বিদ্যালয়ে ইট-পাথরের শহীদ মিনার নেই তো কী হয়েছে। নিজ হাতে গড়া কলাগাছের প্রতীকী শহীদ মিনারেই শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছে শরীয়তপুর সদর পৌরসভার দক্ষিণ বালুচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। অর্ধশত বছর ধরে কলাগাছের প্রতীক শহীদ মিনারই ভরসা ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের।
বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে নিজেদের তৈরি শহীদ মিনারের বেদীতে তারা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এর আগে মঙ্গলবার দিনভর ওই বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা তৈরি করে এ শহীদ মিনার।
দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জানায়, বিদ্যালয়ে কোনো শহীদ মিনার নেই বলে তারা জাতীয় দিবসগুলোতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারে না। এজন্য নিজেরাই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কলাগাছে কাগজ মুড়িয়ে প্রতীকী শহীদ মিনার তৈরি করেছে।
জানা যায়, ৫৯নং দক্ষিণ বালুচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৭৩ সালে স্থাপিত হয়। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো হয়নি কোনো শহীদ মিনার।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরে ৬টি উপজেলায় ৬৯৮ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ১৫৪টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। ৫৪৪টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নাই। এর মধ্যে সদরে ১১৬টি, ডামুড্যায় ৬০টি, গোসাইরহাট ৬টি, জাজিরা ১১৭টি, নড়িয়ায় ১১৪টি ও ভেদরগঞ্জ উপজেলায় ১৩১টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নাই।
ওই স্কুলের শিক্ষার্থী জুনায়েদ ইসলাম, অর্না বর্ধন ও সুমিহরা জানান, আমাদের স্কুলে শহীদ মিনার না থাকার কারণে প্রতিবছর ভাষা শহীদ দিবসে কলাগাছ কেটে খুব কষ্ট করে শহীদ মিনার বানিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাই। আমরা এখন যেই কষ্ট করে শহীদ মিনার বানাই আগামী বছর যেন এমন কষ্ট না করতে হয়, তাই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করি একটা স্থায়ী শহীদ মিনার এই স্কুলে নির্মাণ করা হোক।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক রোকেয়া বেগম বলেন, বাংলা ভাষা হলো আমার মায়ের ভাষা। আমাদের মা যেমন আমাদের কাছে সম্মানের তেমনি ভাষাটাও আমাদের কাছে মায়ের মতো সম্মানের। তাই প্রতি বছর আমাদের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা আনন্দ উদ্দীপনার মাধ্যমে কলাগাছ কেটে শহীদ মিনার তৈরি করে। ফুল সংগ্রহ করে মালা গেঁথে ভাষা শহীদদের সম্মানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেয়। কিন্তু কলাগাছ কেটে শহীদ মিনার বানাতে ছোট ছোট বাচ্চাদের খুব কষ্ট হয়ে যায়। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে বলতে চাই, আগামীতে আমাদের এখানে যেন একটি স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অমিত ঘটক চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, এটা অতি প্রাচীন বিদ্যালয়, আমিও এই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। এ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকায় কোমলমতি শিশুরা দাপ্তরিকে সাথে নিয়ে কলাগাছ কেটে শহীদ মিনার তৈরি করে সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। আমি সভাপতি হয়ে এ বিদ্যালয়ের অনেক অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করেছি। আগামীতে সরকারি কোনো বরাদ্দ পেলে শহীদ মিনার তৈরি করব।
এবিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. নূরুল হাসান বলেন, আমাদের প্রস্তাবনা আছে অধিদপ্তরে যদি বরাদ্দ পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে সম্ভাবনা আছে করে ফেলার। আর যদি কোনো স্থানীয় দাতা সদস্য পাওয়া যায় তাদের সহযোগিতায় শহীদ মিনার করার নির্দেশনা রয়েছে। কেউ চাইলে শহীদ মিনার করেও দিতে পারে।
মন্তব্য করুন