সাতক্ষীরায় বৃষ্টি আর নদী থেকে উত্তোলন করা মৎস্য ঘেরের লোনা পানিতে আশাশুনির খাজরা ও বড়দল ইউনিয়নের ৫ গ্রামের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে শতাধিক পরিবার।
এদিকে জলাবদ্ধতার বিষাক্ত সাপ-পোকার আক্রমণের আতঙ্ক নিয়ে কাটাচ্ছে ওই অঞ্চলের মানুষ। এ ছাড়া ১০৭ নম্বর গজুয়াকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় ও স্কুল চত্বরে পানি জমে থাকায় শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। বাড়ির রান্নাঘর থেকে গোয়ালঘর সবখানে পানি উঠে গেছে। এতে গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছে স্থানীয়রা।
গজুয়াকাটি গ্রামের সত্য চন্দ্র বৈদ্য ও চন্দন সরকার জানান, ২৮ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত টানা বর্ষণে পার্শ্ববর্তী লোনা জলের চিংড়িঘের প্লাবিত হয়ে লোনা পানিতে খাজরা ইউনিয়নের গজুয়াকাটি, ফটিকখালী, রাউতাড়া এবং বড়দল ইউনিয়নের পাঁচপোতা ও বাইনতলা গ্রামের আংশিক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ১০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও পানি অপসারণ না হওয়ায় চরম মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। বিষাক্ত সাপ, পোকার ভয়ে রাতে বাড়ির বাইরে বের হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের এলাকার অধিকাংশ ঘর মাটির তৈরি। দীর্ঘদিন পানি জমে থাকলে সব ঘর ভেঙে পড়বে। রান্না খাওয়ার যেমন সমস্যা হচ্ছে তেমনি চারদিকে লোনা জলে ডুবে থাকায় গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে আছি। গোখাদ্য ও মিষ্টি জলের অভাব দেখা দিয়েছে।
সহকারী অধ্যাপক শিবপ্রসাদ মণ্ডল জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমাদের কালকির স্লুইসগেট অবমুক্ত করা প্রয়োজন। কিন্তু স্লুইসগেটের সামনে পলি পড়ে থাকায় পানি অপসারণ করা যাচ্ছে না। বিকল্প পথ হিসেবে যদি বামনডাঙ্গা ও তুয়ারডাঙ্গা স্লুইসগেট অবমুক্ত করা যায় তবে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এলাকাটি এক ফসলি আমন ধানের এলাকা। অন্যান্য এলাকায় চাষাবাদ শুরু হলেও জলাবদ্ধতার কারণে এই এলাকাগুলোর ১০ হাজার বিঘায় আমন ধানের চাষাবাদে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ ডালিম কালকি স্লুইসগেটের পলিমাটি অপসারণ করার চেষ্টা করছেন গত ৩ দিন ধরে। এরমধ্যে নতুন করে জোয়ার হবে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ায় পানিবন্দি মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিকল্প পথে পানি নিষ্কাশিত না হলে ভোগান্তি চরমে পৌঁছে যাবে। এমনিতেই খাল, বিল ও পুকুরে কানায় কানায় পানি জমে আছে। এখনো উঁচু এলাকায় কয়েকটি পুকুরে মিষ্টি পানি আছে। নতুন করে জোয়ার হলে ঘরবাড়ি আর থাকবে না।
ইউপি চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ ডালিম বলেন, সকাল থেকে একশ্রেণির মানুষ কালকির স্লুইসগেট দিয়ে জোয়ার তোলা হবে এমন গুজব ছড়িয়ে এলাকায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে গিয়ে আমি জনসাধারণের ভোগান্তি লাঘবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। পলি জমে যাওয়ায় গেটের পাট তোলা যাচ্ছে না।
এদিকে কালকির স্লুইস গেটের পলি অপসারণ, অবৈধভাবে লোনা পানি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, খালে অবৈধ নেটাপাটা অপসারণ করে এলাকার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করে আমন ধান চাষিদের পাশে দাঁড়াতে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রনি আলম নূর বলেন, পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সরেজমিনে গিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন