়ে তিনি উধাও হয়ে গেছেন। ওইসব গরুগুলোর বাজার মূল্য কোটি টাকার ওপরে বলেও তারা দাবি করেন।
মিজানুর রহমানের প্রতিবেশী বলেন, মিজান গত ১৫ দিন ধরে এলাকাছাড়া। তিনি কোথায় আছেন তা কেও জানেন না। তার পরিবারের লোকজনও তার খবর বলতে পারছেন না।
এ বিষয়ে খোঁজ নিতে মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে মিজানের বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নাম্বারটিও বন্ধ।
তার স্ত্রী সাবানা খাতুন বলেন, প্রায় ১৫ দিন আগে তিনি আমার সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে চলে গেছেন। কোথায় আছে সেটি আমি জানি না।
জোড়াদহ ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবু বলেন, শুনেছি মিজান অনেক মানুষের গরু-মহিষ কেনার নাম করে নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে আমার কাছে কয়েকজন ভুক্তভোগী পরিষদে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। মিজানের মোবাইল ফোনে কল দিয়েও সেটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। বাড়িতেও লোক পাঠিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।
হরিণাকুন্ডু থানার ওসি মো. জিয়াউর রহমান বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন