দুই হাতে ভার বহনকারী কাঠের তৈরি একটি যন্ত্র। এর এক প্রান্তে সামান্য ওজনের প্রায় ১০০টি হাওয়াই মিঠাই একটি সরু তার দিয়ে ভারবহনকারী কাঠের সঙ্গে আটকানো। অপর প্রান্তে কম ওজনের চুল সংগ্রহ করার একটি লাল বর্ণের থলে নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন আসাদুল ইসলাম। তবে চমৎকার বিষয় হচ্ছে বাড়িতে অপ্রয়োজনে গুঁজে রাখা একমুঠো চুলের বিনিময়ে ১ বা ২ প্যাকেট হাওয়াই মিঠাই দেন তিনি।
শিশুদের অতি প্রিয় এ মিঠাই এখন খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় নিয়মিত বিক্রি করছেন আসাদুল। যেখানেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার এলাকা, গ্রামে গ্রামে বা কোনো মেলা উৎসব, সভা হয় সেখানেই চমকপ্রদ হাওয়াই মিঠাই নিয়ে হাজির হন আসাদুল।
ওই হাওয়ায় মিঠাই বিক্রেতার বাড়ি কুমিল্লা শহরের পাশেই। আসাদুল তার সঙ্গে ৬ জন সহকর্মী হাওয়াই মিঠাই বানানো একটি মেশিন নিয়ে মাটিরাঙ্গায় থাকেন। গত বছর এসএসসি পাশ করে কোনো কাজকর্ম জোটাতে না পেরে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রতিদিন গড়ে এক হাজার টাকা বিক্রি করা যায়। যার ৮০ শতাংশই লাভ হয় বলে জানান আসাদুল। মাস শেষে ব্যক্তিগত প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়িতে টাকা পাঠায়। তার পাঠানো টাকা দিয়ে তার পরিবারের ব্যয় নির্বাহ হয়। বাড়িতে তার বৃদ্ধ মা-বাবাসহ চার ভাইবোন রয়েছেন।
হাওয়াই মিঠাই একপ্রকার মিষ্টিজাতীয় খাদ্য। এটি মুখে দিলে দ্রুত মিলিয়ে যায় বলে এর নাম হাওয়াই মিঠাই। দেখতে এক টুকরো গোলাপি রং, যা যেন মিশে আছে একটি পকেটের ভেতর। শিশুরা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে এটি। তবে অনেক সময় বড়দেরকেও শখ করে এটি খেতে দেখা যায়। চিনিকে তাপ দিয়ে গলিয়ে তা একটি হাতে ঘোরানো জাঁতায় পিষে অল্প সময়ে তৈরি করা হয় হাওয়াই মিঠাই। শহর-গ্রামে সবখানেই মেলা বসলেই দেখা মেলে হাওয়াই মিঠাইয়ের।
আসাদুল জানান, গ্রামে ঘুরে ঘুরে হাওয়াই মিঠা বিক্রি করা এক অন্যরকম অনুভূতি। আমার কাছে ভালোই লাগে। যা আয় হয় তা দিয়ে কোনোমতে নিজের ও সংসারের ব্যয় মিটে যায়।
মাটিরাঙ্গা ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ বলেন, ফেরিওয়ালা হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করতে আসলে আমি ছুটে যাই। একেকটা হাওয়াই মিঠাই ১০ টাকা করে। আমি একসঙ্গে একটার বেশি খাই না। তবে খেতে খুব মজা পাই।
নাতির জন্য হাওয়াই মিঠাই ক্রয় করতে আসা আব্দুর রহিম বলেন, হাওয়াই মিঠাইয়ে পেট না ভরলেও মুখের স্বাদ মিটে। দামে সস্তা হওয়ায় আমরা ছোটবেলায় প্রচুর খেতাম। এখন আর খাওয়া হয় না। তবে আমি খাইনা বলে যে ক্রয় করি না, তা কিন্তু নয়, আমার এই নাতির জন্য হাওয়াই মিঠাই কিনতে আসলাম।
মন্তব্য করুন