মোহাম্মদ ইব্রাহিম। বয়স ৪৩ বছর। পেশায় দিনমজুর। আছে একটি রিকশার গ্যারেজ। সংসার চলে রিকশার গ্যারেজের আয় দিয়ে। সেইসঙ্গে আছে তার একটি মানবিক গুণ। আর এই মানবিক গুণের জন্য সবাই তাকে ডাকে ‘মানবিক ইব্রাহিম’ নামে। তার সেই গুণটি হলো, এলাকায় মৃত মানুষের জন্য কবর খোঁড়া।
জানা যায়, মো. ইব্রাহিম চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পূর্ব সৈয়দপুর ইউনিয়নের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে। স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যসংখ্যা চারজন। এলাকায় যে কোনো সময় মৃত্যুর খবর শুনলেই তিনি চলে যান মৃতের বাড়িতে। নেন মরদেহের মাপ। এরপর চলে যান কবর খোঁড়ার সরঞ্জাম নিয়ে কবরস্থানে। তবে কবর খোঁড়ার জন্য নেন না কোনো পারিশ্রমিক। ৪৩ বছর বয়সে খুঁড়েছেন ২ হাজারেরও অধিক কবর। সংসারের পাশাপাশি এই মানবিক কাজ যেন তার নেশা।
এ বিষয়ে ইব্রাহিম কালবেলাকে বলেন, আমার বাবা কবর খোঁড়ার কাজ করতেন। তার মৃত্যুর পর আমি কবর খোঁড়ার কাজ শুরু করি। যখন আমার বয়স ১৫ বছর, তখন থেকে আমি কবর খোঁড়ার কাজ করি। এ পর্যন্ত ২ হাজারের অধিক কবর খুঁড়েছি। বাবার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য আমি এই কাজ করি। এমনও আছে, এক দিনে দুটি কবর খুঁড়েছি। অনেক সময় কবর তৈরি করতে গিয়ে পুরোনো কঙ্কাল পেলে ওই কবরেই জায়গা করে গুঁজে রাখি। তিনি আরও জানান, বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময় করোনা আক্রান্ত পরিবারের লোকজন বা আত্মীয়স্বজন মারা গেলে পাশে আসেনি কেউ। ওই সময় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গোসল দাফন-কাফন, কবর খোঁড়াসহ সব কিছু একাই করে মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করেছি। আমার টাকা-পয়সার কোনো লোভ নেই। কবর খুঁড়ে কারও কাছ থেকে হাদিয়া বা টাকা-পয়সা নিই না। কবর খোঁড়া নেশা হয়ে গেছে। আমি গরিব মানুষ। শুধু ঘরের ভিটা আছে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষকে এই সেবা দিয়ে যাব। আল্লাহ যদি দেয় আখিরাতে কিছু পাব। হাজি নুর আলম বলেন, এলাকার মধ্যে যে কেউ মারা গেছেন খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে কবর খুঁড়তে চলে আসেন ইব্রাহিম। বিনিময়ে কোনো টাকা নেয় না। এরকম মানুষ সমাজে খুব কম পাওয়া যায়।
সৈয়দপুর ইউপি চেয়ারম্যান এইচ এম তাজুল ইসলাম নিজামী জানান, মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে ৪০ বছর আগে থেকে চিনি। তখন থেকে আমি দেখেছি, মানুষ মারা গেলে কাজ রেখে কবর তৈরির জন্য চলে যান। বিনিময়ে তিনি পারিশ্রমিক নেন না।
মন্তব্য করুন