বগুড়ার গাবতলীতে দাদন ব্যবসায়ী ও তার সহযোগীরা এক গৃহবধূকে ধরে নিয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত বাঁশঝাড়ে বেঁধে রেখে টাকা আদায় করেছে। শনিবার (৮ জুলাই) বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের পার রানীরপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় লোকলজ্জায় ও ক্ষোভে আত্মহত্যা করেছেন ওই গৃহবধূর স্বামী আবদুল মালেক (৪০)। তিনি পেশায় দিনমজুর। ঘটনা জানাজানি হলে এলাকাবাসী বিক্ষোভ শুরু করে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে ওই দাদন ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।
মৃত আবদুল মালেক ওই গ্রামের মৃত হবিবর রহমানের ছেলে। তিনি দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। রোববার (৯ জুলাই) সকালে মালেকের স্ত্রী রিমা বেগম বাদী হয়ে দাদন ব্যবসায়ী গোলজার রহমানসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
এলাকাবাসী ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে আবদুল মালেকের স্ত্রী রিমা বেগম একই গ্রামের দাদন ব্যবসাীয় গোলজার রহমানের কাছ থেকে ৩৬ হাজার টাকা ধার নেয়। টাকা নেওয়ার সময় দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার, চেকের দুটি ফাঁকা পাতা ও ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি বন্ধক রাখেন। চার মাসের ব্যবধানে ধার নেওয়া ৩৬ হাজার টাকা সুদে আসলে লক্ষাধিক হয়েছে দাবি করে তা পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছিল দাদন ব্যবসায়ী গোলজার।
এলাকাবাসী জানান, দাদন ব্যবসায়ীর চাপের কারণে টাকার ব্যবস্থা করতে রিমা গত শনিবার গাবতলী সদর ইউনিয়নের উঞ্চুরখী গ্রামে বাবার বাড়ির উদ্দেশে বের হন। পথিমধ্যে দাদন ব্যবসায়ী গোলজার ও তার কয়েক সহযোগী রাস্তায় তাকে একা পেয়ে ধর ধর বলে ধাওয়া করে। ভয়ে তিনি দৌড়ে একটি বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেই বাড়ির ভেতরে ঢুকে দাদন ব্যবসায়ী ও তার সহযোগীরা তাকে (রিমাকে) ধরে নিয়ে গিয়ে একটি বাঁশঝাড়ে বেঁধে রাখে। এরপর দাদন ব্যবসায়ী রিমার বাড়িতে গিয়ে মালেককে টাকা দিয়ে স্ত্রীকে ছাড়িয়ে নিতে বলে। না হলে তার স্ত্রীকে দিয়ে অনৈতিক কাজ করিয়ে টাকা আদায় করবে বলে হুমকি দেয়। রিমাকে বেঁধে রাখার বিষয়টি তার বাবার বাড়ির লোকজন জানতে পেরে রাত ২টার দিকে ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে মেয়েকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
এদিকে দাদন ব্যবসায়ীরা স্ত্রীকে বেঁধে রেখে অপমান করায় লজ্জা ও ক্ষোভে ওই রাতেই মালেক গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। রোববার সকালে এই সংবাদ গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। দাদন ব্যবসায়ী গোলজারসহ তার সহযোগীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে গ্রামবাসী। পরে পুলিশ গিয়ে মালেকের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। একইসঙ্গে অভিযান চালিয়ে দাদন ব্যবসায়ী গোলজারকে গ্রেপ্তার করে।
গাবতলী মডেল থানার ওসি সনাতন চন্দ্র সরকার কালবেলাকে জানান, আবদুল মালেকের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। ওই ঘটনায় রিমা বেগম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় গোলজার রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য করুন