ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:৩৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

লাইসেন্স নবায়ন না থাকলে বন্ধ হবে হাসপাতাল, ফেনীতে তোড়জোড়

ফেনীতে হাসপাতাল লাইসেন্স নবায়নের পর পরিদর্শন করছেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টিম। ছবি : কালবেলা
ফেনীতে হাসপাতাল লাইসেন্স নবায়নের পর পরিদর্শন করছেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টিম। ছবি : কালবেলা

ফেনীতে বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান আছে ১১২টি। এর মধ্যে হাসপাতাল ৫০টি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৬২টি। এদিকে লাইসেন্স ছাড়াই কার্যক্রম চালাচ্ছে ১০টি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও নতুনভাবে লাইসেন্স পেতে অপেক্ষমাণ আছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

অন্যদিকে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন দায়িত্ব নেওয়ার পর যেসব হাসপাতালের লাইসেন্স নেই, অনুমতি নেই এবং যেগুলোর অবকাঠামো নেই সেসব হাসপাতালগুলো বন্ধের ঘোষণা দেন। যে কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে এবং সে যে কেউ হোক তার বিরুদ্ধে যথাযথ প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘোষণার পর ফেনীতে যেসব প্রতিষ্ঠানে অনুমোদন ও লাইসেন্স নবায়ন নেই তারা অনুমোদন করতে এবং নবায়ন করতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন।

ফেনীত গত ৬-৭ বছর ধরে লাইসেন্স নবায়ন নেই ২৪টি বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে ফেনী সদরের ১৫টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নেই লাইসেন্স নবায়ন। তার মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠানর নেই লাইসেন্স ও বন্ধ হয়েছে একটি। দাগনভূঞায় তিনটি, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ায় দুটি ও সোনাগাজীতে একটি প্রতিষ্ঠানের নেই লাইসেন্স নবায়ন।

ফেনী স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স নবায়নের জন্য পরিবেশগত ছাড়পত্র, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিস্তারিত বিবরণ, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র, কর সার্টিফিকেট এবং অন্যান্য নথি প্রয়োজন। এর আলোকে এসব হাসপাতালকে নিয়মিত নোটিশ দেওয়ার পাশাপাশি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু এসব কাগজপত্র দিতে পারে না বলেই লাইসেন্স নবায়ন করতে আসে না বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠান।

এ অবস্থায় আইন অনুযায়ী বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অবৈধ ঘোষণা করার কথা। অভিযোগ রয়েছে, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কার্যকর কোনো ভূমিকা না থাকায় অবৈধভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এসব সেন্টার।

এ ক্ষেত্রে জনবলের ঘাটতিও একটি বড় কারণ বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্রটি জানায়, ফেনীতে ১৬২টি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্সের বিষয়টি দেখার জন্য মাত্র তিনজন কর্মকর্তা রয়েছেন।

ফেনীতে এসব অনুমোদনবিহীন ও মানহীন প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ল্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এক শ্রেণির চিকিৎসককে কমিশনের ফাঁদে ফেলে সরকারি হাসপাতালের রোগীদের এসব ক্লিনিক-ল্যাবে রোগ নির্ণয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে বাধ্য করা হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এসব অবৈধ ক্লিনিক-ল্যাবের তালিকা করা হচ্ছে। শিগগিরই এগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয়রা বলছেন, স্বাস্থ্য বিভাগের নাকের ডগায় গড়ে ওঠা এসব ক্লিনিক ও ল্যাবে ভুল চিকিৎসাসহ রোগীরা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হলেও কোনও প্রতিকার মিলছে না। এসব অবৈধ চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রে ভুল চিকিৎসার ফলে ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনাও। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাঙের ছাতার মতো মানহীন ক্লিনিক ও প্রাইভেট হাসপাতাল গড়ে উঠলেও স্বাস্থ্য বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তারা নীরব থাকেন।

শহরের ট্রাংক রোড ও শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকাতে দেখা গেছে, বাণিজ্যিক মার্কেটের নিচতলায় খাবারের রেস্তোরাঁর পাশে প্যাথলজিক্যাল ল্যাব। দোতলায় হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিক। তার ওপরে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান। আবাসিক বাসাবাড়ি কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেও রয়েছে এমন হাসপাতাল ও ল্যাব। অনুমোদন রয়েছে এমন সব হাসপাতাল ক্লিনিক ও ল্যাবগুলোতেও রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা। হাতেগোনা ১০ থেকে ১৫টি ছাড়া অনুমোদিত সবকটি হাসপাতাল ও ল্যাব চলছে সব নিয়ম ও শর্ত অমান্য করে।

ফেনী জেলা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও নার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হারুন-অর রশিদ বলেন, ‘আমরা অনুমোদনহীন হাসপাতাল ক্লিনিক ল্যাব বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে’। তবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স থাকলেও নেই নবায়ন।

সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. এমরান ভূঞা জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত অনলাইন পরিদর্শন কমিটি লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য বারবার পরিদর্শন করে মৌখিক ও চিঠি দিয়ে অবগত করা হয়। তবে সম্প্রতি লাইসেন্স নবায়ন করতে অনেকের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে।

ফেনী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ রানা বলেন, ফেনীতে যারা ইতোমধ্যে লাইসেন্স পেতে ও নবায়নের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন, তাদের প্রতিষ্ঠান পর্যায়ক্রমে পরিদর্শন করা হচ্ছে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. শিহাব উদ্দিন জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জেলার অনুমোদনহীন প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ল্যাবের তালিকা করা আছে। গত ২-৩ দিন আগে ফুলগাজী স্কয়ার হাসপাতালের লাইসেন্স না থাকায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে তালিকা ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

২০১৮ সালের নির্বাচনের বদনাম ঘোচাতে চায় পুলিশ : ডিএমপি কমিশনার

ওয়েস্ট হ্যামের বিরুদ্ধে চেলসির বড় জয়

নরসিংদী জেলা সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা’র নতুন কমিটিকে সংবর্ধনা

কেইনের হ্যাটট্রিকে লেইপজিগকে উড়িয়ে দিল বায়ার্ন

নিখোঁজের একদিন পর যুবকের মরদেহ মিলল পুকুরে

বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ড্রয়ের তারিখ ঘোষণা করলেন ট্রাম্প

এশিয়া কাপ দলে জায়গা পেয়ে সোহানের কৃতজ্ঞতার বার্তা

ঘুষ কেলেঙ্কারিতে পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

প্রবীণদের বিশেষ যত্ন নিয়ে বার্ধক্যের প্রস্তুতি নিন: স্বাস্থ্য সচিব

বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত: রাষ্ট্রদূত আনসারী

১০

লা লিগার কাছে যে অনুরোধ করতে চায় বার্সা

১১

‘নির্বাচনে আমলাদেরকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে’

১২

সাবেক এডিসি শচীন মৌলিক কারাগারে

১৩

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন শনিবার, যেসব বিষয়ে আলোচনা

১৪

সিদ্ধিরগঞ্জে হেফাজতে ইসলামের শানে রিসালাত সম্মেলন

১৫

শেষ দিনেও ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে মতামত দেয়নি ৭ রাজনৈতিক দল

১৬

ইউরোপের লিগগুলোতে দল কমানোর প্রস্তাব ব্রাজিল কোচ আনচেলত্তির

১৭

নেপালে মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের প্রচার, তাসনিম জারার ব্যাখ্যা

১৮

মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে মৃত্যুর মিছিল, তিন বছরে প্রাণ হারান ১৮৩ জন

১৯

স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি 

২০
X