প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে পাঁচ নারীর হাতে ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা-২০২৩’ তুলে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের হাতে এ সম্মাননা তুলে দেন।
শুক্রবার (৮ মার্চ) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ পুরস্কার তুলে দেন।
সেই জাতীয় শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা পেলেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের কানিহাটি চা বাগানের চা-শ্রমিক মা কমলি রবিদাস।
জাতীয় পর্যায়ে ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ নির্বাচিত হয়ে ‘সফল জননী’ ক্যাটাগরিতে এই সম্মাননা পেলেন তিনি। সম্মাননা পাওয়া জয়িতাদের সবাইকে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট, উত্তরীয় ও সনদ দেওয়া হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা দৈনিক কালবেলাকে বলেন, এর আগে তিনি উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সম্মাননা পেয়েছেন। এবার জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কার পেয়েছেন কমলি রবিদাস।’
সম্মাননা পেয়ে ভীষণ আনন্দিত কমলি রবিদাস। তিনি বলেন, জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। হামার খুব আনন্দ লাগছে। প্রধানমন্ত্রীরে চোখে দেখেছি।
মায়ের এমন অর্জনে আনন্দিত ছেলে সন্তোষ রবিদাস। তিনি বলেন, ‘মা সারাজীবন কষ্ট করেছেন। এখন প্রধানমন্ত্রী তাকে পুরস্কৃত করেছেন। আমার জন্য এর চেয়ে খুশির খবর আর কী হতে পারে?’
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের কানিহাটি চা-বাগানের এক শ্রমিক পরিবারে জন্ম সন্তোষের। জন্মের পরপরই বাবাকে হারিয়েছিলেন। তার মা কমলি রবিদাস তখন মজুরি পেতেন দৈনিক ১৮ টাকা। চরম অভাবের মধ্যে খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করেছেন সন্তোষ। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ছেলের ভর্তির টাকা, ইউনিফর্ম আর বই-খাতা কিনে দিয়েছিলেন মা। ঋণের কিস্তি শোধের জন্য চা-বাগানের কাজ ছাড়াও অনেক দূরে গিয়ে বালু শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। অভাবের সংসারে নিজে খেয়ে না খেয়ে ছেলেকে খাইয়েছেন। এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে পড়ার সুযোগ পান সন্তোষ।
মা-ছেলের এই সংগ্রামের কাহিনি নিয়ে ২০২২ সালে ‘মায়ের নামটা কেটে দিল’ এমন শিরোনামে একটি ঘটনার বিস্তারিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ফেসবুক আইডিতে লিখেন তিনি। সেই সূত্র ধরে অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান সন্তোষকে চাকরির প্রস্তাব দিয়েছিল। পরে তিনি যোগ দেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে জুনিয়র অফিসার পদে। এখন তিনি ব্যাংকটির সিলেট লালদীঘির পাড় শাখায় রিলেশনশিপ অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।
মন্তব্য করুন